সাফিয়াত সোবহান সানবীর: উন্নততর ব্যবসা পদ্ধতিতে বিশ্বকে বদলে দেয়া এক নায়ক

সাফিয়াত সোবহান সানবীর: উন্নততর ব্যবসা পদ্ধতিতে বিশ্বকে বদলে দেয়া এক নায়ক

অনলাইন ডেস্ক

৩০ বছর আগে, যখন বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখন প্রয়োজন ছিল এমন নেতার যিনি তার কর্ম, অসীম দৃঢ়তা এবং দূরদর্শিতার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে পারেন। সাফিয়াত সোবহান সানবীর এমনই একজন নেতা যিনি একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক ব্যবসায়িক মানচিত্রে স্থান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে।

তিনি একজন দূরদর্শী নেতা, তিনি বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে এমন একটি কর্ম সংস্কৃতি তৈরি করেছেন যা সত্যিই মানুষের জন্য কাজ করে। সাফিয়াতের নেতৃত্বের দক্ষতা সম্পর্কে আরও জানতে এবং তরুণ ও উদীয়মান ভবিষ্যৎ লিডারদের জন্য তার পরামর্শের জন্য তার সাথে কথা বলেছে বিজনেস ট্যাবলয়েড।  


খুচরা বাজার একটি ক্রমবর্ধমান ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার। এখানে সফল হতে হলে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন উদ্ভাবনের প্রয়োজন।

এই প্রতিযোগিতার বাজারে বসুন্ধরা গ্রুপকে একটি বৈশ্বিক রূপ দেয়ার বিষয়টি আপনি কীভাবে পরিচালনা করেছেন?

বসুন্ধরা গ্রুপ পুরো জাতির জন্য সুযোগ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে, এটিই আমাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে সবাই এখানে একসাথে কাজ করে এবং নিয়মিত নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করে।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি "জনগণের জন্য, দেশের জন্য"। নতুন উদ্যোগে আমরা সবসময় আমদানির বিকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। আমরা শিল্পটি বিশ্লেষণ করে আমদানি-বিকল্প পণ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, এজন্য আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।  

বসুন্ধরা গ্রুপ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারেও গ্রাহকদের ন্যায্য মূল্যে উচ্চমানের পণ্য সরবরাহ করে। নিয়মিত এবং ভবিষ্যতের গ্রাহকদের উচ্চমানের পণ্য সরবরাহ করার জন্য, আমরা কার্যকর একটি সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে ক্রয়, উৎপাদন এবং বিপণন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করেছি।

এছাড়া বিপণনের সেভেন-পি এর অপরিহার্য অংশ হিসেবে আমরা মানুষ ও পণ্যের প্যাকেজিং নিয়ে পর্যালোচনা করে থাকি। ২০ বছর পরে একটি নতুন প্রজন্ম আসবে যাদের চাহিদা হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য। বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে অবশ্যই গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। এভাবেই আমরা নিজেদেরকে বিশ্বব্যাপী কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করছি।


আপনার অগ্রযাত্রা রিটেইল সেক্টরের অনেক উদীয়মান এবং বর্তমান তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। আপনার এই অগ্রযাত্রার শিক্ষণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আমাদের বলুন।

আমরা বিশ্বাস করি কোন সহযোগী সংগঠন ব্যতীত একটি সংস্থাকে চালানো যায় না। বসুন্ধরা গ্রুপ কেবল মেশিন আউটপুট নিয়েই নয়, মেশিনের পিছনে থাকা মানুষ নিয়েও উদ্বিগ্ন।  
আমাদের দলের মধ্যে, আমরা একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনা শৈলী বজায় রাখি। আমার মতে, মানুষ যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে এটি আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য তাদের মধ্যে দায়িত্ব এবং মালিকানার অনুভূতি তৈরি করে। আমি আমার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে কেবল নির্দেশনা দিই। এটি তাদেরকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করে নিজেদের ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করতে সাহায্য করে।

বসুন্ধরা গ্রুপের দ্রুত সম্প্রসারণের পিছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি একটি ৩৬০ ডিগ্রি চিন্তা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচামাল কেনার সময় বসুন্ধরা কেবল কাঁচামাল সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা উৎপাদনের দিকেও মনোনিবেশ করে।

এরপর, পণ্যটি উৎপাদন শেষে আমরা এর সাধারণ চাহিদা পূরণের চেষ্টা করি, ঠিক যেমন গত ৩০ বছর ধরে বসুন্ধরা এলপিজি চাহিদা পূরণ করে চলেছে। আমাদের দেশ শুধুমাত্র সিমেন্ট এবং বিটুমিন শিল্পে আমদানির উপর নির্ভর করে। বসুন্ধরাই শুধুমাত্র এই বিভাগগুলোতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা আমাদের এলপিজি, সিমেন্ট, বিটুমিন ইত্যাদির খুচরা মূল্যে প্রভাব ফেলেছে।

আমি বিশ্বাস করি এই স্বতন্ত্র কাজের শৈলী আমার পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইন ব্যবসা শুরুর অনেক আগে থেকেই আপনি খুচরা বাজারব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন। আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এবং শিক্ষা সম্পর্কে বলুন যা এখনও প্রাসঙ্গিক।

বিশ্বব্যাপী বিপণন প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমাজন এবং আলিবাবার মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে ধন্যবাদ। আমাদের দেশও এই পরিবর্তনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয় না। আমাদের দেশে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এবং নেটওয়ার্কিংয়ের খরচ অসুবিধাজনক। তবে ই-কমার্স শহর এলাকায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিস্তৃতি গ্রামাঞ্চলে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠে নি।  

আমার মতে, এখানে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যেই কিছু প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছি, কারণ এখনই আমাদের নিজস্ব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করার পরিকল্পনা নেই। তবে আমরা বিষয়টির উপর নজর রাখছি। যদি জনসংখ্যার অধিকাংশই অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সেখানে আমরাও থাকব।

তবে আমরা এখনই অনলাইনে এলপিজি'র অর্ডার নিচ্ছি। এছাড়া সারাদেশে আমাদের বেশ কয়েকটি অর্ডার পয়েন্ট রয়েছে। এছাড়া, আমরা আমাদের খাদ্য সামগ্রীর জন্য কয়েকটি প্রদর্শন ও বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছি যাতে তা প্রান্তিক পর্যায়ে আরও সুলভ হয়।

গ্রাহক সেবা এবং অভিজ্ঞতা একটি সফল ব্যবসার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গ্রাহকদের আরও ভালোভাবে সেবা দেয়ার জন্য আপনি কীভাবে এআই, এমএল, রোবোটিক্স, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং অন্যান্যগুলি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করেন?

গ্রাহকদের মন্তব্য জানার জন্য কিছুদিন আগেই হটলাইন নম্বরটি ব্যবহৃত হতো। এখন আমাদের নিজস্ব জরিপ পরিচালনা করা হয়। আমাদের একটি মিডিয়া ব্যবসাও আছে যা আমাদের নিজস্ব মনিটরিং সিস্টেম দ্বারা দৈনিক ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদিও আমরা এখনো কোন 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' প্রযুক্তি চালু করিনি। তবে আমরা এটি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি।  

আমাদের কার্যকর অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ, যাদের জন্য আমরা আমাদের পণ্যগুলোকে পরিমিত দামে সরবরাহ করতে পারি। আমাদের তথ্য ব্যবস্থাপনার সাহায্যে আমরা আমাদের পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক রাখার পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কিত আগাম তথ্য পেতে পারি। বসুন্ধরা পুরোপুরি ভোক্তাকেন্দ্রিক একটি প্রতিষ্ঠান, আমরা তাদের মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।  

উদীয়মান খুচরা উদ্যোক্তা এবং তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

খুচরা পর্যায়ে কাজ লাখ লাখ গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের জানালা খুলে দেয়। বিক্রয় প্রতিনিধি থেকে ব্যবস্থাপনা স্তর পর্যন্ত গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া, আচরণ এবং চাহিদা অবশ্যই সেলস টীমের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যের সামঞ্জস্য, গুণমান এবং সিআরএম এর মাধ্যমে প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে তথ্য পাই।

রিটেইল ইন্ডাস্ট্রিতে যারা সফল হতে চান, তাদেরকে অবশ্যই গ্রাহকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যোগাযোগ সংক্রান্ত বাধা অতিক্রম করতে হবে।   এই যোগাযোগ তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলও থাকতে হবে। এছাড়া, টিকা থাকা প্রায় অসম্ভব।

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে ব্যবসার গতিশীলতা বুঝতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বিনিয়োগের ক্ষুধা লাগবে এবং পণ্যের মান নিয়ে আপোষহীন থাকতে হবে। সর্বশেষ, অবশ্যই সততা এবং নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে।

news24bd.tv/ নকিব