সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে শ্বাসকষ্টে ৯ জন মুমূর্ষু করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কী কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ ছিল সে ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপককে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যু ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন করোনা ও করোনা উপসর্গ জ্বর সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যু হয় ১০ জনের।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার বিষয়টি নিশ্চন্ত করেছে।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে সাতক্ষীরা করেনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সেন্টাল অক্সিজেন প্লান্টে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে দেড় ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসকষ্টে ৯ জন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
কলারোয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মোস্তফা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে করোনার উপসর্গ নিয়ে তার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন সিসিইউতে ভর্তি আছেন। বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ নার্স এসে বলে অক্সিজেন সংকট আছে। আপনারা যে যেভাবে পারে আপনাদের রোগীর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন। তা না হলে রোগী বাঁচানো সম্ভব হবে না। এর কিছুক্ষনের মধ্যে হাসপাতালের সেন্টাল অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে তার চোখের সামনে শ্বাসকষ্ঠে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সিসিইউতে ৩ জন এবং আইসিইতে ২ জনের মৃত্যু হয়। তিনি তাৎক্ষনিক সাতক্ষীরা-১ তালা কলারোয়া আসনের ওয়ার্কাসপার্টির এমপি অ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহকে বিষয়টি জানান। কোন সুরাহ না হওয়ায় পরবর্তীতে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি আরও জানান এসময় হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহের জন্য ছুটা-ছুটি করতে থাকে।
সাতক্ষীরা শহরের কুকরালি গ্রামের মো. আব্দুল হাসিব জানান তার চাচী নাজমা খাতুন(৪৬) আইসিইউতে ভর্তি আছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অক্সিজেনের অভাবে তার চাচীসহ আশাশুনির আব্দুল হামিদ(৭৫), কালিগঞ্জ উপজেলার আকরাম হোসেন (৩৭), সদরের ইটাগাছার খায়রুন নেছাসহ তার চোখের সামনে দেড় ঘণ্টার মধ্যে একে একে শ্বাসকষ্টে ৯ জনের মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান নার্স ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণে এই মুত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখানে রোগীর প্রেসার মাফতেও টাকা লাগে। আবার ডায়াবেটিক রোগীদের টেস্ট করতের নার্সদের ৫০ টাকা করে দিতে হয় রোগীদের।
এদিকে সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নঘটনায় রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।
রোগীর মৃত্যুতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবী করে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম, যুগ্ম আহবায়ক, অ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলুসহ কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, তিনদিন পূর্ব থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের সরবরাহ কমে আসায় মিটারে সিগন্যাল পাওয়া যায় বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু তারপরও কতৃপক্ষ যথাসময়ে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করেনি। অক্সিজেন অভাবে বুধবার সন্ধ্যায় ছটফট করতে করতে পরপর ৭ থেকে ১০ জন রোগীর মৃত্যুর পর অক্সিজেনের ট্রাক এসে সরবরাহ নিশ্চিত করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ সময় কতজন রোগী মারা গেছে তা নিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিক কোন কোন রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে অক্সিজেন এনে তাদের স্বজনদের জীবন রক্ষা করে।
নাগরিক নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরো জানান, গত এক মাসের মধ্যে ৩/৪ জন চিকিৎসক ছাড়া আর কোন চিকিৎসককে মেডিকেল কলেজের কোনো ওয়ার্ডে যেতে দেখা যায় না। হাতে গোনা ৩ থেকে ৪ জন চিকিৎসক ও ইন্টানি চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখলেও অন্যারা বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মেডিকেল কলেজের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট কখনো পূর্ণ করা হয় না। ট্রাকে অক্সিজেন এনে অর্ধেক প্লান্টে দিয়ে বাকি অর্ধেক ওই ট্রাকেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সিলিন্ডারেও অর্ধৈক অক্সিজেন ভরা হয়। এসব অভিযোগ এখন ভিতরের লোকজনই বলাবলি করছে। একটি চক্র এভাবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে হরিলুটের আখড়ায় পরিণত করে প্রকারন্তে রোগীদেরকে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে যেতে উৎসাহিত করছে।
এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা অক্সিজেন বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনে প্রেসার কমে যায়। এসময় কিছুটা অক্সিজেন সংকট তৈরি হলে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। রাতে অক্সিজেন প্লাটে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে কী কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ ছিল সে ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপককে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আগামি তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে একযোগে মাঠে নেমেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। জেলার সাতটি উপজেলায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা শহরে মহড়া দেয় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল টিম।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, সরকারি বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে জেলার সাতটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ১০টি পেট্রোল টিম কাজ করছে। সাতটি উপজেলায় সাতটি ও তিনটি ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়া জেলায় তিন প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও আনসার ব্যাটেলিয়ান মাঠে রয়েছে। একজন করে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলাব্যাপী ২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
যশোর ৫৫ পদাতিক ব্যাটেলিয়নের ক্যাপ্টেন শেখ শামস্ জুবায়ের বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ পতিপালনে প্রজ্ঞাপন জারির পর নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে নিয়োজিত রয়েছি। করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে আমরা মাটে নেমেছি। সকলের সহযোগিতায় দেশকে করোনামুক্ত করতে পারবো।
আরও পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় বছরজুড়ে বৈধতার সুযোগ বাড়ল
যে ১০০ টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত, সে মেয়ের ছয় তলা বাড়ি, প্রতিদিন সিঙ্গাপুরে যায়
news24bd.tv / তৌহিদ