নামাজরত মুসল্লিদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলে হামলা

নামাজরত মুসল্লিদের ‘জয় শ্রীরাম’ বলে হামলা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দিল্লির উপকন্ঠে গুরগাঁওতে মুসলিমরা যাতে উন্মুক্ত সরকারি জমিতে নামাজ পড়তে না-পারে, সে জন্য আন্দোলনে নেমেছে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। একে ঘিরে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২০শে এপ্রিল, শুক্রবার।

গুরগাঁওয়ের অভিজাত এলাকা সেক্টর ৫৩-তে সরকারি একটি মাঠে জুম্মার দিনে নামাজ পড়ার জন্য জড়ো হন স্থানীয় প্রায় ৫০০-এর মতো মুসলিম।

গুরগাঁওয়ের ওই মাঠে বহুদিন ধরেই নামাজ পড়া হচ্ছে, কিন্তু সেদিন সেখানে নামাজে বাধা দেওয়ার জন্য হঠাৎ করে জড়ো হয় বেশ কিছু যুবক। আশেপাশের ওয়াজিরাবাদ ও কানহাই গ্রামের ওই হিন্দু যুবকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দিতে নামাজের জন্য আসা মুসুল্লিদের ব্যঙ্গ করতে থাকে। তাদের প্রার্থনা পণ্ড করারও চেষ্টা করে।

পরে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়লে হরিয়ানা পুলিশ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে হামলাকারী ছয় যুবককে গ্রেপ্তারও করা হয়। পরে তারা অবশ্য সবাই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।

এরপরই সোমবার গুরগাঁওতে ‘সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামে একটি সংগঠন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখায়। তাদের দাবি ছিল, গুরগাঁওতে হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকার আশেপাশে যে সব খোলা জমি আছে সেখানে মুসলিমদের নামাজ পড়া ষিদ্ধ করতে হবে।

বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, ভারত বাঁচাও অভিযান, অখিল ভারতীয় হিন্দু ক্রান্তি দল ইত্যাদি মোট বারোটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন একজোট হয়ে এই সমিতিটি গঠন করেছে।

হিন্দু ক্রান্তি দলের নেতা রাজীব মিত্তাল বলছেন, এখানে আসলে দুটো সমস্যা আছে। প্রথমে তো মুসলিমরা নামাজ পড়ার নাম করে সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে। আর আমাদের যে হিন্দু ছেলেরা নিজেদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

সোমবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন সুবেহ সিং ভোরা, যিনি স্থানীয় একটি গ্রামের সরপঞ্চ ছিলেন। তিনি বলছেন, মুসলিমদের কেন খোলা মাঠে এসে নামাজ পড়তে হবে? তারা তো তাদের মসজিদে গেলেই পারে!

কিন্তু জুনায়েদ শেখ নামে যে উর্দু শিক্ষক ৫৩ সেক্টরের মাঠে সাপ্তাহিক নামাজের আয়োজন করেন, তিনি বলছেন গরিব মানুষের কাজের ফাঁকে দূরের মসজিদে যাওয়ার সময় হয় না বলেই তারা এই উন্মুক্ত জায়গায় আসেন।

আমাদের একটা মসজিদ পাঁচ কিলোমিটার, আর অন্যটা এখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে। অটো বা রিক্সা ভাড়া দিয়ে অত দূরে কি প্রত্যেক শুক্রবারে যাওয়া সম্ভব? বলছেন তিনি।

স্থানীয় পুলিশের সম্মতি নিয়েই কাছের অন্য একটি মাঠ থেকে সরে এসে ২০০৭ সাল থেকে মুসলিমরা এখানে নামাজ পড়ছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন। তবে পুলিশের সম্মতি ছিল মৌখিক, তার জন্য কোনও লিখিত অনুমতিপত্র তাদের নেই।

গত শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) তারা এই মাঠে নামাজ পড়েছেন পুলিশি পাহারায়। তবে আগামিকাল (৪ঠা মে) আবার জুম্মার নামাজের সময় কোনও গন্ডগোল বাঁধে কি না, এই ভয়ে তটস্থ হয়ে রয়েছেন তারা।

গত কয়েক বছরে ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা আর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার যে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে, গুরগাঁওয়ে নামাজ পড়া নিয়ে এই অশান্তি আর বিক্ষোভ তাতে সর্বশেষ সংযোজন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)
       

   

সম্পর্কিত খবর