যৌবনের স্বাদ ঠিকঠাক চাখার আগেই শরীরে টান পড়ে!

যৌবনের স্বাদ ঠিকঠাক চাখার আগেই শরীরে টান পড়ে!

Other

শরীর বড় হারামি। সে নিয়ত বিশ্বাসঘাতকতা করে। ছোট্ট শিশু বরাবরই মিষ্টি চেহারায়। পাষণ্ডও তার হাসিতে ভুলে যায়।

এমনকি আমার মতো বদখত চেহারা আর দেহের লোকটাও নাঙ্গাকালে দেখতে বেশ ছিলো। কিন্তু শরীরের হারামিপনায় আমি ক্রমশ ঢেঙ্গা হয়ে উঠলাম। কৈশোর বয়সটা তো গেলে ভাঙতে-গড়তেই। গলা ভাঙে, ব্রুণে ভরে যায় মুখ, মুখে-চোখে কনফিউশন।
শরীর যে তখন কতো রকম ফিউশন করতে থাকে। মন কিন্তু বিন্দাস। কোথায় আমার হারিয়ে যাওয়া নেই মানা। কিন্তু আমি যেন আমারই শত্রু হয়ে উঠি। আমার শরীর, অর্থাৎ বা্বইরের খোলসটা বারবার বলে দিতে থাকে, ওরে তু্লই কুৎসিত হাঁসের ছানা। তারপর শরীরে আসে যৌবন। মাঠের মধ্যে ছাড়া পাওয়া ঘোড়ার মতো শরীর ছুটতে চায়। মন যেন শরীরের লেজ। সে শরীরের সঙ্গেই ছুটতে থাকে। শরীরের সেই শক্তি আছে যে মনকে চাবকে হিমালয়ে নিয়ে যেতে পারে। যৌবন বড় সুন্দর, ইশ, বড় ক্ষণস্থায়ী।  

যৌবনের স্বাদ ঠিকঠাক চাখার আগেই শরীরে টান পড়ে। বিয়ে, বাচ্চা-কাচ্চা, চাকরি-বকরি সব মিলিয়ে শরীরে ব্যা ব্যা শুরু হয়। সেই ব্যা ব্যা শরীর ক্রমে হাম্বায় পরিণত। আহা, জীবন এতো ছোট কেন বলে নিতাই-কান্না শুরু হয়ে যায়। চল্লিশ পেরোলেই চালশে গাইতে থাকি কবির সুমন। আর পঞ্চাশে গিয়ে, সে কি তিনি বৃদ্ধ হলেন! তারপর, গাও ভজন, করো সাধন, হরি দিন তো গেলো, সন্ধ্যা হলো। বন্ধুরা বলে, এবার থাম শালা! যা হজ্ব করে আয়! মরবি না? এই জীবন কিচ্ছু না। মৃত্যুর পরই আসল জীবন। যা এই কয়দিন পরকালের জন্য সোয়াব কামাই কর। আর মন? মন কেবল ‘ভুলে যাওয়ার গন্ধের মতো’ কোথায় দেখেছে, কে যেন ছিলো বলে কেবলই স্মৃতি হাতড়ায়। খুব বড়াই করে বলতে থাকে, আমাদের সময় এই ছিল, ওই ছিল। আজকাল কিচ্ছু নেই। এখনকার ছেলেপেলে দেখেছেই কি আর বোঝেই কি! শরীর, মনের এই কাছে আসা, দূরে যাওয়া চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। তারপর একদিন মানুষটা মরে যায়। কেউ বলে, দেহপট সনে নট সকল হারায়। কারো ক্ষেত্রে বলে থাকি, তিনি নশ্বর দেহ ত্যাগ করে এখন অবিনশ্বরের পথে। মানুষ মরণশীল, কিন্তু মরণ? মরণ তো অনন্ত। মৃত্যুর কোন মৃত্যু নাই।  

তাই, এই শরীর মনের বাইরে আমরা একটা সত্তা সৃষ্টি করেছি। আমাদের ধর্মে , আমাদের বোধে, আমাদের সাহিত্যে একে আমরা আত্মা বলি। এই ‘আত্মানং জ্ঞানই বিদ্ধি’ মানে হলো আত্মা জানাই সকল জ্ঞানের সার। গ্রিকরা একে বলছেন, ‘নিজেকে জানো’। নিজটা কে? এই আমার আমিটা কে? না, কোনভাবেই আমি শরীর নই। মনও নই। কারণ এই মনও যে বড় ভঙ্গুর, প্রতারক, রঙ বদলকারী। শরীরের মতো মনেও কাদা লাগে, ময়লা লাগে, শরীরের মতো সেও বড় অস্থির, অসুখী। কিন্তু আত্মা, সে না কি এক স্থিরতা। এই স্থিরতাকে আমরা খুঁজে অমরতায়। চরম প্রশান্তির সন্ধ্যান খুঁজি আত্মার কাছেই। ধর্ম বলচে, আত্মাকে কলুষিত করো না। আত্মা তোমাকে নিয়ে যাবে পরমাত্মায়। কলব, রুহ, আত্মা, সোউল কতো কি নামে ডাকি তাকে। তারে চোখে দেখি না, অচিন পাখি, ধরতে পারি না, ছুঁতে পারি, ধরা দেয় না, কথা কয় না, তবু খাঁচার ভিতর অচিন আত্মা ছটফটায়। এই আত্মাকে মুক্তি দেয়াই কি মৃত্যু?
কিন্তু আত্মা তো অবিনশ্বর। আত্মা অমর। তার ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই, রূপান্তর আছে। আত্মাই পরম শক্তি।  

কোথাও হয়তো আত্মার গঠনের সঙ্গে মনের অবকাঠামোর মিল আছে। কিন্তু সেটা অন্য কথা, বরং নশ্বর আর অবিনশ্বর নিয়েই কথা বলি। এই যে মরণশীল মানুষ, জন্ম থেকেই তার একটাই চেষ্টা, নিজেকে অমর করা। আত্মা থেকেই যে আত্ম শব্দটা এসেছে। আত্ম মানে কি? আমি। তো এই আমিটাকে টিকিয়ে রাখতে চায় মানুষ। আর আমিত্বের একটা বড় জাগতিক পরিচয় হলো নাম। আপনি কে? জিজ্ঞেস করলে শতকরা ৯৯ ভাগ লোক বলবে নিজের নাম। আমি আব্বাস, আমি মিথিয়া, আমি সূর্যদাস, আমি অর্জুন, আমি লাবণ্য, আমি কুসুম, আমি রাখি, পাখি, আঁখি-- এমন করেই লোকের নিজের নাম পরিচয় দেয়। আর দ্বিতীয় লাইনে এসে বলে আমি ডাক্তার, আমি কবি, আমি নেতা, আমি অভিনেতা, আমি একজন গায়ক, প্রকাশক, পুলিশ ব্যাঙ্কার....। পেশা  বা কর্মেও আমার পরিচয়। কারো বা পরিচয় অন্যের পরিচয়ে। আমি মন্ত্রীর ছেলে। দেখো দেখো, অমুক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির তমুক পুত্রখানা যাচ্ছে! জানিস, আমার বাবা কে? চিনিস আমাকে? নিজের নাম, পিতৃ পরিচয়, পেশার সঙ্গে কেউ কেউ ধরাধামের ঠিকানাটাও দিয়ে দেয় নিজেকে চেনাতে। আমি গুলশান থাকি, আমি পিরোজপুর থাকি, আমি তো সুইডেনে আছি- এমন নানা ঠিকানায় আমরা লোকটাকেও মেপে নেই। কিন্তু এই আমরা সবাই দিনশেষে চাই অমর হতে। এই পৃথিবীতে আমি না-থাকলে আমার নাম-ধাম-কাম থাকুক।  

প্রকৃতির নিয়ম হলো বংশপরম্পরায় রেখে যাওয়া, তাতে কি করে পৃথিবী থেকে একটা প্রজাতি বিলুপ্ত হয় না। আমার বাবা-দাদা-বড় দাদারও আগে কতো নাম না-জানা মানুষের মিলনের পথ বেয়ে আমি এসেছি তার কোন হদিস কি আছে? চৌদ্দ পুরুষের ঠিকুজি যদি বের করাও যায়, পনের পুরুষের খোঁজ কেইবা রাখে। অথচ নিজের এই নামটি টিকিয়ে রাখার কতোই না-সাধনা। ‘ভালোবেসে সখী আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’ বলে গাইছে কেউ গান, মন-্প্রাণ দিয়ে ঠাঁই পেতে চায় ভালোবাসার বুকে। আবার কেউ গাইছে ‘আমি চলে গেলে পাষানের বুকে লিখো না আমার নাম’।  

মানুষ জীবনভর এই নামটা লিখিয়ে রাখতে চায়। বড় বড় সম্রাটরা পিরামিড বানিয়েছে, তাজ মহল বানিয়েছে, সোনায় নাম বাঁধাই করেছে। নিজের নামকে টাকার মধ্যে তুলে দিয়েছে। বানিয়েছে নিজের দেহ আর নাম দিয়ে মূর্তি। নাম লিখে রাখা, নাম টিকিয়ে রাখাটাই অস্তিত্বের লড়াই, অমরত্বের লড়াই। মরণশীল মানুষ আমৃত্যু চেষ্টা করে নিজের আত্মাটি টিকিয়ে রাখতে, নিজের নামটিকে অমর করতে।  

কেউ সাগর পারে নিজের নাম লেখে, জানে ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যাবে, গাছের ছালে নিজের নাম লেখে, দেয়ালে, বইয়ের পাতায়, হিসাবের খাতায়, কতো জায়গায়ই না মানুষ নাম লিখে যায়। এই যে এতো শিল্পী, কবি, লেখক, গায়ক, নায়ক- সবাই জীবন ভর একটাই চেষ্টা করে, অমর হওয়ার। তার নশ্বর এই শরীরটা বিলুপ্ত হওয়ার পরও নামটা রয়ে যাবে। নিজের নামটা রয়ে যাওয়া যেন অস্তিত্বটাই রয়ে যাওয়া। তার জন্য অনেকে অনেক হাস্যকর কাজও করে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ এবং একটু পুরনো ধাঁচের তারা পারলে নিজের নাম, যোগ চিহ্ন দিয়ে প্রেমিকার নাম হামেশাই গাছের বাকলে লিখেছি। কেউ বা দেয়ালে, পড়ার টেবিলে নিজের বা প্রিয় জনের নাম লিখি। ধরুণ আপনি একটা নতুন খাতা কিনলেন বা সাদা একটা কাগজ হাতে এলো কিংবা নতুন করে টাইপ করতে শিখছেণ সবার আগে যা করবেন তা হলো নিজের নামটা খোদাই করার চেষ্টা করবেন। এমনকি গণশৌচাগারের দেয়ালে, দরজাতেও মানুষ নিজের নাম লিখেছে। আজকালকার আধুনিক ছেলে-মেয়েরা অবশ্য অমর হতে চায় না। তারা জীবিতকালে খ্যাতি চায় এবং সেটা ভোগ করে যেতে চায়। অমরত্ব নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। তার টিকটক টিকটক করে ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দেয়। কারো আছে লাখ লাখ ভিউয়ার। কারো আছে বিরাট সব পেইজ, চ্যানেল, গ্রুপ। এরা কামাই করে। ইহকালের কামাই। আবার কেউ কেউ পরকালের বাণিজ্য করেও রকমারি ডটকমে সেরা বিক্রির তালিকায় ঠাঁই নিয়ে নেয়। মহাকাল কাকে কোথায় ঠাঁই দিবে সে রহস্য আড়ালেই রয়ে যায়।  

এই নাম রয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে মন কিংবা আত্মাটা সবচেয়ে বেশি সাধনা করে যায়। কিন্তু একক মানুষ কী করতে পারে? একা মানুষ কী করতে পারে? কিছুই তো স্থায়ী নয় এই বস্তু জগতে। সব ক্ষয় হয়ে যাবে। যায়। তবে আমরা টিকবো কেমন করে? সৎ কর্ম করে, ভালো কাজ করে? কিন্তু ভালো-মন্দরও কতো মতবিভেদ। এই ধর্মের ভালোটা অন্য ধর্মে খারাপ। পুরুষের ভালোটা নারীর জন্য খারাপ। তবে ভালো-মন্দের, সাদা-কালোর ব্যবসাতেই কি দিন চলে যায়! কিন্তু ‘দিন যায় কথা থাকে’। আসলেই কি থাকে? সব কথা থাকে না, সব মানুষ থাকে না, সব কাজ থাকে না। এতো সাধনার পিরামিডেও ধূলো জমে। মেরুভূমি, মরুভূমি, জলে-জঙ্গলে, পাহাড়ে সবখানেই প্রতিযোগিতা চলছে নশ্বর মানুষকে কালের ধূলোয় মিটিয়ে দেবার। তার বিরুদ্ধে লড়াইটাই আত্মার কাজ, তার বিরুদ্ধে লড়াইটাই অমরত্বের লড়াই। কিন্তু একা মানুষ কেমন করে পারবে অতো বড় লড়াই করতে? 

এখানেই আমার বলার কথাটি বলছি। আমি বলতে চাই, মানুষ একা নয়। জগতের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষটিও কোনভাবেই একা নয়।   অন্তত যতোক্ষণ তার কাছে একটি বই আছে ততোক্ষণ সে একা বসে নেই। সভ্যতার রিলে রেসে আমরা সবাই দৌঁড়াচ্ছি। সেই দৌঁড়ের প্রধাণ কাঠিটি হলো জ্ঞান আর জ্ঞানের বাহন হলো বই। এরিস্টটলের পোয়েটিকস থেকে মৈমনসিংহ গীতিকা- এই সবই আমরা স্থান-কালের সীমানা পেরিয়ে পেয়ে যাই বইয়ের কল্যাণে। ইউলিসিস, অর্জুন থেকে গ্রিগর সামসা, চন্দ্রাবতী- সবাই আমাদের সঙ্গী হয়ে যায় বইয়ের কল্যাণেই।  

বইয়ের হাত ধরে (পাতা ছুঁয়ে) আমরা যে জ্ঞানের রাজ্যে পৌঁছাই সেটা অমরত্বেরই রাস্তা, সেটা অবিনশ্বর মন কিংবা আত্মার পথ্য ও পাথেয়। মন ছুটে যায় আফ্রিকার জঙ্গলে, এভারেস্টের চ‚ড়ায় কিংবা অতলান্ত সাগরের তলে। শরীর কিন্তু যেতে পারে না। তার অতো প্রশিক্ষণ নেই, পাসপোর্ট ভিসা নেই। এই মনের ভ্রমণটা পূর্ণতা পায় বইয়ের কল্যাণেই। আর বই কি? বই হলো জ্ঞানের রিলের রেসের কাঠি। কোথাকার কোন অন্ধ হোমার, কোথাকার কোন কালিদাস, শেকসপিয়র, তারা আমাদেরই আত্মীয়, আত্মার আত্মীয়। কাগজ ছিলো না, কলম ছিলো না, কিন্তু কোন না কোন হোমার, এরিস্টটল, বেদ ব্যাস তো ছিলো। তারা যে জ্ঞান বিতরণ করেছেন তা এখন আমার কাগজে কলমে, বইতে, ডায়রিতে, তারা এখন আমাদের মোবাইলে, কম্পিউটারে। তারা মরেন নাই। তারা অমর। আর তাদের সঙ্গে নিয়ে একলা মানুষ রওনা দিতে পারে অমরত্বের পথে। আত্মার বিশুদ্ধতার পথে। সে পথ জ্ঞানের, সাধনার।  
গৌতম বুদ্ধ কে ছিলেন, কেমন ছিলেন, কী বলেছেন- সেগুলো বইয়ের কল্যাণেই জানা সম্ভব। আলেকজান্ডার কিংবা বাবরকে চিনতে পারি বইয়ের হাত ধরেই। সেই বিবেচনায়, তারা যেমন অমর হয়ে থাকেন আমরাও ক্রমশ অমরত্বের দিকে এগুতে থাকি।  

একটা বিষয় কিন্তু খুবই পরিস্কার, যারাই বই পড়েছেন তাদের মানসিক বা আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি জাগতিক কিছু সুবিধাও হয়েছে। বই পাঠ সকল অর্থেই শান্তি, স্থিরতা, ধৈর্য দিতে পারি। আর কে জানে, শরীরবৃত্তিয় কাজেও এগুলো গুণ অপরিসীম। জ্ঞান কখনোই একরৈখিক বা ওয়ানওয়ে ট্রাফিকের মতো নয়। এর বহুমূখি বিকাশ আছে। সেই দিক থেকে দেখলেও বইপাঠ ইহলৌকিক বোধের সঙ্গে পরলৌকিক অনুভবেও কাজে দেয়। অমরত্বের জন্যে ফাউস্ত বা ফস্টাস তার আত্মা দিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাফিস্টোফিলিস বা শয়তানের কাছেই। তার ট্র্যাজিক পরিণতির কথা আমরা জানি। এই ট্র্যাজেডির অন্যতম কারণই হলো, অমরত্ব আসলে যে জ্ঞানের মধ্যে, বইয়ের মধ্যেই লুকায়িত তিনি তা বুঝতে পারেননি।  

আমার ব্যক্তিগত মতামত, মানুষ শারীরিকভাবে অমর হয়তো একদিন হতে পারবে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত সভ্যতার যে রিলেরেস দেখছি সেখানে নিজের নাম কিংবা সত্তাটি অমর করার একমাত্র উপায় হলো বই। বই এমন এক ডাকটিকেট যা আপনাকে-আমাকে অসীম সময়ের মধ্যে একটা নাম-ঠিকানা লেখার সুযোগ করে দিতে পারে।  

পৃথিবীতে যারা লিখেছেন, বড় হয়েছেন, অমর হয়েছেন, এদের যে কারো জীবনের দিকে তাকালেই দেখতে পাই, সবারই বই পড়ার ইতিহাসটা দীর্ঘ। কুতর্কের খাতিরে অনেকেই হয়তো বলবেন, আমাদের রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুলের শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু সে প্রশ্ন ধোঁপে টিকবে না। কেননা, শীক্ষা মানেই পিএইচডি, এমএ নয়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। আমি অন্তত এমন প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষিতকে চিনি যারা সিলেবাইসের বাইরে দৌঁড়াইনি। এদের গদর্ভ চরিত্র বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হতে হয় না। সাধারণ জ্ঞান থেকেই  স্রেফ মুখস্থ বিদ্যাধারীকে চেনা যায়। তুলনায় স্বশিক্ষিত অনেক বেশি শিক্ষিত। বিলাত ফেরত রবীন্দ্রনাথ কিংবা মক্তব্যের নজরুল যে একাধিক ভাষা ও বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন তা তাদের নিজেদের পড়ার প্রণোদনারই ফল। একজন স্বশিক্ষিত আরজ আলীর প্রতি আমরা মাথা নত করি। স্কুল কলেজ ফেরতা অনেক মহৎ ব্যক্তির নামই বলা যায় যারা ওই অচলায়তনের বাইরে গিয়েও জ্ঞানের চর্চা করেছেন। লালন সাই, হাসন রাজা বই না-পড়লেও তারা জ্ঞানের পথের পথিক। তারা মৌখিক জ্ঞান, প্রকৃতির স্কুল থেকে পাঠ নিয়েছে। জেনেছেন, বুঝেছেন হাওয়া-মাটিকে।  

আসল শিক্ষাটা যে শুরু হয়, স্কুল-কলেজ থেকে বের হওয়ার পর সেটা অনেকেই জানেন। কিন্তু আমরা মানি না হয়তো। আমাদের অভিভাবক জাতটা ছেলেমেয়েদের চাকরী কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্যেই পড়ান। তাই পড়াটা শেষ পর্যন্ত মানুষের বা তার নিজেরও কাজে লাগে না। লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে- এমন আপ্তবাক্য ছুঁড়ে ফেলার দিন তো এসে গেছে। গাড়ি-ঘোড়া চাইলে চোর আর ঘুষখোররাও করতে পারে। বড় লেখাপড়া এমন এক নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করে দেয় যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ার চেয়ে বড় কিছুর দিকেই মন ছুটে যায়। কর্পোরেট সমাজ অবশ্য সেই ছুটে চলার রাশ টানতেই ব্যস্ত।  

এই যে চারপাশে ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, দূর্নীতি বাড়ছে এর পেছনে কি বই বিমুখতা ভূমিকা রাখছে না?গীতাঞ্জলি কিংবা প্যারাডাইস লস্টকে ধারণ করে যে মানুষ সে কি ধর্ষণ করতে পারে! বইকে যে উপলব্ধি করে, আত্মস্থ করে সে তো নিচে নামে না, ক্রমশ অসীমের দিকে ছুটতে থাকে। সেই অসীমের ডাক শুনতে পাওয়াই তো অমরত্বের প্রথম সোপান। আমি তাই বলি, বই অমরত্বে ডাকটিকেট তো বটেই পাসপোর্ট-ভিসাও খানিকটা।  

লেখক- অমরত্বের ডাকটিকেট
মুম রহমান

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

 

আরও পড়ুন:


স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা, জবানবন্দিতে যা বললেন সেই ঘাতক স্ত্রী!

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার করে টিকটক, আটক ৫ শিক্ষার্থী মুচলেকায় মুক্ত

কালকিনিতে নিখোঁজ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রামে বন্যায় নদী ভাঙন ও রোপা আমনের ক্ষতি


NEWS24.TV / কামরুল