কোভিড-১৯ এর ভয় আর নয় আর নয়

আলিয়া ফেরদৌস আজাদ

কোভিড-১৯ এর ভয় আর নয় আর নয়

Other

মাত্র ১২৫ ন্যানো মিটার এর অদৃশ্য শত্রু। পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় কুক্ষিগত করে রেখেছে। আজ আমাদের জীবনটাও তার ইশারাতেই চলছে। মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন এই নতুন শব্দ গুলো যেনো আমাদেরকে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ, বাচ্চারা বাসায় থেকে থেকে সংকীর্ণমনা হয়ে যাচ্ছে, তাদের গেজেট আসক্তি বাড়ছে, আচরণগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে, পড়ালেখা পেছাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ধ্বস আর তার সাথে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, সব মিলিয়ে আমাদের জীবনটা যেনো তার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আমাদের কাছের মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে ,নিজেদের জীবন নিয়ে ভয়ে আছি। এই পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক।
‘ভয়’ মানুষের স্বাভাবিক আবেগের প্রকাশ। কিন্তু, এটাই যখন আতঙ্কে রূপ নেয়, আমরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হই যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে থাকে।  

কোভিড এর সাথে যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। তাই মানসিক ভাবে আরো দৃঢ় থাকাটা জরুরী। কিন্তু কিভাবে? আমাদের কারোরই দুশ্চিন্তা করতে অথবা ভয় পেতে ভালো লাগে না। এটা অজান্তেই মনে বাসা বাঁধে। এই দুশ্চিন্তা, ভয় কমানোর বা মানসিক ভাবে ভালো থাকার বেশ কিছু উপায় আছে যা সুস্থ থাকতে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সাহায্য করবে।  

এখন আমরা মনের যত্নের উপাত্তগুলো জেনে নেই-

গুণগত সময় ব্যয় করা: পরিবারের সদস্যদের একে অপরের সাথে গুণগত সময় ব্যয় করতে হবে। যেমন- একসাথে গান শোনা বা কোন মুভি দেখা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই একে অপরের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে। রুটিন করে একেকদিন একেক জনের পছন্দের বিষয় নিয়ে একসাথে উপভোগ করা যেতে পারে। এতে সবারই মন ভালো থাকবে।

হালকা ব্যয়াম অনুশীলন: ফ্ল্যাট বাসা গুলো আয়তনে অনেক ছোট হয়, ব্যয়ামের জন্য জায়গা পাওয়া যায় না। তাই যাদের বাসায় ব্যয়ামের যন্ত্র নেই তারা কিছু আসবাব একপাশে সরিয়ে ব্যয়ামের জন্য জায়গা বের করে নিতে পারেন। নিয়মিত ব্যয়ামে আমাদের মনের অস্থিরতা কমবে এবং সন্তানদের মাঝে সুঅভ্যাস গড়ে উঠবে।

ধর্ম চর্চা: ধর্ম চর্চা মানুষের মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। তাই পরিবারের সকলে অথবা আপনি একাই ধর্ম চর্চা শুরু করতে পারেন। আপনাকে দেখে পরিবারের ছোট সদস্যরা আগ্রহী হবে।  

সামাজিক মাধ্যম: এই সময় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে আমরা অনেক তথ্য পাচ্ছি যার সব সঠিক নয়। কিন্তু বিভিন্ন গুজব অথবা ভুল তথ্য আমাদের মনের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া এধরণের নেতিবাচক খবর অনেক সময় নিয়ে দেখলে বা শুনলে মনে বিষন্নতা জন্ম নেয়। তাই খবর দেখার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।

সামাজিক যোগাযোগ: সময়ের অভাবে অনেকদিন হয়ত বন্ধু, আত্নীয়দের খোঁজ নেয়া হয়নি। এই সময় এই কাজটি করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে আলোচনার বিষয় সবসময় যেন নেতিবাচক না হয়।

প্রাণ ভরে হাসুন: হাসি একটি বিনে পয়সার ঔষধ যা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না, কিন্তু এটি আমাদের মনকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাই পরিবারের সবাই মিলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় হাসির ব্যয়ামের জন্য বেছে নিতে পারেন।   

নিশ্বাসের ব্যয়াম: নাক দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে তা মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন। এভাবে কয়েকবার নিশ্বাসের ব্যয়াম করুন। এতে মনের অস্থিরতা কমবে।

ভাষার ব্যবহার: আমাদের সবারই ভাষা ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিত। এই সময়টা আমরা একে অপরের সমালোচনা না করে বরং তার ভাল কাজের জন্য আগ্রহ দিতে পারি। কিংবা উপদেশের পরিবর্তে ভাল কাজের দৃষ্টান্তে আপনি নিজেই অনুকরণীয় হতে পারেন।  

ইতিবাচক চিন্তা: বিশ্বব্যপী যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে মনে ইতিবাচক চিন্তা আনা কঠিন। কিন্তু একটিবার যদি ভেবে দেখি আমাদের অহেতুক দুশ্চিন্তা কোন সমাধান আনবেনা বরং এটা ছোঁয়াচে রোগের মত আরো মানুষের ক্ষতি করবে। তাই আমরা যদি মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই তা আমাদের মানসিক শান্তির সহায়ক হবে। ইতিবাচক কাজ ইতিবাচক চিন্তা বাড়ায়।

ঘুম ও খাদ্যভ্যাস: পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে পরিবারের সকলকে আগ্রহী করতে হবে।

পরিশেষে মনে রাখুন, আপনি একা নন। সারা বিশ্বের কোটি মানুষ কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে। একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশাই আমাদের বেঁচে থাকার চাবিকাঠি।

লেখক, আলিয়া ফেরদৌস আজাদ
সিনিয়র কাউন্সিলর, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

news24bd.tv/আলী