আগুনমুখো চাঁদটা যেন লেক অন্টারিওর পানিতে ডুব দিয়ে মাত্রই ভেসে উঠলো

আগুনমুখো চাঁদটা যেন লেক অন্টারিওর পানিতে ডুব দিয়ে মাত্রই ভেসে উঠলো

Other

পার্কিং লটে থামতে না থামতেই চোখটা আটকে যায়। লোকালয়ের পেছন থেকে ‘আগুনমুখো’ চাঁদটাকে মনে হচ্ছে লেক অন্টারিওর পানিতে ডুব দিয়ে ভুস করে এই মাত্রই ভেসে উঠলো যেনো! কিন্তু চাঁদের গায়ে কেউ কী  লাল একটা আভা মেখে দিয়েছে! চাঁদটা এত্তো বড় কেন আজ!

পোর্ট ইউনিয়নে লেকের ধারে জোছনা শিকারীদের ভীড় দেখে আঁচ পাওয়া যায়- এই শহরের কতো মানুষ জোছনাকে ভালোবেসে রাতের বেলা ঘর ছাড়ে!
 
ওয়াটার ফ্রন্টপার্কের ট্রেইল ধরে আমরা লেক অন্টারিওর তীরে এসে দাঁড়াই। চাঁদটা ততক্ষণে নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে রুপালী আভা ছড়াতে শুরু করেছে। সেই আভায় লেক অন্টারিওর বুক জুড়ে চোখ ধাঁধানো এক চাকচিক্যময় রূপের তৈরি হয়েছে।

লেক অন্টারিওর গা ঘেষে ১৩.৫ হেক্টর সবুজ জমিনের উপর প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াটার ফ্রন্ট ট্রেইল। সেই ট্রেইল ধরে আমরা হাটতে থাকি। আমরা মানে আমি, সেরীন, নাজমা কাজী ও মহিউদ্দিন কাজী (খসরু ভাই) এবং ফারহানা আজিম শিউলি।
 
রাতের গভীর অন্ধকার আর নিস্তব্ধতায় এই ট্রেইল ধরে হাটাও যেনো ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।
ভুল বললাম, ট্রেইলটা আসলে নিস্তব্ধ নয়। জোছনা কী আজ লেক অন্টারিওকে খুব বেশি টালমাটাল করে দিয়েছে! না কি দিন পেরিয়ে যাবার পর ‘অনাহুত’ অতিথির উপস্থিতি তার মনে ‘বিরক্তি’ তৈরি করেছে!

লেকটার বুকের ভেতর উথাল পাতাল করা ঢেউ এসে আছড়ে আছড়ে পরছে ট্রেইলটার পায়ের কাছে। ট্রেইলটা অতিক্রম করতে পারলেই বিশাল সবুজ অরণ্য। ঢেউগুলো কী তা হলে সবুজ প্রকৃতিতে নিজেকে মিশেয়ে দিতে চায়? কে জানে!
 
ট্রেইল ধরে আমরা হাটতে থাকি, মাথার উপর ‘আকাশ ভাঙা’ জোছনা, লেকের বুক চিরে ভেসে আসা একটা হাহাকার, আর ট্রেইলের পায়ের কাছে আছড়ে পরা ঢেউয়ের শব্দ, টানা ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। এর ভেতর দিয়ে আমরা হাটতে থাকি, হাটতে থাকি, কাছাকাছি মানুষের কোনো শব্দ পাওয়া যায় না, ট্রেইলের পাশের গভীর অরণ্য থেকে হঠাৎ হঠাৎ দু একটা পাখি ডানা ঝাপটে তাদের ‘রাজত্বে’ ঢুকে পরার বিরুক্তি ছুড়ে দিচ্ছে কেবল।

আরও পড়ুন:

চীনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮

টি-স্পোর্টসে আজকের খেলা

সিরাজগঞ্জে তিন দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু

চীনে গুদামে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৪

মাথার উপর ভরা পূর্ণিমার চাঁদটা তখনো অকৃপণভাবে লেক অন্টারিওর বুকে আলোর শিখা ঢেলে দেয়ায় ব্যস্ত। কাছাকাছি থাকা শুকতারাটা যেনো প্রতিযোগিতা করে করে তার দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা করছে।
  
ঘরির কাঁটা ততক্ষণে ডানদিকে হেলে পরার উপক্রম হয়েছে সেদিকে কারোই  খেয়াল ছিলো না। উপচে পরা জোছনায় ভিজতে ভিজতে লেক অন্টারিওর গহীন থেকে উঠে আসা অসাধারন সুরের মূর্চ্ছনা আর  অরণ্যের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে  বিহ্বল আমরা তখনো  চার  কিলোমিটার দৈর্ঘের ওয়াটার ফ্রন্ট  ট্রেইল ধরে হাঁটতে থাকি,হাঁটতে থাকি, হাঁটতে থাকি।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv রিমু 

 

এই রকম আরও টপিক