আমরা কীভাবে নির্ধারণ করতে পারি কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক?

আমরা কীভাবে নির্ধারণ করতে পারি কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক?

Other

দর্শনশাস্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি হল, আমরা কিভাবে নির্ধারণ করতে পারি কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক অর্থাৎ কোন পথটা নৈতিকভাবে সঠিক তা বের করতে পারি। এই নৈতিক ডিলেমা বা দ্বিধার জটিল অবস্থা বুঝানোর জন্য দর্শন শাস্ত্রে একটি ক্লাসিক ব্যাখ্যা আছে তার নাম "ট্রলি প্রব্লেম”।

ট্রলি প্রব্লেম বিষয়টা এমন, ধরেন একটি ট্রলি একটি রেললাইন দিয়ে একটা দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেই দিকে পাঁচজন শ্রমিক রেললাইনের উপরে কাজ করছে। তাদের রেল লাইন ছেড়ে যাওয়ার কোন উপায় নাই।

তাই যদি ট্রলি তাদের ধাক্কা দেয়, তবে তারা মারা যাবে। আবার ট্রলিটাকে আরেক ডাইভারশনে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু ওই লাইনেও একজন শ্রমিক কাজ করছে এবং সেও সরতে পারবে না, ট্রলি ধাক্কা দিলে সে মারা যাবে। আপনি সেই কন্ট্রোলটার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যেইখানে আপনি ট্রলিটাকে থামাতে পারবেন না কিন্তু  ট্রলিটাকে যেকোন একদিকে ডাইভার্ট করতে পারবেন।
এতে হয় পাঁচজন মারা যাবে বা একজন মারা যাবে। আপনি একজনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে পাঁচজনকে বাঁচাতে পারেন।  

আপনি কী করবেন? ৯৫% মানুষ একজনকে মেরে পাঁচজনকে বাঁচাবে। এবং এটাই সঠিক বলে তারা মনে করে। এটাই ইউটিলিটারিয়ানিজমের ভিত্তি। যাকে আমরা গণতন্ত্র বলে জানি। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভালোর জন্য প্রয়োজনে সংখ্যালঘুকে বলি দেয়া যেতে পারে।

এই ট্রলি সমস্যাকে আরেকটু জটিল করে পরে উপস্থাপন করা হয়েছে। ধরা যাক লাইন একটাই, সেই লাইন ধরে ট্রলি এগুচ্ছে আর লাইনে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছে আগের মতোই। ট্রলিটা তাদের ধাক্কা দিলে তারা মারা যাবে তাদের সরে যাওয়ার কোন উপায় নাই। আর ট্রলিটা একটা আন্ডারগ্রাউন্ডে টানেলের মধ্যে দিয়ে যাবে। সেই টানেলের উপর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এবং আপনার সাথে একটা খুব মোটা মানুষ আছে। এখন যদি ওই মোটা মানুষটাকে রেল লাইনের উপরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া যায় তবে ট্রেনটা থেমে যাবে। সেই পাঁচজন শ্রমিক রক্ষা পাবে ঠিকই কিন্তু মোটা লোকটা মারা যাবে। দুই ক্ষেত্রে ফলাফল একই।

একজনের মৃত্যুর বদলে পাঁচজনের জীবন রক্ষা। অবাক বিষয় এই ক্ষেত্রে মাত্র ১০% মানুষ ওই লোকটাকে রেল লাইনের উপরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়াটাকেই সঠিক বলে মনে করলো। কেন? কারণ, কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়াটা আর লিভার টান দিয়ে ট্রেনের লাইন ডাইভার্ট করে দেয়া এক ধরণের কাজ না।

ট্রলির লাইন ডাইভার্ট করে দেয়াটা গ্রেইটার নাম্বারের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য একটা কো ল্যাটারাল ড্যামেজ। আর ধাক্কা দিয়ে লাইনে ফেলে দেয়াটা একটা ডেলিবারেট এক্ট অফ কিলিং। এইটা মানুষ মেনে নিতে পারেনা। এইটা কেন হয় তা আমরা জানিনা। এইখানেই এথিক্স আর পাইকোলজি এক জায়গায় এসে কনফ্লিক্টিং সিচুয়েশনের মুখোমুখি হয়। আমরা কোনটাকে সঠিক বলে গ্রহণ করবো সেটা শুধু পক্ষে আর বিপক্ষের যুক্তির উপরে নির্ভর করেনা।

ট্রলি প্রব্লেমের দুই ভার্শনের সিদ্ধান্ত আমাদের ব্রেনের যেই জায়গা থেকে নির্ধারিত হয় সেইখান থেকেই আমাদের ইমোশন্যাল রেস্পন্স আর সচেতন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে, মোটা মানুষকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার সিনারিওতে আমাদের ইমোশন্যাল রেস্পন্স থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। আর আগের সিনারিওতে আমাদের সচেতন সিদ্ধান্ত নেবার জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই।

আরও পড়ুন


মাদারীপুরে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে বাদি জেল হাজতে

কিয়ারা আদভানি রূপের রহস্য কি?

বরিশালে আওয়ামী লীগ-পুলিশ সংঘর্ষ: কয়েকশ’ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১২

হেফাজত আমির কে এই জুনায়েদ বাবুনগরী?


এই ট্রলি প্রব্লেমকে অনেক সাইকোলজিস্ট এবং দার্শনিকই বলেছেন, এটা একটা অলীক পরীক্ষা। এমন ঘটনা যেহেতু কখনো ঘটবে না, তাই যাদের দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তারা সিরিয়াসলি উত্তর দেয়নি। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই এই ট্রলি প্রব্লেমের মুখোমুখি হই। খেয়াল করে দেখুন।

রাস্তায় মানুষ বাঁচাতে গিয়ে কুকুর চাপা দেই। মিলিটারি ড্রোন গুলোকেও এইভাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে এথিক্যাল ডিসিশন নিতে শেখানো হয়েছে। হাই ভ্যালু মিলিটারি টার্গেটে আঘাত করার জন্য যদি কিছু সিভিলিয়াল মারাও যায় তাহলে ড্রোন বোমা ফেলে। তাই হাই ভ্যালু মিলিটারি টার্গেট সিভিলিয়াল শিল্ডের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আর ড্রোন সেইখানে বোমা ফেলে নিরীহ মানুষ মারে।  

আমরা বিস্মিত হই! কিন্তু ড্রোন আর ইউটিলিটারিয়ানিজম কোথায় এসে মিলে! কোথায় দর্শন আর মিলিটারি টেকনোলজি মিলে, সেটা খুঁজে দেখি না।

news24bd.tv এসএম