আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারতের কূটনৈতিক বিজয়
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় লক্ষ্মী পুরী'র কলাম

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারতের কূটনৈতিক বিজয়

Other

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আগস্ট মাসে ভারতের কিছু ঐতিহাসিক স্মৃতি রয়েছে। ২০১১ সালের লিবিয়ার বিপক্ষে কূটনৈতিক বিজয় তার মধ্যে অন্যতম। এর ঠিক ১০ বছর পর আফগানিস্তানে রাজনৈতিক ভূকম্পন আবারও ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

তবে ভারত খুব সফলতার সাথেই তা উতরে গেছে।

খুবই ঠান্ডা মাথায়, ভারত তার জাতীয় স্বার্থ এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বিশ্বের মানুষের সুরক্ষা ও উন্নতির দিকে এগিয়ে গেছে। যা ২০২১ সালের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম বড় সাফল্য। তিনি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং প্রতিনিধিহীনদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন। সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ে এর আগে প্রস্তাব উত্থাপন করে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

ভারত নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (১৪) ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি আফগানিস্তান, সোমালিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মালি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে, চারটি পশ্চিম আফ্রিকা ও সুদান এবং পাঁচটি প্রেস স্টেটসমেন্ট।

ভারত একটি আন্তর্জাতিক ঐকমত তৈরি করার জন্য সামুদ্রিক নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা এবং সন্ত্রাস দমন বিষয়ক তিনটি আইন সাক্ষর বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ৯ আগস্টের ঘটনাটি ছিলো সামুদ্রিক নিরাপত্তার একটি সামগ্রিক ধারণা, ইউনাইটেড নেশন কনভেনশন ল' অফ দ্য সি- এর ভূমিকা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে। একটি নতুন আন্তর্জাতিক সমুদ্র নিরাপত্তায় অবদান রাখার বিষয়ে এর ফলাফল ভারতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে দৃঢ় করেছে।

শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে এবং তাদের প্রযুক্তির উন্নয়নে 'প্রটেক্টিং দ্য প্রটেক্টরস: টেকনোলজি অ্যান্ড পিসকিপিং' নামে ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। এছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের বৈশ্বিক কাউন্টার টেরোরিজম স্ট্র্যাটেজিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য "সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি" শিরোনামে ভারতের আট দফা কর্মপরিকল্পনার উপর একটি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।  

মিয়ানমার, মালি, সোমালিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইথিওপিয়া, হাইতি ইত্যাদি দেশ ভারতের পরামর্শ মেনে নিলেও আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারতের কূটনৈতিক ক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হয়।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ-২৫৯৩ এর প্রস্তাবটিতে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল ও প্রতিবেশি দেশের ওপর হামলা চালানোর উদ্বেগটিকে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। তে দাবি করা হয় যে, আফগান ভূখণ্ডকে কোনো দেশকে হুমকি বা আক্রমণ করতে বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় বা প্রশিক্ষণ দিতে, অথবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বা অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে না।

এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ-১২৬৭ প্রস্তাবটিতে যেমন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ সহ অন্যান্য গোষ্ঠীকে দেখা হয়, তার সাথে তালেবানকে একই কাতারে ফেলে দেয়া হয়। এছাড়া প্রস্তাবটির ফলে তালেবানরা বিদেশীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার অনুমতি দেয় এবং গত ২৭ আগস্টের বিবৃতি মেনে আফগানদের যেকোন সময় বিদেশে যাওয়া-আসার ব্যাপারে সম্মত হয়।  

তালেবানকে নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বলা হয়েছিল, যা ভারতের ক্ষেত্রে হিন্দু ও শিখ আফগানদের ওপরও বর্তায়। সেই সাথে সব পক্ষকেই আফগানিস্তানে গত ২০ বছরের অর্জন রক্ষা করতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ, নারীদের সমান অংশগ্রহণে, আলোচনার রাজনৈতিক সমঝোতা এবং আইনের শাসন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ-২৫৯৩ এ ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পথ দেখানোর জন্য কিছু মৌলিক মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে যা কূটনৈতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনও লাভ করেছে।  


বিয়ে ছাড়াই আবারও মা হচ্ছেন কাইলি জেনার

বলিউড পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের প্রস্তাবে মিমের না!

দেশমাতা, আমাকে কি একটু নিরাপত্তা দিতে পারেন


ফ্রান্স ও ব্রিটেন প্রস্তাবটির পক্ষে থেকে তালেবানকে সতর্ক করে দেয়। আর রাশিয়ার জন্য এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নেয়া একটি মধুর প্রতিশোধ। সেইসাথে চীন এই প্রস্তাবটিকে সমর্থন দিয়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালি করেছে।

রাশিয়া ও চীন দুই দেশই তালেবানের উত্থানে নিজেদের বিজয়ী বলে ভাবতে পারে, যেখানে ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সেনা প্রত্যাহার করেছে। সুতরাং তারা নিজেদের একটি মাঝামাঝি জায়গায় রাখার চেষ্টা করছে।  

এই আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তাদেরকে যে ভেটো না দিতে রাজি করতে পেরেছে এটাকেই একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় বলে উল্লেখ করা যায়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করেন এবং ভারতের এই কূটনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করেন।

লেখক : লক্ষ্মী পুরী, (জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব এবং ইউএন উইমেনের উপনির্বাহী পরিচালক)।

news24bd.tv/আলী