অ্যালার্জির কারণ ও চিকিৎসা

অ্যালার্জির কারণ ও চিকিৎসা

অনলাইন ডেস্ক

যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের খুব সাবধানে থাকতে হয়। সামান্য এদিক–সেদিক হলেই শুরু হয়ে যায় চুলকানি, চোখ লাল, ত্বকে লালচে দানা ওঠা ইত্যাদি। অ্যালার্জি আছে এমন অনেকেরই ঘর ঝাড়ামোছা করলেই ত্বকে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। আবার কারও কারও ধুলাবালির সংস্পর্শে এলেই ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

কোনো কোনো ওষুধের অ্যালার্জিতে তো জীবন সংশয়ও দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জি বাংলাদেশের লাখো মানুষের কাছে এক অসহনীয় ব্যাধি।

অ্যালার্জি
আমাদের শরীর সবসময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ-প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এ প্রচেষ্টাকে রোগ-প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন বলে।

কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয়, এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বহিরাগত বস্তুগুলোকে অ্যালার্জি উৎপাদক বা অ্যালার্জেন বলা হয়। অ্যালার্জিজনিত সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরনের
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : সারা বছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ
সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া
নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া
চোখ দিয়ে পানি পড়া

পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলো সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলোর চেয়ে তীব্রতা কম হয় এবং স্থায়িত্বকাল বেশি হয়।

আর্টিকেরিয়া
আর্টিকেরিয়ার ফলে ত্বকে লালচে ফোলা ফোলা হয় এবং ভীষণ চুলকায়। ত্বকের গভীর স্তরে হলে মুখ, হাত-পা ফুলে যেতে পারে। আর্টিকেরিয়ার ফলে সৃষ্টি ফোলা অংশগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে; কিন্তু কখনও কখনও বারবার হয়। যেকোনো বয়সে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। তবে স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বাচ্চাদের মধ্যে এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের মধ্যে দেখা যায়।

সংস্পর্শজনিত অ্যালার্জিক ত্বক প্রদাহ
চামড়ার কোথাও কোথাও শুকনো, খসখসে, ছোট ছোট দানার মতো উঠা। বহিস্থ উপাদান বা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে ত্বকে প্রদাহ বলে তাকে অ্যালার্জিক কনট্রাক্ট ডারমাইটিস বলা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ
ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা পড়ে ফোসকাগুলো ভেঙে যায়।
চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে ত্বকের বহিরাবরণ উঠে যায়।
ত্বক লালচে হয় এবং চুলকায়; চামড়া ফেটে আঁশটে হয়

অ্যালার্জিক কনজাংটাইভাইটিস
চোখ চুলকানো ও চোখ লাল হয়ে যায়।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াজনিত অ্যালার্জি

এটি খুবই মারাত্মক। অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি শুরু হয়ে যেতে পারে। নিচে উল্লিখিত উপসর্গগুলো হতে পারে।

চামড়া লাল হয়ে ফুলে উঠে ও চুলকায়।
শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়।
মূর্ছা যেতে পারে।
রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষা : বিশেষত রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কি না তা দেখা।
সিরাম আইজিইর মাত্রা : সাধারণ অ্যালার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে আইজিইর মাত্রা বেশি থাকে।
স্কিন প্রিক টেস্ট : এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।
প্যাঁচ টেস্ট : এ পরীক্ষা রোগীর ত্বকের ওপর করা হয়।

বুকের এক্স-রে : হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই বুকের এক্স-রে করে নেওয়া দরকার; যে অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না।

স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখা : এ পরীক্ষা করে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায়।

সমন্বিতভাবে অ্যালার্জির চিকিৎসা হলো
অ্যালার্জেন পরিহার : যখন অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায় অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


কিশোরকে ধর্ষণ করে অন্তঃসত্ত্বা তরুণী!

দেশে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪০ শতাংশ

মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে বাঁচার দোয়া


 

ওষুধ প্রয়োগ : অ্যালার্জিভেদে ওষুধ প্রয়োগ করে অ্যালার্জির উপশম অনেকটাই পাওয়া যায়।

অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি : অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও অ্যালার্জিজনিত রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোয় এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে অ্যালার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অবহিত করেন। এটাই অ্যালার্জিক রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।

news24bd.tv/আলী