অতিথির সামনে কী বাসী খাবার দেবেন?

কৌশিকী চক্রবর্তী

অতিথির সামনে কী বাসী খাবার দেবেন?

Other

আপনি কী অতিথিকে বাসী খাবার খেতে দেবেন? বা আপনি কী অতিথির সামনে বাসী খাবার পরিবেশন করবেন? এই প্রশ্নের জবাব নিয়েই আজকের লেখা। আপনাদের জবাবের সঙ্গে আমার জবাব মিলিয়ে নেওয়ার আগে ভারতের ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। কারণ, আমি যে জবাব দেবো, তার সঙ্গে গুণী এই শিল্পী জড়িয়ে আছেন।  

আপনারা নিশ্চয়ই কৌশিকী চক্রবর্তী সম্পর্কে জানেন।

আপনাদের জানা ও না-জানা আমার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্ব অবশ্যই নাসিরউদ্দিন হোজ্জার গল্পের মতো নয়। কী বলছেন, হোজ্জার গল্পটি এখন অনেকের মনে পরছে না? তাহলে আগে হোজ্জার গল্প বলি।  

news24bd.tv

নাসির উদ্দিন হোজ্জা একবার গ্রামের লোকদের জমায়েতে বললেন, আপনারা কথাটি জানেন, তাই না? সমবেত গ্রামবাসী জবাব দিলো।

হ্যাঁ জানি। হোজ্জা তখন বললেন, আপনারাতো জানেনই, তাহলে আমি আর কিছু বলছি না। গ্রামের লোকরা ভাবলো, হোজ্জা আমাদেরকে এতো বোকা বানালো। কাল তাকে আবারো ডেকে আনবো আর ভিন্ন জবাব জবাব দিবো।  

পরদিন আবার নাসিরউদ্দিন হোজ্জা এলেন, বলেলেন, কথাটি তো আপনার সবাই জানেন। জবাবে গ্রামবাসী বললো, না, আমরা জানি না।  

এবার হোজ্জা বললেন, কী বলেন, আপনারা কেউ জানেন না ? তাহলে আর জেনে লাভ নেই।  
গ্রামবাসী পড়লো বিপদে। এটা কী হলো! তারা আবার পরদিন হোজ্জাকে ডেকে আনলো।  
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা আবারো প্রশ্ন করলো, তাহলে কথাটি আপনারা জানেন? 
গ্রামবাসী এবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো । একদল বললো, আমরা জানি। অপর দল বললো, আমরা জানি না।  

হোজ্জা বললেন, যারা জানেন তারা, যারা জানেন না, তাদের জানিয়ে দেবেন। আপনাদের মাঝে অবস্থান করে আমার লাভ নেই।  

যাহোক, আমি অবশ্য এই বিভাজনে যাবো না। জানেন বা জানেন না, দুই দলকেই আমি কথাগুলো বলবো।  

কৌশিকী চক্রবর্তী একজন কিন্নর কণ্ঠের নারী। কিন্নর কণ্ঠ বলতে কতোটা মিষ্টি কণ্ঠ হয়, তা আমার জানা ছিলো না। সমসাময়িক শিল্পীরা যখন কৌশিকীকে কিন্নর কণ্ঠি আখ্যা দেয়, তখন কৌতুহল নিয়ে আমি তাঁর গান শুনতে শুরু করি।  

তাঁর গান মাকড়শার জালের মতো। একবার গভীরে গেলে আর বের হওয়া যায় না। আমি দিনের পর দিন শুনতে থাকি। এরপর ব্যক্তি মানুষটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই । জেনে অবাক হই না , তিনি ভারতের বিখ্যাত ক্ল্যাসিক্যাল শিল্পী অজয় চক্রবর্তীর মেয়ে। সাত বছর বয়সে তিনি শিল্পী জনন প্রকাশ ঘোষের কাছে শিখতে যান।

বয়স সাত না হলে, তারার মা বা পা গাইতে গিয়ে অনেকের ভোকাল কর্ড ছিড়ে যেতে পারে। এই ভয়ে অনেক পন্ডিত শিশুদের সাতের আগে গানে হাতেখড়ি দেন না। আমার একান্ত ধারণা, এই কারণে হয়তো কৌশিকী ওস্তাদের কাছে সাত বছর বয়সে গেছেন। এর আগে নিশ্চয়ই তিনি বাবার কাছে শিখেছেন।  

যাহোক, কৌশিকী কী ভাবেন, তা জানার কৌতুহল বাড়তে থাকে। বলে রাখি, কৌতুহল সাংবাদিকদের এক অমূল্য সম্পদ। কৌতুহল সাংবাদিককে পরিপূর্ণ করে।  

আরও পড়ুন:


বাংলাদেশে যারা গান শেখে, তাদের কোনো স্বপ্ন আছে কী?

তারকারা সবাইকে আনন্দে রাখেন, কিন্তু তাদের অনেকের জীবন কষ্টে ভরপুর

তুমি হয়তো ক্ষতি দেখছো না

রাতের রাজা বা কোনো জ্বিনকে আটক করা যাবে না


আমি কৌশিকীর সাক্ষাৎকার পড়তে শুরু করি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি প্রতিদিন রেওয়াজ করেন। প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। কারণ একই জিনিস নিয়ে শ্রোতার সামনে হাজির হওয়া মানে, অতিথির সামনে বাসী খাবার দেওয়া।  

তার এই এক লাইনের কথা আমার জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলে। আপনারা জানেন, আমি প্রায় সপ্তাহে ৬ দিন একটা টিভি টক শো করি। ফলে, প্রতিটা শো এর সময় আমার মাথায় কেবল ঘুরপাক খেতে থাকে বাসী খাবার উপস্থাপন করছি না তো? গতকালের চেয়ে আজকের শো একটু ভিন্ন হচ্ছে তো? জীবন আসলে একটা দারুণ বিষয়। পথের বাঁকে বাঁকে এটি নানা কিছু শিখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়।

লেখক: আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি।  

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম