তিন সংখ্যাটি আসলেই ঘটনাবহুল

তিন সংখ্যাটি আসলেই ঘটনাবহুল

Other

সেদিন একটা অনলাইন পত্রিকায় 'তৃতীয় বিয়ে করেছেন যেসব তারকারা' শিরোনামে একটি লেখা পড়েছিলাম। ভেতরে অপূর্ব, শমী কায়সার, হাবিব ওয়াহিদ, ন্যান্সি, সালমান শাহের সাবেক স্ত্রী সামিরার কথা লেখা হয়েছে।

হঠাৎ মনে হলো, ৩ বা তিন একটি ঘটনাবহুল সংখ্যা।

বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের ছড়ায়ও একসাথে তিন বিয়ের গন্ধ পাওয়া যায়ঃ 

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্যা দান।


এক কন্যা রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যা খান,
এক কন্যা রাগ করে বাপের বাড়ি যান।

আবার, তালাকের ক্ষেত্রে আছে তিন তালাক।

লালনের গানে খুঁজে পাই তিন পাগলের কথা:

তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে।
 
তিনদিন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েও দেখা না পাওয়ার গান শোনা যায় রুনা লায়লার কন্ঠে:

বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না, 
বন্ধু তিনদিন।

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছড়া লিখেছেন:
  
ছিপখান তিন দাঁড় 
তিনজন মাল্লা
চৌপর দিনভর
দ্যায় দূর পাল্লা!

সৈয়দ শামসুল হকের একটা স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের নাম- তিন পয়সার জ্যোছনা।   

পড়াশোনায় ও খেলাধুলায় প্রথম তিন জনকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড ঘোষণা করা হয়। সিজিপিএ গ্রেডিং সিস্টেম আসার আগে গ্র্যাজুয়েট ও পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েট লেভেলের রেজাল্টে তিনটি ক্লাস অর্থাৎ ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ও থার্ড ক্লাস দেওয়া হতো।
জনপ্রিয় হিন্দী মুভি- থ্রি ইডিয়টস
এছাড়া কোন জিনিসের মান খারাপ হলে বা কারো খারাপ রুচির প্রতি কটাক্ষ করতে বলা হয়- একদম থার্ড ক্লাস।

কেউ হুদাই লাফালাফি করলে আমরা বলি- ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চা।

তিন তাসের খেলা খুবই জনপ্রিয়। তিন টেক্কা একসাথে খুব পাওয়ারফুল। আবার কথায় বলে, দানে দানে তিন দান।

ফুটবল বা ক্রিকেটে কোন প্লেয়ারের হ্যাট্রিক মানে ৩ গোল বা ৩ উইকেট বিশেষ মর্যাদা বহন করে।

কুস্তিতে একজন প্লেয়ার শায়িত আরেকজন প্লেয়ারের উপর চেপে বসলে রেফারী এসে রিং এর ফ্লোরে তিনবার বাড়ি দেয়। তারপর যে কুস্তিগীর উপরে থাকে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা  হয়।

দৌড় প্রতিযোগিতায় স্টার্টিং কিউ হয়- ওয়ান টু থ্রি গো। তেমনি সিনেমার শুটিংয়ে- ওয়ান টু থ্রি অ্যাকশন।  
  
কথায় বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে বলা হয়- সত্যি। সত্যি। সত্যি। তিন সত্যি।

আমরা তিনবেলা খাই। এছাড়া তৃতীয় বিশ্ব, তৃতীয় নয়ন, তৃতীয় মাত্রা শব্দগুলো বহুল প্রচলিত। এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ নাকি আমাদের চোখ রাঙাচ্ছে।

ছোটবেলায় পড়েছি কিশোর থ্রিলার তিন গোয়েন্দা।   থ্রি মাস্কেটিয়ার্স । দেখেছি জনপ্রিয় কমেডি সিরিজ- থ্রি স্টুডেজ। হূমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক- তারা তিনজন। জনপ্রিয় হিন্দী মুভি- থ্রি ইডিয়টস। এছাড়া রয়েছে থ্রি ডি বা ত্রিমাত্রিক মুভি ও মোবাইলের থ্রি জি নেটওয়ার্ক।

মেয়েদের পছন্দের পোশাকের নাম- থ্রি পিস
  
মেয়েদের পছন্দের পোশাকের নাম- থ্রি পিস। ত্রি-চক্রযান রিকশায় চড়তে আমরা খুব ভালোবাসি।
    
কোন বিষয়ে ঝুলে থাকা অবস্থাকে বলে ত্রিশঙ্কু অবস্থা বা দশা। ত্রিভুবন বলতে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালকে বোঝায়। আছে ত্রিভুবন নিয়ে গান- ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়। নেপালের কাঠমুন্ডুতে অবস্থিত এয়ারপোর্টের নাম- ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। আরো আছে- ত্রিরত্ন। পার্থ বড়ুয়াসহ তিন সঙ্গীত শিল্পীর Rap গানের ক্যাসেট 'ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা' একসময়ে দারুণ হিট ছিল। জায়গার নাম আছে- ত্রিশাল, ত্রিমোহিনী, তিন রাস্তার মোড়, তিন পুলের মাথা। অংকশাস্ত্রে আছে- ত্রিভুজ, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি। ত্রিমুখী লড়াই চলে। গানের একটি জনপ্রিয় তাল হচ্ছে ত্রিতাল। ত্রিফলা হলো একটি অতি প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদিক ঔষধি যা তিনটি ফল দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ত্রিপিটক বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। 'ত্রিপিটক' শব্দের অর্থ তিনটি পেটিকা বা খন্ড। ত্রিশূল বর্শাকৃতি এক ধরণের অস্ত্র যা সনাতন ধর্মের প্রতীক। কারো কারো বাড়ির ত্রিসীমানায়  ঢোকা নিষেধ আছে। আবার মানুষের নামও হয়- কবি ত্রিদিব দস্তিদার, অভিনেতা পংকজ ত্রিপাঠী প্রমুখ।  
  
মোটামুটিভাবে ৩ সংখ্যাটা আসলেই ঘটনাবহুল।

লেখার প্রথম দিকে লিখেছিলাম লালনের গানের কথা- তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে। তিন পাগলের একটা জোকস বলে শেষ করছি। জোকসটার নাম দেয়া যেতে পারে- তিন পাগলের হলো মেলা সুইমিংপুলে এসে:

পাগলা গারদের এক ডাক্তার তিন পাগলের পরীক্ষা নিচ্ছেন। পরীক্ষায় পাস করলে তিনজনকে পাগলা গারদ থেকে মুক্তি দেয়া হবে, কিন্তু ফেল করলে আরো তিন বছরের জন্য আটকে দেয়া হবে।  

আরও পড়ুন:

কনস্টেবল পদে বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন করবেন যেভাবে

দল ঘোষণার পর অধিনায়কত্ব ছাড়লেন রশিদ, নতুন অধিনায়ক ঘোষণা

এবার ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি

মেসির হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনার বড় জয়


ডাক্তার একে একে তিন পাগলকে এনে একটা জলবিহীন ফাঁকা সুইমিংপুলের সামনে নিয়ে ঝাঁপ দিতে বললেন।  

প্রথম পাগল তৎক্ষণাৎ তাতে ঝাঁপ দিয়ে পা ভেঙে ফেলল।   

দ্বিতীয় পাগলটিও ডাক্তারের নির্দেশমতো তাতে ঝাঁপ দিল এবং হাত ভেঙে ফেলল।  

সব শেষে তিন নম্বর পাগলটিকে আনা হলো। তিন নম্বর পাগলটি কোনোমতেই ঝাঁপ দিতে রাজি হল না।
   
ডাক্তার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘আরে, তুমি তো সুস্থ হয়ে গেছ! যাও, তুমি মুক্ত। তবে একটা কথা বলো তো, তুমি পুলে ঝাঁপ দিলে না কেন?’ 

তিন নম্বর পাগলটি নির্দ্বিধায় জবাব দিল, ‘দেখুন ডাক্তার বাবু, আমি সাঁতার একেবারেই জানি না!সুইমিংপুলে যা গভীর পানি দেখলাম। লাফ দিয়ে ডুবে মরবো নাকি!

news24bd.tv/ নকিব