সময় গেলে সত্যিই সাধন হয় না!

সময় গেলে সত্যিই সাধন হয় না!

Other

বিয়ের পরে অনেক মেয়ের চাকরি ছেড়ে দেওয়া বা চাকরি পেলে করতে না দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু না। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর এখনো এসব অন্যায় মাথা পেতে নেওয়ার মতো শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ের সংখ্যা কম না!

কিন্তু সন্তান জন্মের পর অনেক মা ই স্ব-ইচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন বাচ্চাকে সময় দিবেন বলে। অথবা অনেকেরই বাচ্চা দেখা শোনার কেউ থাকেনা বলে বাধ্য হয়ে।

দুটো ক্ষেত্রেই আমার কাছে সিদ্ধান্তটা ভুল মনে হয়। আমি নিজে দেখেছি এমন অনেককে যারা সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে গর্বিত হয়েছেন আবার তারাই একসময় গিয়ে আফসোস করেছেন। সবার ক্ষেত্রে না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়।

কিন্ত একাকীত্ব অনেক ভয়াবহ জিনিস! এটা মনকে তিলে তিলে শেষ করে।

সত্যি বলতে আল্লাহ চাইলে সন্তান কোনো না কোনোভাবে বড় হয়েই যায়। দাদা-দাদী, নানা-নানি, কোনো আত্মীয়, দেখাশোনার জন্য বেতনভুক্ত কেউ কিংবা সবশেষ অপশন ডে কেয়ার। একান্তই বাধ্য নাহলে ডে-কেয়ারে কেউ দেয়না সন্তানকে। যা হোক, একদিন বড় হয়ে তার একটা সার্কেল, একটা পজিশন তৈরি হয়। তখন শুধু তাকে সময় দেওয়ার জন্য যে মা নিজের শিক্ষা, এবং  যোগ্যতাকে অগ্রাহ্য করেছিলেন, তাদেরকে একদিন নিজের অস্তিত্বের মুখোমুখি হতে হয়। তখন কী জবাব মেলে আসলে! আর মিললেও হিসেব মেলে না। কারণ তখন বেশি দেরি হয়ে যায়। আর যে ভরসায় নিজের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন সেই ভরসার হাতটি সারা জীবন ধরে থাকতে পারবেন, কে দিতে পারে সেই নিশ্চয়তা! সময় গেলে সত্যিই সাধন হয় না!

সবচেয়ে বড় কথা যে সন্তানের জন্য আপনি চাকরি বা ব্যবসা যাই হোক, ছেড়ে দিবেন সে সন্তান সবাইকে নিজের মা গৃহিণী বলতে যতটা না স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে তার চেয়ে অনেক বেশি গর্ব অনুভব করবে এটা বলতে যে আমার মা কর্মজীবী। হোক সরকারি কর্মকর্তা, ডাক্তার,পুলিশ, সাংবাদিক, কোনো করপোরেট জব কিংবা উদ্যোক্তা। সেদিন সেই সন্তানের আর মনে হবে না আমার মা আমাকে কম সময় দিয়েছে বা দেয়নি। মায়ের নিজের একটা আলাদা পরিচয় বলতে আপনার সন্তানের মুখও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে!

জীবনের কোনো অধ্যায়ে গিয়েও যেন এক মুহুর্তের জন্য আফসোস করতে না হয় আপনাকে। সন্তানকে শুধু সময় দেবার জন্য জব না ছেড়ে যতটা সম্ভব তাকে কোয়ালিটি টাইম দিয়েও সুন্দরভাবে জব করে সবটা সামলানো যায়। এবং সেটা অনায়াসে করছেন এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। শুধু সন্তানের যেন মনে না হয় তাকে অবহেলা করা হচ্ছে। এইটা আহামরি সায়েন্স না! বরং নিজের সন্তানের মানসিকতা এভাবে গড়ে তুলুন, মায়ের নিজের একটা আইডেন্টিটি আছে যেটা তার ভবিষ্যৎকে আরও মজবুত করবে। ছোটবেলা থেকে ইতিবাচকভাবে ভাবতে শেখালে পাশের বাসার আন্টি বা অমুক-তমুকের কথায় আপনার সন্তান বিন্দুমাত্র বিচলিত হবে না।

সবারই কোনো না কোনো যোগ্যতা থাকে। আর এখন মেয়েদের আইডেন্টিটি তৈরির হাজারটা পথ খোলা। চাকরিই করতে হবে এমনটা তো না। কিন্তু  জীবনে অবশ্যই নিজের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে হলেও আইডেন্টিটি প্রয়োজন। তাই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথও রয়েছে অসংখ্য। শুধু ইচ্ছে আর মনের জোরটা প্রয়োজন। নিজের হয়ে বাঁচতে পারলেই সবার জন্য বাঁচা যায়। আর এই আত্মতৃপ্তিটাই যে অনেক বড়!

লেখক : এমি জান্নাত, সাংবাদিক

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

NEWS24.TV / কামরুল