শিক্ষিত কে?

শিক্ষিত কে?

Other

শিক্ষিত কে? যে শিখেছে বা শিক্ষা সম্পন্ন করেছে সে? না যে পড়ালেখা করেছে বা জানে সে? বাংলায় যে পড়ালেখা করেনি তাকে বোঝানোর জন্য একটি শব্দ আছে- আনপড় বা আনপড়া। হিন্দিতেও আছে শব্দটি। আগে গ্রামে-গঞ্জে এই শব্দটি বেশি ব্যবহার হত। পরে পরে অশিক্ষিত শব্দটি এর জায়গা দখল করে নিয়েছে।

আধুনিক যুগে, অক্ষর বা লিখিত শিক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার ও চালুর পর অক্ষর না চেনা বা লিখতে না পারা মানুষদের নিরক্ষর বলার চল হয়েছে। তবে অশিক্ষিতই বলা হয় বেশি। ‘শিক্ষা’ প্রসারের সাথে স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের আমরা তাচ্ছিল্য ভরে অশিক্ষিত বলে তৃপ্তি বোধ করি।

প্রশ্ন হলো এর আগে কি সব মানুষ অশিক্ষিত ছিল? নিশ্চিয়ই না।

তবে তারা আনপড় ছিলো। মানুষ জন্মের পর থেকেই, এমনকি মায়ের পেটে থাকতেই শিখতে শুরু করে। এটা বৈজ্ঞনিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর আমৃতু সে শিখতে থাকে। কাজেই কোনো মানুষকে সত্যিকার অর্থে অশিক্ষিত বলার কোনো সুযাগ নাই।

আনপড় হলেই বা পড়ালেখা না জানলেই মানুষ অশিক্ষিত হয় না, অজ্ঞানীও হয় না। জানাশোনার মাধ্যমে পরোক্ষ পাঠ, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়, সর্বোপরি ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা’ মানুষকে শিক্ষিত ও জ্ঞানী করে তুলতে কার্পণ্য করে না।

আবার পড়ালেখা জানলেই মানুষ জ্ঞানী হয় না। শুধু তাই নয়, নামে হলেও সত্যিকার শিক্ষিতও হয় না। তবু বারবার হতাশ হওয়ার পরও কেন জানি আমরা শিক্ষিত নামধারী হলেই তার কাছ থেকে শিক্ষা ও জ্ঞান লাভের মিছে আশা করা থেকে বিরত হতে পারি না।

পড়ালেখা একটা বিদ্যা মাত্র। আর দশটা বিদ্যার মতোই। যেমন, চুলকাটা বিদ্যা, জুতা সেলাই বিদ্যা, রিকশা চালানো বিদ্যা, আসবাবপত্র বানানোর বিদ্যা আরও কত কী! আর ঠিক মতো পড়ালেখা না করে বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করলে শিক্ষা দূরে থাক বিদ্যাই আয়ত্ত হয় না।

তবে হ্যাঁ, পড়ালেখা জানলেই কেউ জ্ঞানী না হলেও তার জন্য হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। জ্ঞানী হওয়ার পথ খুলে যায় পড়ালেখা জানা মানুষের সামনে। কিন্তু এ পথে জ্ঞান লাভ করতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং পরিশেষে সফল হয় এমন মানুষের সংখ্যা সবসময়ই বিরল।

মনে রাখা দরকার সনদধারী হলেই কাউকে ভাল মানের পড়ালেখা জানা মানুষ বলে মনে করারও কোনো কারণ নেই, শিক্ষিত বা জ্ঞানী হওয়া তো নয়ই। কেননা সনদের শ্রেণি এবং তা লাভ করার উপায় সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি।

পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস, চুরি বা নকল করে অথবা বেঞ্চের ওপর পিস্তল রেখে বই দেখে লেখা, পরীক্ষার পর ঘরে বসে উত্তরপত্র লেখা এবং টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কেনা এ রকম বেশ কিছু পদ্ধতিতে পরীক্ষা পাসের বা শিক্ষিতের সনদ লাভের বিষয় ভুলে থাকলেই তো আর এসব মিথ্যা হয়ে যায় না!

শিখতে গিয়ে ভুল বা উল্টা শেখা মানুষের সংখ্যাও সমাজে একেবারে কম নয়। এ ছাড়া শিক্ষার অপব্যবহার তো আছেই। খেয়াল করলে দেখা যাবে মানুষ সুযোগ পেলে শিক্ষার অপব্যবহার করতে কসুর করে না। নীতি-নৈতিকতাহীন মানুষ শিক্ষার ব্যবহার নয়, অপব্যবহার করতেই আগ্রহী হয় বেশি।

আমরা দীর্ঘদিন থেকে সনদের ভারবাহী কিংবা গলায় সনদের ট্যাগ ঝুলিয়ে রাখা লোকদেরই কেবল শিক্ষিত বলার যে রেওয়াজ চালু করেছি তাতে করে শিক্ষিত নামধারী মূর্খরা যে সমাজের বিশাল ক্ষতি করে যাচ্ছে তা বুঝতে তো নিশ্চয়ই জ্ঞানী বা শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

আরও পড়ুন:


ঝিনাইদহে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে বাইরে মানুষ

ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন


 news24bd.tv তৌহিদ