সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ভাই-ভাবী ও তাদের দুই সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একমাত্র আসামী ছোট ভাই রায়হানুর রহমানকে দোষী সাব্যস্থ করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদেশে আসামীকে সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী রায়হানুর রহমান সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের মৃত ডা. শাহাজাহান আলীর ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামীর বড় ভাই শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। ছোট ভাই রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে সে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুরকে।
মামলার তদন্তে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাই রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তদন্তে ২৮ জনের সাক্ষী ও রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রায়হানুর রহমানকে একমাত্র আসামী করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আরও পড়ুন
বিএনপির অবাধ মিথ্যাচার ফ্যাসিবাদি মানসিকতার অংশ: ওবায়দুল কাদের
চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো নিয়ে যা জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ের পর আবারও নতুন সুখবর দিতে যাচ্ছেন শখ
যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন ২৪ সেপ্টেম্বর
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। গত ১৪ জানুয়ারি আসামী রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৭ জন সাক্ষী ও আসামীপক্ষে একজন সাফাই সাক্ষী দেন। সাক্ষীর জবানবন্দি ও নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী রায়হানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন।
নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। এদিকে মামলার রায় শোনার পর রায়হানুলের স্বজনরা আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ রায় চাঞ্চল্যকরা এ মামলার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকান্ডে ১০ মাস ১৬ দিন পর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মামলার যে রায় হয়েছে তাতে আগামিতে কোন ব্যক্তি যাতে এ ধরণের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস না পায় তার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।
আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম হায়দার আলী বলেন, এ বিচারে তিনি খুশী হতে পারেননি। মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে এ রায় এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
news24bd.tv এসএম