ভারত থেকে আসা ভয়ংকর সাপ ‘রাসেলস ভাইপার’ ছড়িয়ে পড়েছে

ভারত থেকে আসা ভয়ংকর সাপ ‘রাসেলস ভাইপার’ ছড়িয়ে পড়েছে

অনলাইন ডেস্ক

ভয়ঙ্কর ‘রাসেলস ভাইপার’ সাপের আতঙ্কে ফরিদপুরে ৭০ বিঘা কাশবন পরিষ্কার করা হয়েছে। দেশে ‘চন্দ্রবোড়া’ নামে পরিচিত সাপটি কিছুকাল আগেও বিলুপ্ত ছিল।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বন্যার পানিতে গঙ্গা হয়ে আবারও এ সাপ দেশে এসে বংশবিস্তার করছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে।

জানা যায়, বিশ্বব্যাপী কিলিং মেশিন খ্যাত রাসেলস ভাইপার আক্রমণের ক্ষেত্রে এতই ক্ষিপ্র যে, ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে এটি কাউকে কামড়ে আবার নিজ অবস্থানে ফেরত যেতে পারে।

এ সাপের কামড়ে শরীরের আক্রান্ত স্থানের টিস্যু নষ্ট হয়ে পচন শুরু হয় সঙ্গে সঙ্গে।

সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু অবধারিত। ধানখেতে এ সাপ বেশি থাকায় কৃষকদের মাঠে কাজ করার সময় পায়ে গামবুট পরার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০১-২০২০ সালে ভারতে সাপের কামড়ে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এদের মধ্যে ৫০ ভাগ অর্থাৎ ছয় লাখ ভারতীয়ই মারা গেছেন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে।

বাংলাদেশে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে বাঘা পর্যন্ত পদ্মাপারে সাপটি এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া পাবনার রূপপুর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও মাদারীপুরের শিবচরে এ সাপ দেখা গেছে।  

রাজশাহীর পবা উপজেলায় একটি সাপ উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন বোরহান বিশ্বাস রোমন।

তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক।

রোমান বলেন, গত এক দশকে সারা দেশে ২৭২ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা গেছেন।

এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে ১৪৪ জন। গত দুই বছরে মারা গেছেন ৪০ জন।

এই গবেষক আরও বলেন, গত ১৫ দিনে ২০৭টির মতো রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মারা হয়েছে। এই সময়ে রাসেলস ভাইপারের কামড়ের শিকার হয়েছেন ১১ জন।

তাদের মধ্যে মারা গেছেন দুজন। এরা পাবনার ঈশ্বরদী ও মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা। বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এসব অঞ্চলে সাপটি বেশি থাকার অন্যতম কারণ, পদ্মার চরগুলো অনেক বড়। সেখানে রাসেলস ভাইপার সহজে বসবাস করতে পারে। খাদ্যও সহজলভ্য।

গত বছর রাসেলস ভাইপারের কামড়ে নয়জন কৃষক মারা যান। তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ী, নাটোরের গোপালপুর, রাজবাড়ীর কালুখালি ও ফরিদপুর সদরের লেকপাড়ের বাসিন্দা। ধান কাটার সময় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে বেশি আক্রান্ত হন কৃষিশ্রমিকরা।

কারণ এ সাপের শরীরের রং এবং পাকা ধানগাছের পাতার রং একই। রাসেলস ভাইপারেরও প্রিয় আবাসস্থল ধানখেত।

ফরিদপুর অঞ্চলে এ সাপটি ২০১৬ সালে প্রথম দেখা যায়। তখন থেকে বিষধর রাসেলস ভাইপারের দংশনে এ পর্যন্ত মারা গেছেন নারীসহ অন্তত ১০ জন।

সম্প্রতি এ সাপের হাত থেকে রক্ষা পেতে চরাঞ্চলের প্রায় ৭০ বিঘা কাশবন যন্ত্রচালিত মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করেন এক ব্যক্তি। ওই সময়ে মেশিনের আঘাতে কমপক্ষে ২৯টি সাপ মারা যায়।

বর্তমানে চরাঞ্চলের কাশবন ছাপিয়ে ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসনের লোকালয়েও দেখা যায় এ সাপ। এর দংশনে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।  

সাপ গবেষকদের ধারণা, বর্ষাকালে উজান থেকে নেমে আসা প্রবল স্রোতে কচুরিপানার ওপর বসে এ সাপ ভেসে আসে মুন্সীগঞ্জের মাটিতে। এরপর জেলার একাধিক স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে রাসেলস ভাইপার।

বন বিভাগের পরিদর্শক অসিম মল্লিক বলেন, ২০১৬ সালের আগে রাসেলস ভাইপার বিলুপ্তই ছিল। এখন অনেক জায়গায় এ সাপ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, ভারত থেকে বন্যার পানিতে ভেসে সাপটি বাংলাদেশে এসেছে।

তিনি বলেন, আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে যাচ্ছি। কাউকে রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও ভেনম রিসার্চ সেন্টারের অন্যতম গবেষক ড. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, রাসেলস ভাইপার অত্যন্ত বিপজ্জনক সাপ। দংশিত ৫০ শতাংশ মানুষই মারা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: 


ডাকাতির পর প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করল ৪ ডাকাত

খিলগাঁওয়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

স্পিন ছোবলে ৯ রানে ৪ উইকেট নেই নিউজিল্যান্ডের

দাফনের ৮১ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো লাশ


news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর