পৃথিবী-মানবজাতি রক্ষায় সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে ভাবার বিকল্প নেই

শান্তা আনোয়ার

পৃথিবী-মানবজাতি রক্ষায় সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে ভাবার বিকল্প নেই

Other

১৯৭২ সালে, এমআইটি থেকে বিজ্ঞানীদের একটি দল ক্লাব অফ রোম নামের একটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী নেতা এবং রাজনীতিবিদদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পরে মানবজাতির ভবিষ্যত কেমন হতে যাচ্ছে তা জানার জন্য একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার গবেষণা করেছিল।   

জনসংখ্যা, শিল্প উৎপাদন ও খাদ্য উৎপাদন দূষণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে জটিল মিথস্ক্রিয়াগুলি থেকে এই গবেষণার ভবিষৎবাণী করা হয়েছিলো।  

গবেষণায় দেখা যায় যে, যাকে আমরা "স্থিতিশীল বিশ্ব" পরিস্থিতি বলি-যেখানে বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক পতন যেমন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি পতন এড়ানো এবং জীবনযাত্রার মান স্থিতিশীল রাখা তখনি সম্ভব হতে পারে, যদি সামাজিক মূল্যবোধগুলিতে অগ্রাধিকার দিয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনা হয়।  

পরিবেশকে ধ্বংস করে তথাকথিত অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে তা খাদ্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে এবং এমন সমাজ তৈরি করতে পারে যা মানব কল্যাণকে ডুবিয়ে দিতে দেবে।

 

যেই সময় এমআইটির এই গবেষণাটা প্রকাশিত হয়েছিলো তখন সেটাকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে আজকের বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দেখলে অনুধাবণ করা যায় যে এম আইটির গবেষণার ভবিষ্যদ্বাণীটি বিস্ময়করভাবে সঠিক ছিলো।

২০২০ সালের নভেম্বরে জার্নাল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোলজিতে হিসাবরক্ষণ সংস্থা কেপিএমজির পরিচালক গয়া হেরিংটন এর প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে গত কয়েক দশকের তথ্য ও উপাত্ত এম আইটির গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলকে সমর্থন করছে।   

গত কয়েক দশকের ডেটা বিশ্লেষণ করে, তিনি চারটি পৃথক সম্ভাব্য সিনারিও বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছিলেন: প্রথম দুটি সিনারিও ছিল দুটি ভিন্ন ভিন্ন “বিজনেস এজ ইউজুয়াল” পরিস্থিতি বা যেভাবে সবকিছু চলছে সেভাবেই সবকিছু চালানো, তৃতীয় পরিস্থিতি বা সিনারিও ছিল একটি "স্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতি," এবং চতুর্থ সিনারিও ছিল “কম্পরেহেন্সিভ প্রযুক্তি নির্ভর” পরিস্থিতি , যেখানে মানবিক প্রযুক্তিগত বিকাশ ব্যবহার করে উন্নয়নের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়কে মোকাবেলা করার পথকে উদ্ভাবন করতে মানবজাতি সক্ষম হয়েছে ।

 

প্রথম দুই ধরণের  “বিজনেস এজ ইউজুয়াল পরিস্থিতি” বা যেই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ছিলাম তা চললে একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে তা সামগ্রিক বৈশ্বিক পতনের সূত্রপাত করবে বলে দেখা গিয়েছিল।  

প্রথম দুইটা সিনারিওর একটি সিনারিওতে প্রাকৃতিক সম্পদ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার কারণে এবং দ্বিতীয় সিনারিওতে দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কম্প্রিহেন্সিভ প্রযুক্তি পরিস্থিতি যা পরিবেশগত বিপর্যর মোকাবেলায় সক্ষম ছিলো তা একবিংশ শতাব্দীর পুরোটায় তার পতন এড়াতে সক্ষম হয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এই গবেষণার মানবকল্যাণ হ্রাস পেয়েছিল।

আরও পড়ুন:


হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হচ্ছে

মেঘনায় ট্রলার ডুবে জেলের মৃত্যু, জীবিত উদ্ধার ১১

পর্যটকদের জন্য খুলছে সৌদির দরজা

বগুড়ার গাবতলীতে ৩০০ পরিবারের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ বিতরণ


স্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতি সিনারিওতে, যেখানে বিশ্ব নাটকীয়ভাবে সামাজিক মূল্যবোধ এবং অগ্রাধিকারগুলি পরিবর্তন করেছে, সেই মডেল বা সিনারিও অনুসারে একবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মানুষের জনসংখ্যা স্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল এবং জীবনযাত্রার মান বজায় ছিল।

পৃথিবী রক্ষায়, মানবজাতিকে রক্ষায় আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন করে ভাবার কোন বিকল্প নাই।

news24bd.tv নাজিম