কাউকে সাহায্য করার চেয়ে তাকে সহযোগিতা করায় অধিক মহত্ব

কাউকে সাহায্য করার চেয়ে তাকে সহযোগিতা করায় অধিক মহত্ব

Other

আমার ক্ষুদ্রজীবনের অভিজ্ঞতায় আমি বুঝেছি কারো দায়িত্ব নিলেই তার ভাল করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়া হয় সে নিজে একজন পরমুখাপেক্ষী অকর্মন্য মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। এবং যিনি দায়িত্ব নেন তার দায়িত্ব নেওয়াটাকে নির্ভরশীল ব্যক্তিটি তার প্রাপ্য বলে মনে করে। এতে উভয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্যহীন সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

 

কাউকে সাহায্য করার চেয়ে তাকে সহযোগিতা করাকে অধিক মহত্ব বলে আমি মনে করি। কেউ যেন নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারে সেই সহযোগিতাটা বরং জরুরি।  

আমাদের অনেকেরই বাবা আমাদের হাতে খুব বেশি টাকা বা সম্পদ তুলে দিতে পারেননি। তারাই শ্রেষ্ঠ বাবা যারা সন্তানদের শিখিয়ে দিতে পেরেছেন কিভাবে নিজেকে সম্পদে পরিণত করা যায়৷ 

উপরের কথাগুলো আমার আব্বা বলতেন।

উনি উনার ভাষায় বলতেন। ঠিক এভাবে বলতেন না। তবে মূল থিম এটাই ছিলো।  

আব্বা আমাদের সব ভাই বোনকে কিছু কারিগরি বিদ্যা শিখিয়েছিলেন যেন আমরা নিজেরা ছাত্রাবস্থাতেই কিছু উপার্জন করতে পারি। আমার ভাইকে শিখিয়েছিলেন নষ্ট ক্যাসেট,  রেডিও মেরামত করার বিদ্যা। কারণ ওর যন্ত্রপাতিতে আগ্রহ ছিল। এসএসসি পরীক্ষার পর রীতিমতো বাজারের এক রেডিও মেকানিকের দোকানে বড় ভাইকে বিনা বেতনে শিক্ষা নবিশ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে আমাদের পাড়ায় টিজিং কম হয়নি। আমার ভাইয়ের বন্ধুরাও হাসাহাসি করেছে। একজন প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তার ছেলে বাজারে মেকানিকের সহকারি হয়ে কাজ করে। কেউ কেউ আমাকে বলত "তোর ভাইকে মনে হয় তোর বাপ আর পড়ালেখা করাবেনা।  

আব্বার একটা বড় গুন ছিলো। কে কি বলল তা নিয়ে ভাবতেন খুবই কম। হেসে উড়িয়ে দিতেন। না, ভুল বলেছি। আব্বা একটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবতেন। খারাপ, অন্যায় বা দুর্নীতি করলে লোকে কি ভাববে সেটা নিয়ে খুব ভাবতেন। তাই কোন অধস্তন কর্মচারী "ভাবী, আমাদের বাগানের  লিচু' বলে বাসায় উপহার পাঠিয়ে দিলেও আব্বা লজ্জায় মিশে যেতেন। আমি আব্বার মত অতটা সৎ হতে পারিনি বলে প্রায়ই আত্মগ্লানিতে ভুগি। তাই এই প্রসংগ থাক।  

যাইহোক লেখাপড়ার পাশাপাশি অর্থকরি বা কারিগরি বৃত্তিমূলক কর্মকান্ড হিসেবে আমার ভাগে ছিলো ফিচার রাইটিং। আব্বা বলতেন "তুই লিখবি ফিচার। তোর লেখার হাত আছে। পত্রিকায় ফিচার লিখলে টাকা পাওয়া যায়। আমি হয়তো তোকে খুব বেশি টাকা দিতে পারবো না। যতটুকু দিব তা দিয়ে তোর প্রয়োজনটা হয়ত মিটবে। কিন্তু বাড়তি শখের খরচটা যেন নিজেই তুলতে পারিস তার জন্য তোকে এই পরামর্শ দিলাম। এবার একটা ফিচার লিখ। কি নিয়ে লিখবি বল?' 

আমি সম্ভবত আব্বার এই বয়ানের তিন বছর পর হোস্টেল জীবনে প্রবেশ করেছি। কিন্তু আব্বা ভেবে রেখেছেন তিন বছর আগেই। হোস্টেল জীবনের দ্বিতীয় বছর থেকেই আমি আমার নিজের প্রায় পুরো খরচই নিজে উপার্জন করতে শুরু করি। এমনকি কিছু উদবৃত্তও থাকতো। বন্ধুদের মাস শেষে কারো হাত খালি হলে টাকা ধার দিতে পারতাম। আমি আসলে খরচও করতাম খুব কম। অধিকাংশ বিকেলে নাস্তা করতাম না। কারণ আমার তাতে অসুবিধা হতো না। আবার এই আমিই একদম শুরুর দিকেই মোবাইল ফোন কিনেছিলাম। যে জিনিস কাজে লাগে তাকে কখনই বিলাসিতা বলে ভাবিনি। এটাও আব্বাই বলতেন।

আরও পড়ুন


ত্রাণ নয়, স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ চাই

চাকরির সুযোগ দিচ্ছে মোস্তফা গ্রুপ

খুলনা বিভাগে গত ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ও শনাক্ত

আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে ৮০ জেলার পতন হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী


যাই হোক ছাত্রাবস্থায় আমার টাকা আসতো পত্রিকায় লিখে, টিউশনি করে আর কোচিং এ পড়িয়ে। মনে আছে প্রায়ই ঢাকায় এসে জনকন্ঠের সজল আশফাক ভাই আর ভোরের কাগজের সঞ্জীব চৌধুরী দাদাকে পোক করতাম। ভাই চেক টেক আছে কিছু? এই দুটো রাস্তা আবার আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন আশীষ চক্রবর্তী দাদা। উনার ঋণ কি করে ভুলি?

আব্বার চাকরি চলে গেল। রিটায়ারমেন্টের পুরো টাকাটাও পেলেন না। কিন্তু ঐ সময়ের পর থেকে আজ অব্দি আমার ব্যাংক একাউন্টে সব সময় পজিটিভ ব্যালেন্সই ছিল। ফলে প্রচন্ড সীমাবদ্ধতা ছিলো কিন্তু দারিদ্র ছিলো না কখনই।  

কথাগুলো কেন বললাম? হয়তো আজকের অনেক স্ট্রাগল করা ছেলেমেয়েদের কাজে লাগবে। আমার অনুজপ্রতিম ছাত্রছাত্রী আর জুনিয়র স্টুডেন্টরাও আছে আমার বন্ধু তালিকায়।  

এই লেখার আরেকটা কারণ আছে। মাঝে মাঝেই আব্বাকে খুব মিস করি। রাত গভীর হলে আব্বাকে মনে পড়ে। আব্বাকে আমি মনে মনে তীরন্দাজ বলে ডাকতাম। অন্ধ তীরন্দাজ৷ যে চোখে না দেখেও তীর বিদ্ধ করতে পারতো।

news24bd.tv এসএম