কিছু রোগে চিকিৎসকের আর তেমন কিছুই করার থাকে না

ডাঃ এইচ, এম মাহমুদ হারুন এমবিবিএস, এমডি(সাইকিয়াট্রি), কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস এন্ড ড্রাগ এডিকশান স্পেশালিষ্ট ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক এন্ড ইমেজিং সেন্টার

কিছু রোগে চিকিৎসকের আর তেমন কিছুই করার থাকে না

Other

মি. পাভেল(ছদ্মনাম), সবেমাত্র ৩০ বছর পার করেছেন।

উনার মা আমার রোগী। সেই সুবাদে উনি ভাবলেন, আমাকে একবার দেখাবেন।
এতদিন বহুবার নিউরোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছেন।


উনার সমস্যা বড়ই বিচিত্র, খালি সবকিছু ভুলে যান।
Ghajini এর আমির খান এর মতো অবস্থা!
এত অল্প বয়সে Dementia হওয়ার কথা না, তাই উনাকে যারা দেখেছেন স্বভাবতই এটা overlook করে গেছেন।
ডায়াগনোসিস করেছেন Pseudo-dementia এবং সেই অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট দিয়ে গেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আবার ডায়াগনোসিস লিখেছেন Depression.
কারণ ডিপ্রেশন এর একটা feature হলো forgetfulness, তাই হয়তো!
নিউরোমেডিসিন আর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ উভয়েই নানান সময়ে নানান রকম Anti Depressant Drug দিয়ে গেছেন।
কিন্তু কিছুতেই কোন উন্নতি হচ্ছিলো না উনার স্মৃতিশক্তির।
আমি History নিয়ে এবং Mental State Examination(M/S/E) করে দেখলাম ডিপ্রেশন এর কোন ছিটেফোঁটাও নাই, কোন কালে ছিলোও না!
পরে যখন MRI করা হয় তখন ধরা পড়ে আসল জিনিস।
X ray Film viewer-এ MRI plate লাগাতেই আমার চক্ষু ছানাবড়া!
দুইপাশের Parietal lobe-এ বিশাল অংশ জুড়ে Ischaemia. MRI রিপোর্ট এও স্পষ্ট লিখা Bilateral Parietal lobe infraction.
অর্থাৎ সোজা বাংলায় বলতে গেলে ব্রেন এর দুইপাশের Parietal lobe এ রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন বন্ধ হয়ে সেখানকার টিস্যু বা কোষগুলো মারা গেছে, যা এই বয়সে খুবই rare case.
এবং এটা পুরাই irreversible অর্থাৎ নিরাময়যোগ্য না।
Parietal lobe এর Function মাথায় সাঁটা ছিল। সেটা মিলিয়ে নিতেই দেখি সেগুলোতেও প্রভাব পড়েছে।
এখন আমরা কেবল উনার এই ischaemia বা রক্ত সঞ্চালনের অভাবে কোষের মৃত্যু যেন না বাড়ে সেটা চেষ্টা করতে পারি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যিই, মেডিসিন কিংবা নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ কেউই উনার অসুখটা সম্পর্কে(Treatment & Prognosis) উনার সাথে বিস্তারিত আলাপ করেননি।
রোগীও অনেক আশা নিয়ে আছে, উনার রোগটা হয়তো ভালো হবে।
আমি Breaking bad news টাইপের স্টাইলে উনাকে উনার রোগ সম্পর্কে ডিটেইলস যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় বুঝালাম।
দেখে মনে হলো উনি বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন, মুহূর্তেই মুখ শুকিয়ে গেল।
মলিন মুখে তখন যেন আর কথা বের হচ্ছিলো না।
আমি ওষুধ লিখে, প্রয়োজনীয় আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রিপোর্টসহ আবার দেখা করতে বললাম।
বাসায় ফিরে রাতে লিজেন্ডারি প্রাকটিশনার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শ্রদ্ধেয় গোলাপ ভাই(যিনি একদিনে ২৫০+ রুগী দেখেন) এর সাথে কেসটা নিয়ে আলাপ করলাম।
উনিও এই রোগীর Treatment বা Management বিষয়ে আমার সাথে একমত হলেন।
এক্সট্রা হিসেবে উনি বললেন, Lipid profile দেখে Atorvastatin add করে দিতে, কারণ Brain এ Plaque formation হয়েছে মানে শরীরের অন্যান্য যায়গায়ও অলরেডি Atherosclerotic process শুরু হয়ে গেছে।
আমি উনাকে জানালাম, আমি ইতোমধ্যেই Fasting Lipid profile করতে দিয়েছি।
তবে কিছু রোগে চিকিৎসক এর আর তেমন কিছুই করার থাকে না।
ডাক্তার ও রোগী উভয়েরই মন খারাপ হয়ে যায়।

news24bd.tv/এমি-জান্নাত