কিছু এনজিও হিন্দু আইন সংস্কারের ষড়যন্ত্র করছে: হিন্দু মহাজোট

Other

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক শাহীন আনাম ও তার স্বামী ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ তাদের সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে হিন্দু মহাজোট।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং হিন্দু সমাজ ও পরিবারে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সংগঠনটির।

রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে সংগঠনটি।  

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, হিন্দু নারীরা পিতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার পায় না বলে বিভ্রন্তি ছড়ানো হচ্ছে।

 

হিন্দু ধর্মমতে কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসছে হিন্দু ধর্মীয় আইন। কয়েক বছর ধরে হিন্দু ধর্মীয় আইন সংশোধনের দাবিতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিছু বেসরকারি এনজিও। এই দাবির প্রতিবাদে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এতে অংশ নেন ধর্মীয় গুরু, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

আইন কমিশনে জমা দেওয়া ‘হিন্দু আইন সংস্কার’ প্রস্তাবটিও অযৌক্তিক বলেন তারা। বক্তারা মনে করেন প্রস্তাবিত সংশোধন বাস্তাবিয়ত হলে পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) নিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, গুটি কয়েক এনজিও হিন্দু ধর্ম নিয়ে চক্রান্ত করছে। ওইসব এনজিও কর্মীর বিচার চাই। কোনো ভাবেই আইন পরিবর্তনযোগ্য নয়। আমরা বিব্রত, সরকারকে বিব্রত করছে, স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে আনন্দ করার কথা, সেখানে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, হিন্দুধর্মে মতপথ রয়েছে, তবে বেদ সার্বভৌম, এর সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। একতাকে ধ্বংস করবো না। অন্যায়ভাবে ভাবে প্রচার করা হয় হিন্দুরা দ্বিধাবিভক্ত, আমরা একতাবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই।

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী বলেছেন, সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে হিন্দু আইন নিয়ে বড় চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত সুদূর প্রসারী। শোকের মাসে আমাদেরকে হিন্দু আইন নিয়ে প্রতিবাদী বক্তব্য দিতে হবে আমরা প্রত্যাশা করিনি। হিন্দু আইন নিয়ে কেউ কেউ পাঁয়তারা করছে। যারা এই আইনের সংস্কার চলছে তাদের মতলব কোথায় সেটি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এই আইনটির পরিবর্তন সরকারও চাচ্ছে না। অথচ কতিপয় এনজিও চাচ্ছে তাদের প্রয়োজনে।

তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবিটি নিয়ে যেতে হবে। আমার যারা আজ এখানে এসেছি তাদের আরো সোচ্চার হতে হবে। আরো গতিশীল হতে হবে। আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সারা বাংলাদেশের যত হিন্দু সংগঠন রয়েছে সমস্ত সংগঠন কে একত্রিত করে আমরা আমাদের কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাবো। তিনি নিশ্চয় আমাদেরকে সুরক্ষা দেবেন। সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে আমাদের এই জাগরণ সীমাবদ্ধ নয়। হিন্দু সংগঠনগুলোর সমস্ত নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করব। মাহফুজ আনাম দের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করবো। তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে শক্তিশালী হতে হবে, গতিময় হতে হবে। সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

বৈদিক সমাজ বাংলাদেশের সভাপতি স্বামী চিদানন্দ স্বরস্বতী বলেন, গোটা বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে এবং এই সরকারের মধ্যে একটি ফাটল ধরানোর পায়তারা করা হচ্ছে।

হিন্দু সমাজ সংস্কারের সভাপতি অধ্যাপক হিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নারীরা সম্পত্তি পান না এই অপপ্রচার দিয়ে আপনারা যে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন কেন। সনাতনী একটি ভারসাম্যপূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাজকে আপনারা অশান্তিতে ভরিয়ে দিতে চান।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের বরিশথ সহসভাপতি প্রদীপ কুমার পাল বলেন, মতিউর রহমান, শাহীন আনাম, মাহফুজ আনাম তারা আসছে হিন্দু আইন পরিবর্তন করতে।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগ বলেন, আইন ও শালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, ব্র্যাক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আপনারা জেনে রাখুন যে সংগঠনগুলোর নাম বলেছি তার একটাও হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামানিক বলেন, হিন্দু আইনে কোনো ধরনের হাত দিতে দেব না। এবং আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সরকারকেও আহ্বান জানাই তারা যেন একটা স্পষ্ট ঘোষণা দেন যে না আমরা এ ব্যাপারে হাত দেব না। শাহীন আনাম সহ যে সকল এনজিও হিন্দু পরিবার সমাজ ও ধর্ম বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে হিন্দু পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ আরো কয়েকটি এনজিও হিন্দু ধর্মীয় আইন সংশোধনের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

সংগঠনটির নেতারা হিন্দু আইন সংশোধনের প্রস্তাবকারীদের অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন।   

হিন্দু ধর্মীয় আইনের সংশোধনের খসড়ায় সম্পত্তি বন্টন, বিবাহ বিচ্ছেদ, হিন্দু বিবাহ রেজিট্রেশন বাধ্যতামূলক ও শাস্তির বিধান, ভরন-পোষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রীয় বিধি বিধান পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের প্রতি সুনির্দিষ্ট চার দফা দাবি পেশ করা হয়।

হিন্দু মহাজোটের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রতীভা বাকচী স্বাক্ষরিত এক লিখিত বক্তব্য থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হলো- ১. হিন্দু আইনের কোনো ধরনের সংস্কার, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা হবে না। হিন্দু আইনে কোনো ধরনের হাত দেওয়া হবে না মর্মে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সরকারকে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

২. অবিলম্বে শাহীন আনামসহ যেসব এনজিও হিন্দু পরিবার, সমাজ ও ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে হিন্দু সমাজ ও পরিবারে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।   

৩. শাহীন আনাম গংদের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

৪. আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে সরকার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হলে সারাদেশে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে কাজ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এছাড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের কোনো ধরনের পরিবর্তন হিন্দু সমাজ সহ্য করবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন হিন্দু নেতারা।  

news24bd.tv নাজিম/তৌহিদ