ছোটবেলায় যখন আমি জেনেছি কীভাবে গাছ আমাদের জন্য অক্সিজেন তৈরি করে। তখন আমি বাতাসে সেই অক্সিজেন খুঁজতাম। গাছের পাতায় হাত দিয়ে দেখতাম আমাদের নিঃশ্বাসের মতো গাছের শ্বাস দিয়ে অক্সিজেন বের হচ্ছে কিনা? আমার মনের চোখে, আমি দেখতাম এক অরণ্য প্লাবিত করা বৃষ্টিপাত থেকে গাছের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস চলছে। আর সেই নিঃশ্বাস প্রশ্বাস থেকে সমুদ্রের পানির মতো অক্সিজেনের বিশাল ঢেউ উঠছে।
অথচ, বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজন বিশ্বের ছয় শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বাকী অক্সিজেন কোথায় থেকে আসে?
অবাক বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর বেশিরভাগ অক্সিজেন গাছ থেকে আসে না। ৫০-৮০% অক্সিজেন আসে মূলত সমুদ্র শৈবাল থেকে।
যেহেতু পৃথিবীর প্রায় ৭১ শতাংশ জলভূমি, তাই এটি যুক্তিসঙ্গত যে সূর্য জমির চেয়ে পানিতে বেশি কিরণ ছড়ায়।
সমুদ্রের এই শেত্তলাগুলো প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করে, কারণ সমুদ্রের অনেক অংশ জুড়ে এর প্রচুর পরিমাণে এই শৈবাল ছড়িয়ে থাকে। সমুদ্র শৈবাল অবশ্য সমুদ্রের প্রাণীর এক বিরাট অংশের জীবনের প্রাথমিক খাদ্য উৎস হিসেবেও কাজ করে।
অবশ্য এই শৈবাল সমুহের একটা স্টার অক্সিজেন উৎপাদক আছে প্রকলোরোক্কাস নামে এককোষী শৈবাল, যা বিশ্বের প্রায় ২০% অক্সিজেন তৈরি করে। তার মানে আমাজন রেইন ফরেস্টের উৎপাদিত এক্সিজেনের তিন গুণ অক্সিজেন প্রকলোরোক্কাস একাই তৈরি করে।
তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো সমুদ্র শৈবালের উত্পাদিত এই অক্সিজেনের উল্লেখযোগ্য অংশ সরাসরি আমাদের বায়ুমণ্ডলে যায় না, তবে মহাসাগরের পানিতে শোষিত হয়ে থাকে। এই পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থেকেই মাছেরা নিঃশ্বাস নেয়।
শৈবাল দীঘিকে নাকি এক ফোটা শিশির দেওয়ার জন্য মাথা উচু করে গর্ব করে বলেছিলো, লিখে রাখতে। আহারে আমাদের কবিকুল। এই শৈবালের দয়ায় যে তার নিঃশ্বাসের ৮০% ভাগ অক্সিজেন আসতো সেটা যদি আমাদের কবি সেই সময়ে জানতেন তাহলে কি তিনি সেই শৈবালকে এতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন?
খেয়াল করে দেখবেন আমাদের সংস্কৃতিতে, সাহিত্যে ক্ষুদ্র জিনিসকে তুচ্ছ করার এক অদ্ভুত প্রবণতা আছে।
(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )
আরও পড়ুন:
এটাই ব্রুস লী আর কুং ফুর দর্শন
ডিএমপির ৯ পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন
ফুলবাড়িয়ায় হাতকড়াসহ পালানো আসামি সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার
পিরোজপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২