পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত ৩২৬

পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত ৩২৬

Other

রাঙামাটিতে দ্রুত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগের আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা সদরের চেয়ে এ রোগের প্রকোপ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। গত আড়াই মাসে পাহাড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ম্যালেরিয়া। এতে চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

একদিকে করোনা রোগের ঊর্ধ্বমুখিতা, অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব।

সব মিলে হিমশিম খাচ্ছে রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় গঠন করা হয়েছে একাধিক মেডিকেল টিম।

রাঙামাটি জেলা স্থাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আড়াই মাসে রাঙামাটি জেলায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩২৬জন।

যা এখনো বাড়ছে। রাঙামাটি জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ম্যালেরিয়ার রোগের আক্রান্ত জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চল বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি। এসব উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তাই জেলা স্থাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ৪টি উপজেলাকে ম্যালেরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। একই সাথে ম্যালেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাস্থ্য পাঠনার হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক।

রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীষা জানান, প্রতি বছর বছরের চার মাস অর্থাৎ মে, জুন, জুলাই ও আগষ্ট মাসে পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। কারণ বর্ষার কারণে ম্যালেরিয়ার মশার উপদ্রব বৃদ্ধিপাই। এছাড়া রাঙামাটি পাহাড়ি অঞ্চল জঙ্গল ও জোপ ঝাড়ের কারণে এ মশা সহজে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।

তবে গত ২০১৯-২০২০ সালের তুলনায় এ বছর ম্যালেরিয়া রোগি তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে।

কারণ ২০১৯ সালে ঠিক এ সময় এক হাজার ৪০০ ও ২০২০ সালে প্রাছ ৭০০ ম্যালেরিয়া রোগী ছিল এ সময়। কিন্তু এ
বছর আড়াই মাসে মাত্র ৩২৬জন আক্রান্ত। তবে ম্যালেরিয়ার রোগে আক্রান্ত হয়ে গত তিন বছরে কেউ মারা যায়নি। তাই আমরা দাবি করতে পারি ম্যালেরিয়া রোগে মৃত্যু শূণ্যের কোটাই। রাঙামাটি পুরো জেলায় ম্যালেরিয়া রোগি নেই। শুধু মাত্র ৪টি উপজেলা ছাড়া। জেলার বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। তাদের চিকিৎসা সেবা দিকে কাজ করছে বেশ কিছু মেডিকেল টিম। একই সাথে স্বাস্থ্য পাঠনার হিসেবে ব্র্যাকও যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে এ তিন পার্বত্য জেলা অর্থাৎ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ র্কমসূচী চালু হওয়ার পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ হারাই পাহাড়ে।

ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাই উল্লেখযোগ্য হারে। তবে কেন পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়ার রোগ বেড়ে চলেছে তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাঙামাটি ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী মো. হাবিবুর রহমান জানান, রাঙামাটি ১০টি উপজেলায় ৩৫টি কার্যলয় আছে ম্যালেরিয়ার বিষয়ক কাজ করার জন্য। এসব কার্যলয়ে এক হাজার ২০০ স্বাস্থ্য সেবিকা রয়েছে। ২৯৪জন স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছে। তারা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু জেলা বা উপজেলায় নয় ইউনিয়নেও ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মীরা ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যার কারণে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু সংখ্যা একে বারে নেই।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ম্যালেরিয়া রোগে মৃত্যু সংখ্যা কমলে হবে না, আক্রান্তের সংখ্যা একে বারের কমানোর জন্য এ রোগের চিকিৎসায় আরও আন্তরিক হতে হবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে।

news24bd.tv / তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর