আইইউবিতে বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত

আইইউবিতে বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২১ উপলক্ষে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি’র) সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর সহযোগিতায় ও আইইউবি সোশিওলজি ক্লাব, অ্যানথ্রোপলজি ক্লাব এবং ড্যান্স ক্লাবের অংশগ্রহণে ১ জুলাই ২০২১ এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব অ্যাম্বাসাডর মো. শহীদুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একই বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন আইইউবি’র গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রামের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ হুসেইন।  

সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়ন্সের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে আইইউবি’র তিনটি ক্লাব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য-নির্ভর সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করে। আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউবি’র সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শারমিন আহমেদ।

 

প্রধান অতিথির আলোচনায় অ্যাম্বাসাডর মো. শহীদুল হক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে রোহিঙ্গাদের পু্ণর্বাসনে কোন উপযুক্ত সমাধান আসলে খুঁজে বের করতে পারে নি এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ নিরসন ও সমাধান করতে না পেরে মিয়ানমার যে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পর্যবসিত হয়েছে- সে বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি শংকা প্রকাশ করেন যে রোহিঙ্গা সংকটের কোন উপযুক্ত ও স্থায়ী সমাধান করা না গেলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই শান্তিপূর্ণ হবে না। ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও তার বক্তব্যে ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং চিত্তবিনোদনখাতে কিভাবে সহযোগিতা করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।  

তিনি উল্লেখ করেন, এ বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে শরণার্থীদের “ব্যথা ভুলতে, শিখতে এবং প্রজ্জ্বলিত হতে” সাহায্য করা, এবং শরণার্থীদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃ্দ্ধিতে ইউএনএইচসিআরের যে ক্যাম্পেইন, তা এ বছরের প্রতিপাদ্যের সাথে খুবই সংগতিপূর্ণ ও সময়োচিত।  

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক তার আলোচনায় রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাঁচটি প্রেক্ষিত তুলে ধরেন: পরিচয়, বৈষম্য ও রাষ্ট্রবিহীনতা, রেসপন্সিবিলিটি টু প্রোটেক্ট বা আরটুপি’র ব্যর্থতা, প্রত্যাবাসন ও পুণর্বাসন এবং সন্ত্রাসবাদ ও সুরক্ষা। সেই সাথে তিনি কিভাবে কিছু মানুষ ‘মানুষ’ থেকে ‘শরণার্থী’তে পরিণত হয়, পশুদের জগতে কেউ কখনো ‘শরণার্থী’ হিসেবে পরিগণিত হয় কিনা, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারি ‘দেশিত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় কিনা, তাদের প্রতি নৃশংসতা ন্যায়সংগত কিনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিতে আর কত সময় নেবে, ইত্যাদি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্রবন্ধের আলোচনায় ড. ইমতিয়াজ এ হুসেইন রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর জোর দেন। অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান এই বিষয়টিকে কেবল শরণার্থী সমস্যা নয়, বরঞ্চ একটি পরিবেশগত সংকট হিসেবেও তুলে ধরেন।  

উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের জনগণ যে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এবং পরবর্তীতে পরিবেশগত শরণার্থীতে পরিণত হয়ে জীবনে যে বাড়তি দুর্দশা যোগ করবে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাগিদ দেন। সবশেষে, আইইউবি সোশিওলজি ক্লাব সারা পৃথিবীর শরণার্থী জনগোষ্ঠীর জীবনের সংকট ও দুর্দশার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে, আইইউবি ড্যান্স ক্লাব শরণার্থী প্রতিপাদ্যের ওপর আয়োজিত একটি দলীয় নাচ পরিবেশন করে এবং আইইউবি অ্যানথ্রোপলজি ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগীত পরিবেশনা এবং কবিতা আবৃত্তি করা হয় যেখানে উদ্বাস্তুদের ছেড়ে আসা দেশ ও ঘরের জন্য স্মৃতিকাতরতা এবং মানবজাতির একতাবদ্ধতার চিত্র তুলে ধরা হয়।

 অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইউবি’র সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাহমুদুর রহমান।