ডায়োজিনিস দ্য সিনিক হতে পারেন আমাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!

ডায়োজিনিস দ্য সিনিক হতে পারেন আমাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!

Other

প্রজ্ঞা সেটাই যা বুঝতে সাহায্য করে জীবনে কী প্রয়োজন আর কী প্রয়োজন নয়। থিওডোর লেভিট বলেছিলেন - Anything in excess is a poison, প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন কিছুই বিষ। এই কথাটার যথাযথ প্রয়োগ আমরা যদি কারো জীবনে পেয়ে থাকি সেটা সম্ভবত দার্শনিক ডায়োজিনিসের জীবন দর্শনেই খুঁজে পাই।

ডায়োজেনিস, যিনি ডায়োজেনিস দ্য সিনিক নামেও পরিচিত, ছিলেন গ্রিক দার্শনিক এবং সিনিক দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বিতর্কিত চরিত্র।

তিনি কৃষ্ণ সাগর উপকূলে একটি আইওনিয়ান উপনিবেশ সিনোপে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শহরের মুদ্রা তৈরীর কারখানায় কাজ করতেন।

আলেকজান্ডার ডায়োজিনিসের কথা শুনে ঠিক করলেন দেখা করবেন। ডায়োজিনিসের যেখানে থাকতেন সেখানে গিয়ে দেখলেন ডায়োজিনিসের আবাস হলো পরিত্যাক্ত বিশাল একটি টব বা মদের ভাড়, তিনি সামান্য কাপড় পরে আছেন, দেখতে পাগল ধরণের।

ডায়োজিনিসের সামনে গিয়ে আলেকজান্ডার বললেন, “আমি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেইট। ”

ডায়োজিনিস বললেন, “আমি ডায়োজিনিস দ্য সিনিক। ” আলেকজান্ডার বললেন, “আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন না?” ডায়োজিনিস বললেন, “কেন? তোমাকে ভয় পেতে হবে কেন? ‍তুমি ভালো না খারাপ?” আলেকজান্ডার বললেন, “অবশ্যই ভালো। ” ডায়োজিনিস বললেন, “তো ভালো জিনিসকে কেউ ভয় পায় ?”

ডায়োজিনিসের সাথে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন আলেকজান্ডার এবং তিনি তার সঙ্গীদের বললেন - “আমি যদি আলেকজান্ডার না হতাম, তবে ডায়োজিনিস হতে চাইতাম!” সেদিনের পর থেকে তিনি নিয়মিত আসতেন ডায়োজিনিসের কাছে। একবার ডায়োজিনিস আলেকজান্ডারকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?” আলেকজান্ডার বললেন, “সমস্ত গ্রীস নিজের আয়ত্তে আনা। ”
ডায়োজিনিস জানতে চাইলেন, তারপর? আলেকজান্ডার উত্তর করলেন, সমস্ত এশিয়া মাইনর নিজের আয়ত্তে আনা। তারপর? সমস্ত পৃথিবী নিজের আয়ত্তে আনা।

ডায়োজিনিস পাগলাটে টাইপ মানুষ, তিনি লেগে থাকলেন তার জবাবের শেষ জানার জন্য এবং বললেন “তারপর?” আলেকজান্ডার উত্তর দিলেন, তারপর আর কী! বাড়িতে বসে বসে বিশ্রাম নেবো! ডায়োজিনিস তখন হেসে বললেন, “হে হে, সে কাজটি তো তুমি এখনই করতে পারো।

যাই হোক, ডায়োজেনিস তার জন্ম শহর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তিনি অবশ্য তার জন্য কোনো অনুশোচনা করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাসনই আমাকে দার্শনিক বানিয়েছে’। তাঁকে দাস হিসাবে বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হলে তিনি বলেছিলেন,' আমাকে এমন কারো কাছে বিক্রি করো যার মনিবের প্রয়োজন। '

ডায়োজিনিস সব সময়  যেভাবে পছন্দ করতেন, সেভাবেই চলতেন। কথা বলার অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেলিন, ‘বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা মানুষের সবচেয়ে সেরা সম্পদ। ' ডায়োজিনিস এই স্বাধীনতা ব্যবহার করেছিলেন গ্রিকদের বিরুদ্ধে, তাদের ভণ্ডামীগুলোকে তিরষ্কার করতে। তাঁকে নিয়ে লেখা এক বইতে বলা হয়েছে, উনাকে বাজারে লন্ঠন হাতে হাজির হতে দেখে; কী করছেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি আসলে মানুষ খুঁজছেন’। হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজে বেড়ানোর শব্দকল্প এই ঘটনা থেকেই এসেছে।

আরও পড়ুন


দীর্ঘ ১৮ মাস পর খুললো স্কুল-কলেজ

কানাডায় ৯/১১ এর বিশ বছর অতিক্রম নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত

বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

৫০ বছরের বৃদ্ধের ধর্ষণে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা


হ্যারিকেন দিয়ে সৎ মানুষ খোঁজার প্রচেষ্টায় লোকজন যথেষ্ট অপমানিত হওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রিসের কোথায় তিনি সৎ আর ভালো মানুষ খুঁজে পাবেন, কেউ কি বলতে পারবে’? ধর্ম, খাদ্য, বাসস্থান, পরিধেয় ইত্যাদি সব কিছু নিয়ে তিনি প্রথার বিরোধী ছিলেন। তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ করতেন প্রচলিত রীতি এবং নিয়মের বিরুদ্ধে। সিনিকরা নৈতিক ক্ষেত্রে সুখবাদ বিরোধী ছিলেন। প্রচলিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং আচারের প্রতি তারা অবজ্ঞা প্রদর্শন করতেন।

ডায়োজিনিস প্লেটো, সক্রেটিসের মতের বিরোধীতা করতেন প্রচন্ড বিদ্রুপের সাথে। প্লেটো তার সম্পর্কে বলেছিলেন, “এ সক্রেটিস গণ ম্যাড”। যদি নির্বাসন তাকে একজন দার্শনিক বানিয়ে থাকে, এর কারণ নির্বাসন তাকে দারিদ্রের মতো অমূল্য উপহারও দিয়েছে।

যখন একেবারে বৃদ্ধ তখনও ডায়োজিনিসের এত কিসের ব্যস্ততা, এথেন্সবাসী জানতে চায়। ডায়োজিনিস বলেন 'গোল পোস্টের কাছে এসে কি আমার দৌড় কমানো উচিৎ?' বয়স বাড়ছে বলে আমাদের যে আক্ষেপ তা নিতান্তই গৌণ ছিলো ডায়োজিনিসের কাছে।

বর্তমান সময়ে, যেখানে মানুষ কেবল যশ খ্যাতি এবং ঐশ্বর্যের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলেছে, যেখানে মানুষের বিলাসিতার চাদরে মোড়ে থাকার প্রবণতা বেড়েছে; সেখানে ডায়োজিনিস দ্য সিনিক হতে পারেন আমাদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রজ্ঞার এমন সুচারু ব্যবহার এবং নির্মোহ জীবনযাপন থেকে শিক্ষা নেয়া যেতেই পারে। তিনি তাঁর উদ্ভট উদ্ভট কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে সহজ উপায়ে মানুষদেরকে বাস্তব জীবনের শিক্ষা দিয়েছেন।

news24bd.tv এসএম