যে কারণে আপনি মেসেঞ্জার ব্যবহার করবেন না

যে কারণে আপনি মেসেঞ্জার ব্যবহার করবেন না

অনলাইন ডেস্ক

আপনি যদি ফেসবুক মেসেঞ্জারের ১৩০ কোটি ব্যবহারকারীর একজন হয়ে থাকেন তাহলে আপনি যোগাযোগের জন্য এই প্ল্যাটফর্মকে আর ব্যবহার করবেন কিনা তা নতুন করে আবার ভেবে দেখার সময় হয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুক মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা দুর্বলতা নিয়ে বিশ্বখ্যাত ‘ফোর্বস’ সাময়িকীতে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এই নিবন্ধে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট জাক ডফম্যান মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুতর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যখন অ্যাপলের বিতর্কিত সিএসএএম আপডেট এবং ব্যাকট্র্যাক শিরোনামের খবরগুলো প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে, তখন ফেসবুক চুপচাপ মেসেঞ্জারে একটি বিশাল পরিবর্তন করেছে।

অ্যাপল যা করেছে এটি তার চেয়েও আপনার নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার ওপর আরও গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

শুরু থেকেই মেসেঞ্জারের অন্যতম বড় একটি সমস্যা হল এতে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অভাব। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন হল এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে দুই প্রান্তের ব্যবহারকারীই শুধুমাত্র একে অপরকে পাঠানো বার্তা পড়তে পারে। নৈতিকভাবে এটি অ্যাপ সংশ্লিষ্ট কাউকেই তাদের মধ্যকার বার্তা পড়ার অনুমোদন দেয় না।

আর এখানেই মেসেঞ্জারের নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে।

এ অবস্থায় ফেসবুক জানিয়েছে কয়েক বছর অপেক্ষার পর অবশেষে তারা এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিষয়টি সমাধানে কিছুটা আশা দেখতে পাচ্ছেন। তারপরও এক্ষেত্রে দুটি বড় সমস্যা রয়েই গেছে। তাই মেসেঞ্জার ব্যবহার চালিয়ে যেতে চাইলে এগুলো আপনার জানা থাকা উচিত।

 

ফেসবুক ডেটা কালেকশন করে তা নিয়ে ব্যবসা করে এটা আমরা সবাই জানি। সংস্থাটি এখন ইউজার কালেকশন (ব্যবহারকারী সংগ্রহ) ব্যবসাও করছে। বিষয়টি বুঝতে শুধু সংখ্যার দিকে খেয়াল করুন। ফেসবুকের চারটি অ্যাপ রয়েছে। সেগুলো হল- ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম। এগুলো ৩ বিলিয়নেরও বেশি ডিভাইসে ইনস্টল হয়েছে। অন্য যত অ্যাপ রয়েছে তার মধ্যে কেবল ‘টিকটক’ এই উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।  

কিন্তু সব ব্যবহারকারীই এক নয়। ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম একটি অন্যটির সঙ্গে শক্তভাবে সংযুক্ত। মূল প্ল্যাটফর্ম এবং এর ফটো-শেয়ারিং সাবসিডিয়ারি (সম্পূরক) অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীকে আলগোরিদিম টাইমলাইনের সঙ্গে তাদের ভুল থেকে শিক্ষণীয় কিছু বার্তা দেয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা যখন ‘এক্সিট দ্য অ্যাপ’ বার্তাটি দেখবেন, তখন তা না করে অন্য কিছু করতে হবে।

এদিকে, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএম (সরাসরি মেসেজ)-গুলো আপনাকে আপনার সোশ্যাল গ্রাফকে সংযুক্ত করে দেখায়। সেই সমস্ত আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুকে এক জায়গায় আপনার পরিচিত সকলের সাথে যুক্ত করে।

কিন্তু এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা।

তাহলে হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তার সঙ্গে মেলানোর জন্য মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএমএস ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’-এর ক্ষেত্রে ফেসবুককে কী করতে হবে?

এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে একটি সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে সব মেসেঞ্জারই সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা। কিংবা সব এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপেই সিলভার বুলেট রয়েছে, যেটা দিয়ে সবকিছুকে গোপন এবং নিরাপদ রাখা যাবে।

news24bd.tv

অনেক নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) পেশাদাররা এ বিষয়ে অনড় যে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সর্বব্যাপী হওয়া উচিত। ডিজিটাল ফাঁকফোঁকড় খুবই বিপজ্জনক। ‘মেসেঞ্জার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের’ গুরুত্বকে সব যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডিফল্ট করার সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এটি এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি আস্থা বাড়াবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।

যদিও এ বিষয়ে একমত হওয়া যায়- তবে মনে রাখতে হবে ফেসবুক মেসেঞ্জার সম্পূর্ণ আলাদা। এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের অংশ, যা ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় তাদের বিপুল পরিমাণ পর্যবেক্ষণমূলক তথ্য সংগ্রহ করে; এটি বাচ্চারাও ব্যবহার করে এবং ব্যবহারকারীদের পরিচিত মানুষদের খুঁজতে করতে সহায়তা করে এবং তারপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আপনি কেবল হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালে এটি করতে পারবেন না।

এক্ষেত্রে একটি সহজ কথা হল- যদি আপনার সন্তান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না যে, একজন অপরিচিত মানুষ আপনার সন্তানদের খুঁজে বের করুক, তাদের প্রোফাইল দেখুক এবং গোপনে তাদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করুক।  

ফেসবুক বলছে- এটা প্রতিরোধে তাদের প্রযুক্তি আছে। কিন্তু এটি একপ্রকার নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি ফেসবুকের এমন আশ্বাসের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছি না।

কেননা, ইতোমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার এনক্রিপশনের মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন:

৭ মিনিটেই স্থগিত! পূর্ণ তিন পয়েন্ট পেতে চলেছে আর্জেন্টিনা

মাসুদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলো তালেবান

গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ তালেবানের বিরুদ্ধে

দেশের অর্ধেক ইন্টারনেট টিকটক, লাইকি আর পর্নোগ্রাফিতেই শেষ!


ফেসবুক বলেছে- মেসেঞ্জার এনক্রিপশন এই প্ল্যাটফর্মে শিশু নির্যাতনকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা হ্রাস করবে না। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে কোম্পানিটি এতটা নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে না। এই বছরের শুরুর দিকে, ফেসবুকের গ্লোবাল পলিসি ম্যানেজমেন্টের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে শিশু নির্যাতনের রিপোর্ট করা ঘটনাগুলো এনক্রিপশনসহ ‘অদৃশ্য’ বা মুছে ফেলা হবে কিনা। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আশা করি সংখ্যাগুলো কমে যাবে। যদি কন্টেন্ট শেয়ার করা হয় এবং সেই কন্টেন্টে যদি আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকে, যদি তা এমন হয় যে আমরা দেখতে পাই না তাহলে সেটি আমরা রিপোর্ট করতে পারি না। ’

এরই অংশ হিসেবে, ফেসবুক এখন বলছে যে তারা ব্যবহারকারীদের কিছু অধিকার দেবে, যা দ্বারা ব্যবহারকারী তার চ্যাট তালিকায় কে পৌঁছাতে পারে, তার রিকোয়েস্ট ফোল্ডারে কে যাবে এবং কে তাকে মোটেই বার্তা দিতে পারবে না এসব নির্ধারণ করার সক্ষমতা দেবে, যাতে করে  ব্যবহারকারীরা কাদের সাথে যোগাযোগ করবে বা করবে না তা নিজেরাই ঠিক করতে পারবে। তবে তা শিশুদের জন্য কতোটা সুরক্ষিত হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

সূত্র- ফোর্বস

news24bd.tv/ নকিব