ই-অরেঞ্জের মালিকানা বদলের ‘নাটক’

ই-অরেঞ্জের মালিকানা বদলের ‘নাটক’

অনলাইন ডেস্ক

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অর্ডার নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস তাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে। ই-অরেঞ্জ তাদের পণ্য ডেলিভারি অথবা অর্থ ফেরত দিচ্ছে না। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরই মালিক সোনিয়া মেহজাবিন নিজস্ব লোকের মাধ্যমে মালিকানা বদল করে সবার চোখে ধুলা দিতে চেয়েছেন।

 

দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ গ্রাহকদের সঙ্গে ই-অরেঞ্জের প্রতারণা নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।  

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এক হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে সোনিয়া ও তার স্বামী দাবি করেন, তারা এখন প্রতিষ্ঠানটির মালিক নন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এই মালিকানা বদল হয়েছে।

কালের কণ্ঠ জানিয়েছে, মালিকানা বদলের কথা বলা হলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র ও নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা।

 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নির্ভরযোগ্য সূত্র ও নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ই-অরেঞ্জ নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর গত ১৯ জুলাই এই মালিকানা বদলের ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে। নাজনিন নাহার বিথি নামে যার সঙ্গে মালিকানা বদল করা হয়েছে তিনি সোনিয়ার আপন ভাই ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার ঘনিষ্ঠ।  

বনানী থানায় কর্মরত সোহেল রানার সহযোগিতায় এত দিন সোনিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। ই-অরেঞ্জের কোটি টাকা তিনি ব্যাংক থেকে তুলেছেন।

গত বুধবার রাতে পুলিশ প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে ২৩ আগস্ট ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের ১৩৭ নম্বর রোডে ই-অরেঞ্জের বন্ধ অফিস ঘেরাও করার পর মঙ্গলবার এক লাখ ভুক্তভোগীর এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেছেন তাহেরুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী।  

এজাহারে অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ই-অরেঞ্জ কোম্পানির ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল। বারবার নোটিশের নামে ভুক্তভোগীদের পণ্য ডেলিভারি না করে প্রতারণা করে যাচ্ছে।  

আসামিরা হলেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, কর্মকর্তা আমান উল্লাহ, বিথী আক্তার, কাওসারসহ ই-অরেঞ্জের সব মালিক। অভিযোগে বলা হয়, করোনাকালীন ভুক্তভোগীদের কষ্টার্জিত অর্থের নিশ্চয়তা না দিয়ে ই-অরেঞ্জ তাদের মালিকানা পরিবর্তনের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। নতুন মালিক ও পুরাতন মালিকের কোনো তথ্য ভুক্তভোগীদের সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে না। আসামিরা সব ধরনের অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলা হওয়ার পর মঙ্গলবারই ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আবুবকর ছিদ্দিকের আদালতে সোনিয়া ও তার স্বামী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। সেখানে জামিন আবেদনে সোনিয়া জানুয়ারি মাস থেকে মালিক নেই বলে দাবি করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান জানান, বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের পর গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আমান উল্লাহকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিক রিমান্ড শুনানির জন্য ২৩ আগস্ট দিন ধার্য করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের কাছে থাকা নোটিশের স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, ই-অরেঞ্জের লেনদেনে সোনিয়া মেহজাবিনের সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে তার নামেরই একটি ই-মেইল ঠিকানা। চতুর সোনিয়া মেহজাবিন চলতি বছরের এক জানুয়ারি তার প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদল করেছে বলে দাবি করেছেন। তবে মালিকানা পরিবর্তনের ট্রেড লাইসেন্সের সংশোধনীতে দেখা গেছে, গত ১৯ জুলাই পরিবর্তন করা হয়েছে সেই মালিকানা। তত দিনে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানায়, বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা সোনিয়ার আপন ভাই। জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা গেছে, সোহেল রানার বাবার নাম শেখ আ. সালাম। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই করা সোনিয়ার ট্রেড লাইসেন্সেও বাবার নাম একই দেওয়া হয়েছে। সোনিয়া তার লাইসেন্সে মায়ের নাম নাজমা সালাম দিয়েছেন। সোহেলের জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম নাজমা বেগম। নাজনিন নাহার বিথি বর্তমান মালিক হওয়ার আগে থেকেই সোহেলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে।  

পুলিশ কর্মকর্তা ভাইয়ের সহযোগিতায় প্রতারণার অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কৌশলে মালিকানা বদল করেন সোনিয়া। পুলিশ পরিদর্শক সোহেল তার বোনের ই-অরেঞ্জের টাকা সরিয়েছেন এমন ব্যাংক লেনদেনের হিসাবও সংগ্রহ করেছেন কয়েকজন গ্রাহক। এসব তথ্য ও প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে। সোহেল ছাড়াও সোনিয়ার স্বামী বিকাশের কর্মকর্তা মাসুকুর রহমান ও সিওও আমান উল্লাহ এই কাজে সহায়তা করেন।

অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে জানতে গত দুই দিন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে ১০ বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। এক পর্যায় কল কেটে দেন।  

পুলিশের গুলশান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানির পর চাপে পড়েছেন সোহেল রানা। সিনিয়র অফিসাররা এরই মধ্যে তাকে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।  

গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘দুইজন আদালতে হাজির হওয়ার পর তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। আসামিদের রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। ’

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক