সেপারেটেড অথবা বিধবা যেকোনো মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে এ সমাজ সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ফেলেছে

এমি জান্নাত

সেপারেটেড অথবা বিধবা যেকোনো মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে এ সমাজ সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ফেলেছে

Other

‘সিঙ্গেল মাদার’ টার্মটার সাথে বেশ কবছর আগেও আমরা খুব বেশি পরিচিত ছিলাম না। তবে এখন শিক্ষিত মহলের আলোচনা সমালোচনার কল্যাণে আমরা এটার সাথে বেশ পরিচিত। যতটা না এই টার্মটার সাথে তার থেকেও বেশি পরিচিত কে, কেন, কীভাবে, কোথায় সেসবের নেপথ্যের গল্পের সাথে!

সত্যিই একজন সিঙ্গেল মাদার হওয়ার নেপথ্যে অনেক কথা থাকে, গল্প থাকে। একজন মা যখন তার সন্তানকে নিয়ে হাজবেন্ড এর থেকে আলাদা থাকেন, (এক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যেকেউই একে অপরকে ছেড়ে যাক না কেন), বা ডিভোর্স এর পর সন্তানকে নিয়ে একা বাঁচেন তাদেরই আমরা ‘সিঙ্গেল মাদার’ বলি।

শিশু সন্তান হলে আইনগতভাবে এবং মানবিকতার চর্চায় সে মায়ের কাছেই থাকে বলেই তারা ‘সিঙ্গেল মাদার’।

প্রথমত এইটুকুতে সবার বোধগম্য হওয়ার কথা যে কেউ শখ করে খুশির ঠেলায় এই জীবনটা বেছে নেয় না। কারণ যে স্ট্যাটাস থেকেই কেউ এটা করে থাক না কেন, সেই স্ট্যাটাস অনুযায়ী তার গায়ে নানা রকম তকমা লাগানো হয়।  

যেমন ডিভোর্স হইছে, ভালো মেয়েরা আবার ঘর ভাঙে নাকি! বাচ্চাটাকেও অকূল পাথারে ফেলছে, আবার চাকুরীজীবি হলে দেমাগ দেখায়, টাকার গরমে মাটিতে পা পরে না! আর যদি স্বামী মৃত হয় তো এখনো সমাজের কিছু শ্রেণী তাকে অলক্ষুণে, অপয়া এইসব কিছু বিশেষণ লাগায় দিবে।

আর সেপারেটেড বা ডিভোর্সি অথবা বিধবা যেকোনো মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে এ সমাজ সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ফেলেছে বহুকাল আগেই। তার ধারাবাহিকতা পরিবর্তিত রুপ নিয়ে কত যুগ চলবে জানা নেই!

এবার একটু বলে নেই, অনেক স্ত্রী স্বামীর সাথে বনিবনা না হলেও নানা ঘাত প্রতিঘাত কম্প্রোমাইজ করে সংসার নামক ঘরে থাকে। কারণটা শুধুই সন্তানকে বাবা-মায়ের আলাদা থাকার চিহ্নিত কিছু প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু যখন একজন মা দেখে একসাথে থাকতে গিয়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর বিরুপ প্রভাবে সন্তানের ভালোর চাইতে খারাপটা বেশি হতে যাচ্ছে, মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পরছে, সেসময় যদি সন্তানকে নিয়ে একা বাঁচার একটু অবলম্বন আর মনের জোর থাকে, তখনই এই কঠিন সিদ্ধান্ত একজন মা নিতে পারেন।  

আর হাজবেন্ড মারা গেলে তো তার জীবন আরও ফ্যাকাসে বানাতে হবে তাইনা! চাকরি করতে গেলে সে যে পেশাই হোক, সাজগোজ তো করা যাবেই না! হায় হায়! এর আবার রঙিন পোশাক পরা সাজে নাকি! বাচ্চার জন্য চাকরি করছে করুক। রং-ঢং এর কী দরকার! আর কাজে উন্নতি করলে সাথে যদি দেখতে একটু সুন্দর হয়, তাইলে আর পায় কে! আর কোনো যোগ্যতার দরকারই পরে না! ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা, সার্টিফিকেট, কোয়ালিটি সব চুলোয় যাক! 

সময় একেবারেই বদলায়নি বলছি না। এখন একা মায়েরা অনেককিছু করতে পারেন। শত কটূক্তির কাঁটায় হাঁটতে হাঁটতে নিজের লক্ষ্যে এগোতে পারেন মনের জোরে আর কিছু পাশে থাকা উদ্যম বাড়িয়ে তোলার মতো মানুষকে সাথে নিয়ে।  

শুধু প্রকৃত সংখ্যাটা এখনো বড্ড কম! আসলে আধুনিকায়নের এসময়েও আমরা ঠিক কতটা নিজেদের মানসিকতা বদলাতে পেরেছি? যেখানে এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন সিঙ্গেল মাদারের যুদ্ধটাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়না। তার প্রতিটি চলার পথকে রোধ করার চেষ্টা করা হয় নানান দিক থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্যাণে তাকে নিয়ে নেতিবাচক কমেন্ট করার প্রসার হয়েছে বেশ! একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে একধাপ এগিয়ে দিলে দুজন কথা বা কাজের মাধ্যমে দুধাপ পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় থাকে।

আরও পড়ুন:


বিধিনিষেধ শিথিল হলেও যা বন্ধ থাকছে

যে বিষয়ে কথা বলতে ইসরাইল সফরে গেলেন সিআইএ প্রধান

নব্য জেএমবির বোমা প্রস্তুতকারক আটক

মুমিনের মৃত্যুকষ্ট কেন হয়?


বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়েরা সিঙ্গেল হয় নিজের আত্বসম্মান রক্ষা করতে, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, বাধ্য হয়ে অথবা ভাগ্যের নির্মমতায়! তাই তাদের সম্মান করার মানসিকতা পোষণ করতে যদি একান্তই ভার মনে হয়, অন্তত অসম্মান করে তার চলার পথটাকে রুখতে চেষ্টা না করি! এত সংগ্রামেও একটু না হয় মসৃণ হোক সকল "সিঙ্গেল মাদার" এর জীবন। আর স্যালুট জানিয়ে সেই মায়েদের বলছি- Be bold, don't care & go ahead. 

এমি জান্নাত,সংবাদকর্মী

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম