বাগেরহাটে সৌদি খেজুর চাষে খুলেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

বাগেরহাটে সৌদি খেজুর চাষে খুলেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

Other

সমুদ্র উপকলীয় জেলা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নদী ও খালের পানি থাকে শুরু করে জলাভূমির মাটিও লবণাক্ত। লবনাক্ততার কারণে ফসল ভালো না হলেও জলাভূমি বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র। সেই রামপালের সন্ন্যাসী গ্রামের হাজিপাড়ায় সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন বাগেরহাটের এ্যাডভোকেট দিহিদার জাকির হোসেন।  

১৫ একর মাছের খামারের বেড়িবাঁধ এখন আড়াই হাজার সৌদি আরবের খেজুর গাছ লাগিয়ে মাত্র দুই বছরেই ফল হয়েছে শতাধিক গাছে।

এক একটি গাছে গড়ে আধা মনের অধিক খেজুর জন্মেছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গাছ থেকে পাকা খেজুরের ছড়া কাটা শুরু হয়েছে।
    
রামপালের মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের হাজিপাড়ায় ২০১৪ সালে নিজের ১৫ একর জমিতে নয়টি পুকুর খনন মাছের খামার করেন জাকির হোসেন। খননকৃত পুকুরের বেড়িবাঁধের উঁচু জমিতে পেঁপে, কুলসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপণ করেন।
কিন্তু লবণাক্ততার কারণে এসব গাছে ফলন ভালো না হওয়ায় রাস্তার পাশে দেশি খেজুর গাছে ফলন দেখে একপর্যায়ে সৌদির খেজুর চাষের বিষয়টি মাথায় আসে তার।  

২০১৯ সালে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ ও  নরসিংদী থেকে আরও ১০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে বেড়িবাঁধের জমিতে রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে শতাধিক খেজুর গাছের ফল কাটা শুরু করেছেন। এক বছরের মধ্যে অন্তত আরও ২০০ গাছে ফল দেওয়া শুরু হবে। বর্তমানে এই সৌদি খেজুর খামারে আজোয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহী জাতের ২৫০০ খেজুর গাছ রয়েছে। দেখভাল করার জন্য সার্বক্ষনিক ৩ জন শ্রমিক রয়েছে।  

লবনাক্ত জমিতে সৌদি খেজুর ফলিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়া খামারটির শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের প্রথমে মালিক সৌদি খেজুরের চারা লাগালে এলাকার মানুষ জানার পরে তারা বিদ্রুপ করা শুরু করে। মালিককে পাগল বলে তারা আমাদের খেপাত। কৃষি বিভাগও খেজুরের এই খামারটি দেখতে আসতোনা। আমরা সার্বক্ষণিক মালিকের নির্দেশনা মেনে গাছের গোড়ায় জৈব সার, পানি ও বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দিয়ে থাকি। সঠিক পরিচর্যায় লাগানো প্রতিটি গাছ বেঁচে রয়েছে। শতাধিক গাছে ফল এসেছে, গাছ থেকে খেজুরের ছড়া কাটা হচ্ছে। অনেকেই এখন দেখতে আসছে।
 
স্থানীয়রা জানান, প্রথম আমরা জাকির ভাইয়ের কাজ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি টাকার গরমে যা ইচ্ছে তাই করছেন। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তিনি অনেক দূরদর্শী মানুষ। আমরা চিন্তা করছি একটু কায়দা করে নিজেদের চিংড়ি ঘেরের পাড়েও লাগাব সৌদির খেজুর।

সৌদির খেজুর খামারী জাকির হোসেন জানান, ২০১৯ সালে ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’ নাম দিয়ে এই খামার শুরু করি। ময়মনসিংহ ও নরসিংদী থেকে আনা ৩০০ খেজুর গাছ লাগাই। লবনাক্ততা জলাভূমিতে সৌদি খেজুর বাগান করা যায়, তা খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কল্পনারও বাইরে ছিলো। এলাকার লোকজন আমাকে পাগল বলতেও ছাড়েনি। মাত্র দু বছরের মধ্যেআ আমি সফল হয়েছি। বর্তমানে শতাধিক খেজুর গাছের ফল কাটা শুরু করেছেন। এক বছরের মধ্যে অন্তত আরও ২০০ গাছে ফল দেওয়া শুরু হবে। বর্তমানে এই সৌদি খেজুর খামারে আজোয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহী জাতের ২৫০০ খেজুর গাছ রয়েছে। পাশাপাশি আরও দুই হাজারের ওপরে চারা রয়েছে। এছাড়া বিচির তৈরি আরও আড়াই হাজার চারা প্রস্তুত রয়েছে নার্সারিতে। এ বছরই অনেক গাছে ২৫ কেজি থেকে ৩৩ কেজি পর্যন্ত খেজুর হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মধ্যে বাগান থেকে লাভে যেতে পারবেন বলে জানান এই খামারী।  

লবনাক্ত জলাভূমিতে সৌদি খেজুরের বাগান করতে ইচ্ছুক নতুন খামরীদের উদ্যেশ্যে জাকির হোসেন জানান, এই খেজুর গাছটি মরুঅঞ্চলের গাছ, যার ফলে আমাদের এই অঞ্চলে খাপ খাওয়াতে একটু বেগ পেতে হয়। গাছের গোড়ায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিতে হয়, পানি কম হলেও বাঁচবে না, আবার বেশি হলে পচে যাবে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব। নারকেল ও শুপারি গাছের নতুন রোগ হোয়াইট ফ্লাই ও শুতিমূলের আক্রমণটা বড় ভয় এ খেজুর গাছের। এ জন্য সব সময় খেয়াল রাখতে হয়। প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।  

এর সঙ্গে রয়েছে ইঁদুরের জ্বালাতন। খেজুর গাছের শিকড় কেটে দেয়, আবার ফলও কাটে। ইঁদুরের জন্যও আমাদের সতর্ক থাকতে হয়। শীত ও বর্ষা মৌসুমে পানি দিতে না হলেও গরম অর্থ্যাৎ মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে সেচ দিতে হয়। আমার চারিপার্শে যেহেতু লবনাক্ত পানি তাই গভীর নলকূপের মাধ্যমে এ পানি দিয়েছি। কলম এবং বিচি দুইভাবেই সৌদির খেজুরের চারা তৈরি হয়। তবে, বিচির চারার বেশিরভাগ পুরুষ হয়ে যায়। যার ফলে ফল আসে না। তাই নতুন যারা শুরু করবেন, তাদের কলমের (অপশুট) চারা কিনতে হবে।  

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সৌদির খেজুর মরুভূমির ফসল। তবে, লবনাক্ত জলাভূমিতে এ খেজুর চাষে দিহিদার জাকির হোসেন সফলতা পেয়েছেন। এ খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকলে লবণাক্ত পানি অধুষ্যিত এলাকার জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত। তার এ উদ্যোগকে আরও বেশি সফল করতে এখন কৃষি বিভাগ পক্ষ থেকে প্রয়োজনে সব ধরনের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন:


স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা, জবানবন্দিতে যা বললেন সেই ঘাতক স্ত্রী!

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার করে টিকটক, আটক ৫ শিক্ষার্থী মুচলেকায় মুক্ত

কালকিনিতে নিখোঁজ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রামে বন্যায় নদী ভাঙন ও রোপা আমনের ক্ষতি


NEWS24.TV / কামরুল