ধর্মের কথা বলে ১০ হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এহ্সান গ্রুপ

ধর্মের কথা বলে ১০ হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এহ্সান গ্রুপ

Other

এহ্সান গ্রুপের অধিক মুনাফার প্রলোভনে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে পিরোজপুরের ১০ হাজার গ্রাহক। গচ্ছিত রাখা এসব টাকা উদ্ধারের জন্য সংস্থাটির কাছে বারবার ধরণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এসব মানুষরা। প্রতিকার পেতে নিয়মিত চলছে মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। আর বরাবরের মত জেলা প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিরোজপুর সদরের খলিশাখালী এলাকার আব্দুর রব খানের বড় ছেলে মুফতি রাগীব আহসান ২০১০ সাল থেকে এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামের একটি এমএলএম কোম্পানী শুরু করে। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার প্রতিশ্রুতি ও ইসলাম ধর্মের নানা কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। এক লক্ষ টাকার বিপরীতে গ্রাহকদের মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার প্রলোভন দিয়ে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় পাঁট হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানাযায়,ঠিক ১৩-১৪ বছর আগে একটি মসজিদে নামমাত্র বেতনে ইমামতি করতেন মুফতি রাগীব আহসান।

পরে ইমামতি ছেড়ে যোগ দেন একটি এমএলএম কোম্পানীতে। সেখানে প্রাথমিক সদস্য হিসাবে চাকুরী নেন। পরবর্তীতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই পিরোজপুরে এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামের একটি কোম্পানী গড়ে তুলেন। পরবর্তিতে যা এহ্সান গ্রুপ পিরোজপুর বাংলাদেশ নামে পরিচিতি পায়। এর অধীনে রাগীব গড়ে তোলে ১৪ টি প্রতিষ্ঠান।

এই প্রতারক রাগীব শুধু পিরোজপুর জেলায়ই নন প্রতারণার জাল পাতেন ঝালকাঠি, ভোলা, বাগেরহাট, খুলনা, পটুয়াখালীসহ আশেপাশের প্রায় ২০টি জেলায়। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মই ছিলো একজন গ্রাহক আরো কযেকজন নতুন গ্রাহককে জোগাড় করে দিবে। এতে এই গ্রাহকও পাবেন শতকরা হিসেবে টাকা।

আবুল কালাম ও মসজিদের ইমাম রফিক মোল্লাসহ বেশকিছু  ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক জানান, শুরুর পর কয়েক বছর ঠিকমত গ্রাহকদের সাথে লেনদেন স্বাভাবিক রাখলেও, প্রায় ২ বছর ধরে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে টালবাহনা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর তাদের অফিসের কার্যক্রমও বন্ধ করে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও কর্মচারীরা।

গ্রাহকরা আরো অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক রাগীব আহসান বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও তিনি ঠিকই বাংলাদেশে আছে। পুলিশ-প্রশাসন চাইলেই অভিযান চালিয়ে ধরতে পারে। কেনো যে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সেটা নিয়ে হতাশ তারা। এদিকে নিজেদের গচ্ছিত টাকা না পেয়ে অসহায় ভুক্তভোগী মানুষগুলোর মাঝে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক।

আরও পড়ুন


যুদ্ধ ও সন্ত্রাসমুক্ত আফগানিস্তান দেখতে চায় ইরান: আব্দুল্লাহিয়ান

নার্স দিয়ে ডেলিভারি, দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

তালেবানের নেতৃত্ব যার হাতে, তার ছেলে আত্মঘাতী হামলাকারী!

তালেবানের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথার মূল্য ৫০ লাখ ডলার!


এহ্সান গ্রুপের অধীন একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমবায় অধিদপ্তর থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহে অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমবায় অফিসার মোঃ মুজিবুল হক।  

এদিকে এহসান গ্রুপের জালিয়াতির এ বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়েছে বলে জানান প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির সদস্য ও পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুনিরুজ্জামান নাসিম আলী।

তবে সমবায় দপ্তর থেকে নেয়া লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে আমানত সংগ্রহ করায় তা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। পাশাপাশি জনগনকে তাদের সাথে লেনদেন না করার আহবানও জানান তিনি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে এহসান গ্রুপের কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের জোর দাবি সরকার তাদের গচ্ছিত রাখা টাকা ফিরিয়ে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

news24bd.tv এসএম