সাড়ে চার হাজার বছর আগেও ছিল প্রাণঘাতি হেপাটাইটিস-বি

সংগৃহীত ছবি

সাড়ে চার হাজার বছর আগেও ছিল প্রাণঘাতি হেপাটাইটিস-বি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লিভারের রোগে প্রতি বছর বিশ্বে মারা যায় লাখো মানুষ। শুনলে অবাক হবেন, প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল সেই ব্রোঞ্জ যুগেও। সম্প্রতি গবেষণায় সাড়ে চার হাজার বছর আগের একটি কঙ্কালে পাওয়া গেছে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, যাকে মানব শরীরে বসবাসকারী প্রাচীনতম ভাইরাসের নমূনা বলে ধরা হচ্ছে।

হেপাটাইটিস-বি এমনই এক ভাইরাস যা মানুষের লিভারকে পুরোপুরি অকার্যকর করে দেয়।

সাধারণত এটা আমাদের কাছে জন্ডিস বলে পরিচিত। হেপাটাইটিস-বি প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভারকে আক্রমণ করে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) এর আক্রমণে এ রোগ হয়। অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
তবে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত এই লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং কদাচিৎ লক্ষ্মণ প্রকাশ পাওয়ার পর পরিশেষে মৃত্যু হয়।

সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে। জন্মের সময় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রায় ৯০ভাগ ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি -তে আক্রান্ত হন, যেখানে ৫ বছর বয়সের পর আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ১০ ভাগেরও কম এতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি -তে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই কোন প্রাথমিক লক্ষণ থাকে না। যদিও এক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে সিরোসিস এবং যকৃতের ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

ভাইরাসটি রক্ত কিংবা দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। যে সব জায়গায় এ রোগের প্রকোপ বেশি সেখানে সাধারণত শিশুর জন্মের সময় কিংবা শৈশবে অন্য আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে এ রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। কিন্তু যে সব জায়গায় এ রোগের প্রকোপ কম সেখানে শিরায় মাদক দ্রব্যের ব্যবহার এবং অরক্ষিত যৌনমিলন এ রোগের প্রধান কারণ। এছাড়াও রক্ত আদান-প্রদান, ডায়ালাইসিস, আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস, সংক্রমণের হার বেশি এমন স্থানে ভ্রমণ প্রভৃতি মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায়। ১৯৮০ সালের দিকে ট্যাটু এবং আকুপাংচারের মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন। হাত ধরা, খাবারের তৈজসপত্র শেয়ার করা, চুম্বন, কোলাকুলি করা, হাঁচি-কাশি, কিংবা মাতৃদুগ্ধপানের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না। সংক্রমণের পর ৩০ থেকে ৬০ দিন পর এ রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। এটি পরিচিত পাঁচটি হেপাটাইটিস ভাইরাসের (এ, বি, সি, ডি, এবং ই) মধ্যে অন্যতম একটি।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়েছে মঙ্গোলিয়ার একটি গণকবর থেকে। তারা মনে করছেন, প্রাচীনকাল থেকেই এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। পরবর্তীকালে বিবর্তনের মাধ্যমে এই ভাইরাস বিস্তার লাভ করে। বর্তমান হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জীবাণু বিবর্তনেরই ফসল।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েল গবেষক ডা.টেরি জন জানান, বেশির ভাগ সময় বিজ্ঞানীরা নতুন প্রজাতির ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করে। যার কারণে প্রাচীন ভাইরাস সম্পর্কে গবেষকরা অনেকটাই অন্ধকারের মধ্যে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর যে ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর কোটি মানুষ লিভারের রোগে আক্রান্ত হন, লিভার সিরোসিসের মতো প্রাণঘাতি রোগে মৃত্যুবরণ করেন, সেই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল আজ থেকে হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগে।

গবেষণাটির আগে চার শত পঞ্চাশ বছর পূর্বের ভাইরাস শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা।

বর্তমানে হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ২০১৫ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই শত ৫৭ মিলিয়ন মানুষ। এতে মারা যায় আট লাখ সাতাশি হাজার মানুষ।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক বারবারা মহলেমান জানান, আমরা দশকের পর দশক ধরে চেষ্টা করছি হেপাটাইটিস ভাইরাস সম্পর্কে জানতে। ব্র্রোঞ্জ যুগের কঙ্কালটি থেকে পাওয়া ভাইরাস আমাদেরকে নতুন করে জানতে সাহায্য করবে।

প্রাণঘাতি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই এই ভাইরাসের টিকা নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সূত্র: ডেইলি মিরর, উইকিপিডিয়া।

নিউজ টোয়েন্টিফোর/এএস

সম্পর্কিত খবর