সূরা ইয়াসিন: আয়াত ৭৭-৮০, পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাস

সূরা ইয়াসিন: আয়াত ৭৭-৮০, পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাস

অনলাইন ডেস্ক

আজ সূরা ইয়াসিনের ৭৭ থেকে ৮০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হবে। এই সূরার ৭৭ থেকে ৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

 أَوَلَمْ يَرَ الْإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُبِينٌ (77) وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِيَ خَلْقَهُ قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ (78) قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنْشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ (79)

“মানুষ কি দেখে না (এবং চিন্তা করে না) যে,আমি তাকে সৃষ্টি করেছি (সামান্য) বীর্য থেকে? অথচ এখন সে প্রকাশ্য বাকবিতণ্ডাকারী হয়ে গেল। ” (৩৬:৭৭)

“সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে এবং নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে: (এই) অস্থিসমূহ যখন পচে গলে যাবে তখন কে তাকে জীবিত করবে?” (৩৬:৭৮)

“আপনি বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন।

তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। ” (৩৬:৭৯)

ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে, একবার মক্কার একজন কাফের এক খণ্ড পচা হাড় হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে আসে। সে বলে, আমার হাতে যে হাড়টি আছে এটিকে আমি এখন চাপ দিলে আমার হাতের মুঠোর মধ্যে ধুলিকণায় পরিণত হবে এবং নীচে ফেললে মাটির সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য করা যাবে না। যে জিনিসটি পচে মাটি হয়ে গেল তা আবার কীভাবে জীবিত হবে?

মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতাকে সীমিত ভাবে তখনই তার মনে এই প্রশ্ন আসে।

মানুষ পার্থিব জীবনে যেহেতু এমন ঘটনা কখনো দেখেনি তাই আল্লাহতে অবিশ্বাসী মানুষ মনে করে, কিয়ামতের দিন পচাগলা হাড়কে আবার জীবিত করা সম্ভব হবে না।

এ কারণে এখানে অবিশ্বাসী কাফেরদের এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলা হচ্ছে:যে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সামান্য শূক্রবিন্দু দিয়ে বিশালদেহী মানুষে পরিণত করেছেন তার শক্তিকে তোমরা কীভাবে সীমিত মনে করছো? যে আল্লাহ একবার অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে  মানুষকে অস্তিত্ব দিতে পারলেন তিনি কি আরেকবার তার দেহাবশেষ থেকে তা করতে পারবেন না? তোমরা কি ভেবেছ তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদের দেহাবশেষ কোথায় যায় সে সম্পর্কে আল্লাহ অবগত নন?

মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দিয়ে যদি ক্লোনিং পদ্ধতিতে কোন জীবের একটি দেহকোষ হতে হুবহু ঔ জীবটিকে পুনরায় তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করে থাকতে পারে তাহলে যে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার পক্ষে কি তার দেহাবশেষ থেকে আবার তাকে জীবনদান করা সম্ভব হবে না?

মানুষ আজ একথা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে,প্রতিটি মানুষের শরীরের ডিএনএ’র মধ্যে তার জিনগত সমস্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে এবং তা কখনো ধ্বংস হয়ে যায় না। বহু বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে তার আত্মীয়দের শরীর থেকে নেয়া ডিএনএ’র নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব।

এই তিন আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:

১. কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ এবং তাঁর নির্দেশের সামনে অহঙ্কারপূর্ণ আচরণ করে তবে সে যেন সামান্য শূক্রাণু দিয়ে আল্লাহর হাতে নিজের সৃষ্টিকেই অস্বীকার করল।

২. যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তারা আসলে মৃত্যুর পর মানুষের পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাস করে না। কিন্তু তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের পক্ষে কোনো যুক্তি দাঁড় করানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

৩. যদি কেউ কোনো কিছু জানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে তবে তা প্রশংসনীয়। ধর্মীয় বিষয়ে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আলেম সমাজকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু সত্য উপলব্ধি করার পরিবর্তে অহংকার প্রকাশ ও সত্যকে প্রত্যাখ্যানের অজুহাত সৃষ্টির জন্য যদি কেউ প্রশ্ন করে তাহলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।  

আরও পড়ুন


ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি টিকার প্রত্যাশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

এলো ১১ লাখ আরও আসছে রাতে ৯ লাখ চীনা টিকা

বাইক নিয়ে রাস্তায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি, ম‌্যা‌জি‌স্ট্রেট যা করলেন

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ হাসি স্পেনের


সূরা ইয়াসিনের ৮০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

الَّذِي جَعَلَ لَكُمْ مِنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنْتُمْ مِنْهُ تُوقِدُونَ (80)

“যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন এবং তোমরা (যখন চাও) তা থেকে আগুন জ্বালাও। ” (৩৬:৮০)

আগের আয়াতে কিয়ামতের দিন মানুষের পুনরুজ্জীবনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার পর এই আয়াতে প্রকৃতির অন্যতম একটি বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে: আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতিতে যে বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার ফলে দু’টি গাছের শাখার মধ্যে ঘর্ষণের ফলে আগুন উৎপন্ন হয়। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বর্তমান যুগের মতো অতীতে আগুন জ্বালানো এতটা সহজ ছিল না। তখন মানুষ দু’টি পাথরের ঘর্ষণের মাধ্যমে কিংবা দুই খণ্ড কাঠকে পরস্পরের সঙ্গ ঘর্ষণ করে আগুন জ্বালাত। এ ছাড়া, ঘুর্ণিঝড় বা ঝোড়োগতির বাতাসে গাছে গাছে ঘর্ষণ লেগেও আগুন জ্বলে উঠত। এখনো প্রকৃতির এই বিধান জারি রয়েছে এবং মাঝেমধ্যেই আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে দাবানলের আগুনে জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার খবর শুনতে পাই।

আগুন ও পানি পরস্পর বিরোধী দু’টি সত্ত্বা হলেও এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এই দুই সত্ত্বার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ, যে সবুজ বৃক্ষ পানির সাহায্যে বেঁচে থাকে সেটিকে আল্লাহ আগুন তৈরির উৎস বানিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য এই সবুজ বৃক্ষ শুকিয়ে গেলে তা আগুনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার প্রচলন অতীতে ছিল এবং এখনো আছে।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দু’টি দিক হচ্ছে:

১. প্রকৃতির পরিচয় ও এর বিধানগুলো জানার মাধ্যমে মহান আল্লাহ ও তার অসীম ক্ষমতার প্রতি মানুষের ঈমান দৃঢ় হয়।

২. গাছের কাণ্ড ও পাতায় সূর্যের যে আলো পড়ে তা ধ্বংস হয়ে যায় না বরং তা জমা থাকে। যখন গাছের ডাল আগুনে পোড়ে তখন বছরের পর বছর ধরে এই ডালে সঞ্চিত সূর্যের তাপ বেরিয়ে আসে এবং আবার এই প্রকৃতিতে প্রত্যাবর্তন করে। এভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃতিতে প্রদত্ত জ্বালানী বা শক্তির আবর্তন ঘটে এবং তা কখনো বিনাশ হয়ে যায় না।

news24bd.tv এসএম