বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখতে অরল্যান্ডোমুখী মানুষের ঢল

১০ মে, ২০১৮ আকাশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

ক্ষণগণনা শুরু

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখতে অরল্যান্ডোমুখী মানুষের ঢল

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। শুরু হয়ে গেছে ক্ষণ গণনা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশের প্রথম এই কৃত্রিম উপগ্রহ। এমন ঘটনার সাক্ষী হতে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসাচুসেটস, জর্জিয়াসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে শত শত বাংলাদেশি এখন অরল্যান্ডোমুখী।

বাংলাদেশিদের পদচারণায় উৎসবমুখর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি, কোকোয়া বিচ ও অরল্যান্ডো এলাকা।  

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ যান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স-এর মিডিয়া বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে মহাকাশে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আনুষ্ঠানিক সময় ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) প্রস্তুত।

ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লোরিডা ছুটে গেছেন ৩০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ ও ইমরান আহমেদ, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ অন্যরা।

সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। কারণ বাংলাদেশিদের কাছে এতদিন যা ছিল স্বপ্ন, এখন তা বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফ্লোরিডা যাওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ফ্লোরিডার কোকোয়া বিচসংলগ্ন একটি হোটেলে উঠেছেন।
 
ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান উৎসবমুখর করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলের নেতাকর্মীরা এরইমধ্যে ফ্লোরিডা যেতে শুরু করেছেন। শুধু দলের নেতা-কর্মীরাই নন, এই অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণে ফ্লোরিডাগামী হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ইতোধ্যে ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাজ আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, কার্যকরী সদস্য শাহানারা রহমান, মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুন্নবী বাকীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।  
 
সিদ্দিকুর রহমান জানান, ১০ মে‘র অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখতে  পুরো দিনটি ঘিরে ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে কেনেডি স্পেস সেন্টারের আশপাশে নেতাকর্মীরা আনন্দ র‌্যালি বের করবে। সন্ধ্যার পর থেকে ফ্লোরিডার আকাশজুড়ে আতশবাজির ঝলকানি দেখা যাবে। ৯ মে থেকে কেনেডি স্পেস সেন্টারের পার্শ্ববর্তী কোকোয়া বিচের অধিকাংশ হোটেলে রুম খালি নেই। অভ্যন্তরীণ এয়ার লাইন্সগুলোতেও আসন মিলছে না।  
 
এদিকে উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানের পরের দিন কোকোয়া বিচ হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস। সজীব ওয়াজেদ জয় ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে গেলে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের যেমন অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।

নাসার শিডিউল অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে নিউইয়র্ক ও ঢাকা থেকে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা নাসার গবেষণাস্থল কেনেডি স্পেস সেন্টারে প্রবেশ করতে পারবেন। নাসার কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ৭টা থেকে।

নাসা সূত্রে জানা গেছে, শুধু সরকারের প্রতিনিধিদলের সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা খুব কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্যও কেনেডি স্পেস সেন্টারে আলাদা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা দলের নেতাকর্মীদের জন্য কেনেডি স্পেস সেন্টারের আশপাশে খোলা প্রান্তর থেকে উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকবে।
 
স্পেস এক্স-এর উৎক্ষেপণযান বা রকেট ফ্যালকন-৯ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে মহাকাশে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত অরবিট প্লটে স্থাপন করবে। ফ্রান্সের কান টুলুজ ফ্যাসিলিটিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ইতোমধ্যে ফ্রান্স থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো বিমানে করে উৎক্ষেপণস্থল ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ক্যাপ ক্যানাভেরালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে।  
 
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইনান্সিং-এর মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাথমিক এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণ কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এটি পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যত্রম সম্পাদনের জন্য সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।
 
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এরমধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা আয় সম্ভব। এছাড়া নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকায় বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে। টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-গবেষণা, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।  
 
বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট সংস্থা বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যয় করছে বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যাত্রা শুরু করলে এই বিপুল অর্থ দেশেই থেকে যাবে।

সম্পর্কিত খবর