পাসপোর্ট অফিসে দালালদের নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা

পাসপোর্ট অফিসে দালালদের নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা

অনলাইন ডেস্ক

দুর্নীতি ঠেকাতে ও দালালদের হয়রানি কমাতে সরকারি বিভিন্ন অফিসে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়ে থাকে। তবে এবার উল্টোটা ঘটেছে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বা গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসছেন কিনা, কারা বের হচ্ছেন-এসব মনিটরিং করার জন্য অফিসের বাইরে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে দালালরা। একরামুল হক জুয়েল নামে একজন দালালের অফিস কক্ষ থেকে এ ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে পাসপোর্ট অফিসেরই সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করার কথা সেখানে উল্টো দালালরাই সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে প্রশাসনের গতিবিধি পর্যবক্ষেণের এ ঘটনা আশ্চর্যজনক বৈকি।

পাসপোর্ট বই সংকটকে পুঁজি করে অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দালাল চক্র গ্রাহকদের জিম্মি করে ফেলেছে। দালাল ছাড়া পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা ও পাসপোর্ট পাওয়া দুঃসাধ্য। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রোববার পাসপোর্ট অফিস ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

পাসপোর্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দালালদের দেওয়া ‘বিশেষ’ বা ‘সাংকেতিক’ চিহ্ন ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন জমা নেন না অফিসটির কর্মকর্তারা। ব্যক্তিগতভাবে পাসপোর্ট করতে গেলে এখানে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়।

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকাটিতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকার কথা নয়। কিন্তু দালালরা রীতিমতো এটিকে বাণিজ্যিক ভবন বানিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়; একটি বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অফিস বানিয়েছে তারা। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা লোকজনের অনেকে এটিকে পাসপোর্ট অফিসের শাখা মনে করে। বাইরে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে ‘এখানে পাসপোর্টের ব্যাংক ফি জমা নেওয়া হয়। ’ তারা বাইরে একাধিক সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে পাসপোর্ট অফিসে সামনে। যাতে কারা আসা যাওয়া করছে তা মনিটরিং করা যায়।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে পুরো পাসপোর্ট অফিস নিয়ন্ত্রণ করে একরামুল হক জুয়েল, মুজিবুল হক সোহেল, কামরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন (চন্দনাইশ), নাছির উদ্দিন (বাঁশখালী), কানাই চক্রবর্তী ওরফে কানু বাবু, মোরশেদ ও উত্তম। এ ছাড়া রয়েছে জহুর, রফিক ও রানা।

পাসপোর্ট অফিসের পক্ষে দালালদের সঙ্গে লেনদেন করেন একজন সহকারী অফিসার ও গাজী নামের একজন কর্মচারী। সহকারী অফিসার দালালদের সাংকেতিক চিহ্ন ও টাকা-পয়সা লেনদেন করেন। প্রতি বুধবার সপ্তাহের উপরি আয়ের হিসাব করা হয়। প্রতিটি পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য সরকারি ফি বাদে এক হাজার ৬০০ টাকা নেওয়া হয় গ্রাহকদের কাছ থেকে। এ টাকা পাসপোর্ট গ্রহণকারীর কাছ থেকে সরাসরি নেওয়া হয় না। দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা নিয়ে থাকেন।

মাহমুদ নামে এক দালাল বলেন, ‘এ পেশায় এসে ভুল করেছি। কাস্টমারদের কাছ থেকে আমরা যে টাকা নিই তার বেশির ভাগই অফিসে দিয়ে দিতে হয়। আমরা প্রতি পাসপোর্ট থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাই। এখানে ছোট বড় সবাই টাকা খায়। দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও পাসপোর্টের দালালি করে। ’

পাসপোর্ট অফিসের বাইরে যিনি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন সেই একরামুল হক জুয়েল বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। আমার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি। অন্য কোনো কারণে নয়। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অফিসের অভ্যন্তরে একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আমরা এসব ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করি। এর বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে সিসি ক্যামেরা বসানোর সুযোগ নেই। আশপাশের এলাকায় অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে তবে তাদেরকে সিসি ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার অধিকার পাসপোর্ট অফিসের নেই। '

news24bd.tv নাজিম