মনে হচ্ছে শব্দগুলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়বে

জিয়াউল হক

মনে হচ্ছে শব্দগুলো আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়বে

Other

বিদেশি ভাষার বেশ কিছু শব্দ হুড়মুড় করে আমাদের বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়েছে। যেমন লকডাউন, পাপারাজ্জি, লাঠিচার্জ, লকডাউন প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি।  

আর বাংলা ভাষার দুটি শব্দ যেগুলু আগে আলাদা আলাদা ছিল সেগুলো ইদানিং একসাথে হয়ে বেশ জোরালো হয়েছে। শব্দ দুটি হল “সীমিত” এবং “পরিসর”।

 

দুটি একসাথে হয়ে “সীমিত পরিসর”। যেখানে সেখানে এখন এই শব্দ দুটি ব্যবহার হচ্ছে। অফিস সীমিত পরিসরে খোলা; মার্কেট সীমিত পরিসরে খোলা ইত্যাদি।  

এই শব্দগুলোকে ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবহার করা যায় কিনা চিন্তার বিষয়।

যেমন বউ এর সাথে মার্কেটে গেলে সীমিত পরিসরে কেনাকাটা; খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে সীমিত পরিসর; বিয়ের ক্ষেত্রে সীমিত পরিসর; তবে বিয়ের পরে কি হবে জানিনা কারণ সীমিত পরিসরের বিপরীতে কোন শব্দ এখনো গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি।  

তবে বিয়ের পরে সীমিত পরিসর ব্যবহার করলে পরিণতি খারাপ হতে পারে। আবার লকডাউন শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন মন খারাপ এর উপর লকডাউন; শরীর খরাপের উপর লকডাউন; বাথরুমের উপর লকডাউন; না, বাথরুমের উপর লকডাউন দিলে সমস্যা আছে; তাহলে পুরো শরীর শাটডাউন হয়ে যেতে পারে।  

যাই হোক, যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে এ শব্দগুলো আস্তে আস্তে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়বে। একটা কৌতুক বলি। এক ভদ্রলোক উচ্চপদস্থ আমলা ছিলেন। তিনি অবসর নিয়েছেন। অবসর নেয়ার পরও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আমলাতান্ত্রিক ব্যবহার বিধি ভুলতে পারেননি। যেমন তার স্ত্রী কোন কিছু লাগবে বললে, তাঁকে লিখিত নোট দিতে হয় এবং সে নোট তিনি গ্রহণ করেন বা বাতিল করেন।  

একবার তার বউ তাকে লিখলেন, “আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ; আমাকে বাবার বাড়ি যেতে হবে। “ ভদ্রলোক নোট দিলেন, “নট এক্সেপ্টেড”। স্ত্রী লিখিত ভাবে পুনরায় বললেন, “আমাকে যেতেই হবে ভাইয়ের কন্ডিশন ভাল নয়" ভদ্রলোক এবার ও উত্তর দিলেন, “নট এক্সেপ্টেড”। স্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে লিখলেন, “এক্সেপ্ট না হলেও যেতে হবে; মানব না"।  

ভদ্রলোক এবার উত্তর দিলেন, “ঠিক আছে যাও, তবে তোমার সাবস্টিটিউট দিয়ে যেও"। সুত্রাং এই শব্দ গুলু  ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকলে এধরনের সমস্যা করবে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

তবে সীমিত পরিসরের গোপন খেলা মনে হচ্ছে ফুরাবে না এই বেলা। প্রথম আলোতে পডেছিলাম, কে যেন বলেছিল, আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে এই বছরটা মনে হয় লুঙ্গিতেই কাটিয়া যাইবে। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার প্যান্ট বাহির করিয়া তাহার চেইনে দু ফোঁটা করে তেল দিবেন। তাহা না হইলে বছর শেষে লকডাউন খুলিয়া গেলেও প্যান্টের চেইন আর খুলিবে না। ’ কথাটা সম্ভবত সত্যি হতে যাচ্ছে।  

আর যারা দুই একজন বলছে সীমিত পরিসরে লকডাউন দিয়ে কোনো কিছু লাভ হচ্ছে না, তাদের উদ্দেশ্যে কর্তাব্যক্তিরা ভেংচি কাটছেন এই বলে যে, “হাউ প্যাথেটিক”!। অনেকেই জানেন। তাঁর পরেও কৌতুকটা বলেই ফেলি। এক চট্টগ্রামের, এক সিলেটী এবং এক নোয়াখালীর ভদ্রলোক একসাথে ট্রেনে করে ভ্রমণ করেছিলেন। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।  

নোয়াখালির ভদ্রলোক প্রথমেই চট্টগ্রামের লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে বল্লেন, “এটা সবার জানা কথা যে বাংলা ভাষা সিলেটে গিয়ে আহত হয়েছে আরে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছে। সুত্রাং তোমার কিছুই বলার নেই”। চিটাগাং এর ভদ্রলোক তখন চুপচাপ বসে ছিলেন। এবার সিলেটের ভদ্রলোক বললেন, “পিফল অফ নোয়াখালি অল সো খেনট স্পিক ইংলিশ হরেক্টলি। ” এটা শুনে নোয়াখালীর ভদ্রলোক বললেন, “ ও মাই গড, হাউ হেথেটিক এন্ড হিকুলিয়ার হনাউন্সিয়েসন”!! এখন দুই একজন যারা বিরোধীতা করছেন সীমিত পরিসরের বিরদ্ধে, তাদের বিরুদ্ধে বাকিরা এভাবেই বলছেন।
    
এই কথাগুলো বলার কারণ সীমিত পরিসরে লকডাউন দিয়ে আসলে লকডাউন কে তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। যাই হোক, আমদের কি? আমদের মাথা ছোট, ব্যাথাও কম। তবে একটা কথা বলি। বাংলার অনেক বিলুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি আছে যেগুলু আমরা জানিনা। তাঁর মধ্যে একটা সংস্কৃতি হল, অনাবৃষটি হলে বৃষ্টির জন্য গান গাওয়া।  

বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়ত এটা সম্পর্কে অবগত নয়। এমনকি পাঠকদের অনেকেই হয়ত এই সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত নন; অবগত থাকলেও কোনদিন দেখেননি। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল দেখার। নিয়মটা হচ্ছে বৃষ্টির জন্য নামাজ হয় আরে নামাজের পরে সিরনি দেয়া হয় আরে সেই সিরনি টা বানানো হয় এলাকার প্রতিটি বাডি থেকে চাল তোলার মাধ্যমে।  

কিছু লোক গান গেয়ে ঐ বাড়ির সামনে যায়, আর বাড়ির মালিক তার ইচ্ছে মত চাল দেয়। চট্টগ্রামে যেভাবে গানটা গাওয়া হয় তার কিছু লাইন আমার মনে আছে, সেগুলু বলছি। যে বলে আরও দে, ধনে জনে পুরাই দে/ (যে বলে আরো দে, তাঁকে ধনে জনে পুর্ন করে দাও) যে বলে থোরা থোরা, তার পোদত কেউশ্যা ফোড়া (যে বলে অল্প অল্প দাও, তাঁর পাছায় বিষাক্ত ফোড়া উঠুক)।

news24bd.tv নাজিম