প্রতিদিনের আয়ে সংসার চলে। তাহলে দিনের পর দিন ঘরে বসে কীভাবে সংসার চলবে? তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছি। এক মুঠো খাবারের আশায়। সারাদিন যে কয় টাকা আয় হবে সেই টাকা দিয়ে পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।
কথাগুলো বলেছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বাহাদুর রবি দাস (৭৩)।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করেছি। তবুও বাপ-দাদার পেশা ছাড়ি নাই। যে কারণে রাস্তায় ও অন্যের দোকানের সামনে জুতা সেলাই করি।
তিনি আরো বলেন, সরকার বাহাদুর সারাদেশে লকডাউন দিয়েছে। তবে আমাদের মতো গরীব সাধারণ মানুষের কথা ভাবা উচিত ছিল। দৈনিক আয় করে যাদের চলতে হয়। এত দিন লকডাউন চলছে কোন জনপ্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আমরাও গেলে তাদের কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে।
রবি দাসের মতো হোটেল কর্মচারী জোসনা বেগম বলেন, ৫জনের সংসার আমার আয়ের উপর। প্রতিদিন আয় করে তাদের চালাতে হয়। লকডাউনের কারণে এখন কাজ নেই। তাহলে এই ৫জনের সংসার আমি কীভাবে চালাব। এমপি, চেয়ারম্যান ও মেম্বারা নির্বাচনের সময় মা-খালা বলে ভোট নেয়। কিন্ত নির্বাচনের পর তাদের আর দেখা যায় না। এত দিন লকডাউন চলছে কোন জনপ্রতিনিধিদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিষদে গেলেও বলে খাবার বাড়ি চলে যাবে। খাবার আর বাড়ীতে আসে না। শুধু বলে।
এ সময় হুমায়ন (৭০) নামে এক রিক্সা চালক বলেন, এই লকডাউনে কেউ ইচ্ছা করে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেনি। ঘরে খাবার না থাকলে কোন আইন মানা যায় না। সুতরাং আয় করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, মেম্বার, চেয়ারম্যান ও এমপিরা শুধু বলে, দেখা করে না। তাদের খোঁজেও পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায় তারা শুধু আশ্বাস দেয়। তবে কোন সহযোগিতা করে না। রবি, জোসনা ও হুমায়নের মত অনেকে প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে কর্মের জন্য। কিন্ত আয় না করতে পেরে সন্ধ্যার পর হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। এমনি চিত্র রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলায় ঘুরে সরেজমিন দেখা গেল।
রাজবাড়ী জেলা পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরে থাক গাদাগাদি করে মুখে মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। টিসিবি’র মালামাল ক্রয় করছে গাড়াগাদি করে। ডাক্তারের দোকানে পা ফেলানোর জায়গা নেই। শহরে শতশত রিক্সা। মহাসড়কে রয়েছে ব্যক্তিগত যানবাহন। লকডাউন চলছে ঢিলে-ঢালা। এব্যাপারে রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী সাথে মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য সারাদেশে কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশে ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যে কারণে কর্মজীবী মানুষ ঘরে আছে। প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিনে করোনা শনাক্তের হার ৩১.৬২
ঢাকায় ৬৫ খুলনায় ৫৫ ও চট্টগ্রামে ৩৭ জনের মৃত্যু
রেকর্ড শনাক্তের দিনে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৬ হাজারেরও বেশি
হযরত খানজাহানের দিঘীর আহত কুমিরের চিকিৎসা চলছে
১৯৯ জন মৃত্যুর দিনে শনাক্ত ১১ হাজারেরও বেশি
রংপুরে ট্রাক-অটোরিক্সা সংঘর্ষে নিহত ২
news24bd.tv / তৌহিদ