বরিশালে রিমান্ডে নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, মেডিকেল টেস্টে প্রমাণ মেলেনি

বরিশালে রিমান্ডে নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, মেডিকেল টেস্টে প্রমাণ মেলেনি

অনলাইন ডেস্ক

বরিশালে হত্যা মামলার আসামি নারীকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন হেনস্তা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে উজিরপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জিয়াউল আহসান ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পেক্ষিতে ওই নারী আসামির মেডিকেল টেস্ট করা হলে আনীত অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসকরা ওই নারীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এমন প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। গত ৩ জুলাই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল থেকে আদালত এবং পুলিশের কাছে পাঠানো মেডিকেল রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

ওই রিপোর্টটি করেছেন হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ইউনিট-২ এর একজন নারী ইনডোর মেডিকেল অফিসার।  

রিপোর্টে উল্লেখ আছে, ওই নারীর শরীরে আঘাতের যে চিহ্ন দেখা গেছে, তা অনেক পুরানো। আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করলেও এতে কী উল্লেখ আছে তা তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন।  

এদিকে বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় এ নিয়ে রেঞ্জ পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি এলাকায় পরকীয়া প্রেমিকার বাড়ির পাশ থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী টুনু (৪২) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি হারতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিখিল চক্রবর্তীর ভাই। ওই ঘটনায় নিহতের অপর ভাই বরুন চক্রবর্তী বাদী হয়ে ২৭ জুন উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের পরকীয়া প্রেমিকা মিনতি বিশ্বাস মিতু অধিকারীকে (৩৫) একমাত্র আসামি করা হয়। ২৮ জুন মিতু অধিকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৯ জুন পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  

রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাইনুল ইসলাম। আদালতে বিচারকের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিতু অধিকারী। আদালত অভিযোগ শুনে ওই নারীকে নারী চিকিৎসক দিয়ে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং তাকে নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলেন শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালককে। নির্দেশ অনুযায়ী গত ৩ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে এ ঘটনায় থানার ওসি জিয়াউল আহসান ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাইনুল ইসলামকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে।

আরও পড়ুন


বাবার সম্পত্তি

আমার দেখা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাহসী নেত্রী সাহারা আপা

আত্মসমপর্ণের পর কারাগারে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট

দুবাই বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজে ভয়াবহ বিস্ফোরণ


শেবাচিমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দুই কনুই ও গোড়ালিসহ ৬টি স্থানে ৬ থেকে ৮টি আঘাত রয়েছে। তবে সবগুলোই অনেক পুরানো আঘাত। সবমিলিয়ে আঘাতের গুরুত্ব সিম্পল (নরমাল) বলে মেডিকেল রিপোর্টে রোগীর ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। কিন্তু আঘাতগুলো কতটা পুরানো সে বিষয়ে উল্লেখ নেই।  

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালত নির্দেশে দিয়েছে একজন নারী চিকিৎসক দিয়ে ওই ভিকটিমের চিকিৎসা ও পরীক্ষা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে। নির্দেশনা অনুযায়ী নারী চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই চিকিৎসক মেডিকেল রিপোর্ট খামে ভরে আমাকে দিয়ে গেছেন। তিনি যেভাবে দিয়েছেন সেভাবেই আদালতে পাঠিয়েছি। রিপোর্টে কি আছে সেটা আমার দেখার সুযোগ হয়নি।  

বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উজিরপুরের ওসি ও ইন্সপেক্টরকে (তদন্ত) ক্লোজড করা হয়েছে। একজন সার্কেল এএসপি, প্রত্যাহার হওয়া ওসি এবং ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ডিআইজি কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি সুষ্ঠু তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

news24bd.tv এসএম