বুদ্ধিবাজি বা বৌদ্ধিক মাস্তানি

বুদ্ধিবাজি বা বৌদ্ধিক মাস্তানি

Other

অনেক দিন আগের কথা। সন-তারিখ ঠিক মনে নেই। যে-সে যেন-তেনভাবে কবিতা লিখছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক সাক্ষাৎকারে কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, খারাপ কী? মাস্তানি তো আর করছে না, কবিতা লিখছে। এটা তো ভালো।

কথাগুলো হুবহু মনে নেই। তবে মূলভাবটা এমনই ছিল।

হালে ফেসবুকে মেলা যুবকের হরেদরে বুদ্ধিজীবিতা প্রসঙ্গে কথাগুলো মনে এল। এখন যদি তিনি বেঁচে থাকতেন এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি হয়ত বলতেন, মন্দ কী? এরা তো আর টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি করছে না, বুদ্ধিজীবিতা করছে।

এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত।

আমিও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। কিন্তু বিষয়টি স্রেফ বুদ্ধিজীবিতা হলে সমস্যা ছিল না। এটি সাম্প্রতিক সময়ে বুদ্ধিবাজি বা বৌদ্ধিক মাস্তানিতে রূপ নিচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আশির দশকেও সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে এরকম কিছু সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক মাস্তানের উদ্ভব হয়েছিল।

এখনও দেখতে পাচ্ছি, বুদ্ধিজীবিতা করতে এসে, বলা যায় ফলাতে এসে কিছু তরুণ শাণিত বুদ্ধি বা মেধা প্রদর্শনের বদলে অথবা পাশাপাশি নানাভাবে তাদের পেশি প্রদর্শনেও পিছপা হচ্ছেন না। এটি সুলক্ষণ বলে মনে হচ্ছে না। বৌদ্ধিক মাস্তানি আর যা-ই হোক বুদ্ধিজীবিতার উদ্দেশ্য সাধনের কার্যকর পন্থা নয়।

বুদ্ধির লড়াইয়ে আপনি যখন মাথা গরম করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা, তুই-তুকারি, গালি-গালাজ, নানা উদ্দেশ্যমূলক ট্যাগিং ব্যবহার করবেন, তখন বোঝা যাবে, আপনার ঘটে বুদ্ধি ফুরিয়ে এসেছে। আপনি বুদ্ধিতে হেরে গেছেন, যা আপনি মনে মনে মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু এ হার আপনার হজম হচ্ছে না বিধায় আপনি দুর্বলের মনস্তত্ত্ব প্রকাশ করে বেহুদা আস্ফালন করছেন।

আরও পড়ুন


বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ৩০০ পরিবারের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ

সানিয়া যে একা ছিলেন এমন না, ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা

এবার কঙ্গনাকে কড়া বার্তা দিলেন আদালত

করোনায় ইন্দোনেশিয়ায় রেকর্ড মৃত্যু, শনাক্ত ৪৫ হাজারের বেশি


বুদ্ধিজীবিতা করতে নেমে শরীরে কুস্তিগিরের জোশ ললান করে দাঁত-মুখ খিঁচে পেশি ফুলালে কি চলে? হতে পারে আপনার শরীরে তাকত আছে। কিন্তু মনে রখতে হবে আপনি নেমেছেন মগজের তাকত দেখাতে। মেধা-মনন সবসময় পেশিশক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই মেধায় শান দেওয়া খুব জরুরি।

যথাযথ জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রস্তুতি ছাড়া বুদ্ধিজীবিতা করতে নামলে আপনার শেষ পর্যন্ত মাস্তানির পথ অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই। একথা কম-বেশি সবাই জানেন, হয়ত আপনিও কম জানেন না। তাই বাধ্য হয়েই হয়ত এ পথ বেছে নিচ্ছেন। তা মানলাম। কিন্তু আপনি অপনার বৌদ্ধিক পরাজয় মেনে নিতে প্রস্তুত তো? পরাজয় কিন্তু আপনাকে অপ্রস্তুত করে দিতে সময় নেবে না!

news24bd.tv এসএম

সম্পর্কিত খবর