স্কুল বন্ধ থাকাই কী বাল্যবিয়ে বাড়ার একমাত্র কারণ?

আনোয়ার সাদী

স্কুল বন্ধ থাকাই কী বাল্যবিয়ে বাড়ার একমাত্র কারণ?

Other

স্কুল বন্ধ থাকাই কী বাল্য বিয়ে বাড়ার একমাত্র কারণ? এই প্রশ্নটি গত কয়েকদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এর জবাব আমি কী পেয়েছি, তা আপনাদের জানাবো। তবে তার আগে বাল্য বিয়ের একটা পরিসংখ্যান আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।  

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও এর বরাত দিয়ে সমকাল পত্রিকা জানায়, গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসে ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।

বাল্যবিয়ের শিকারদের, অর্ধেকেরই বয়স ১৬-১৭ বছর। ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সে। ১ দশমিক ৭ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১০-১২ বছর বয়সে।

দশ বছর বয়স কী বিয়ে করার বয়স? এই বয়সের মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সংসারের মতো দায়িত্বপূর্ণ একটা সংগঠনের হাল ধরতে পারে না।

এটা আমরা সবাই জানি। তাহলে কী পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা  একটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে পারে, তা একটা ভাবনার বিষয়। টাকা নেই তাই বড় করার জন্য অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান দেওয়ার সঙ্গতি নেই, এটা একটা কারণ হতে পারে। বখাটেদের অত্যাচারে, নিরপাত্তাহীনতায় ভূগে, সমাজের চাপে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। আরো কিছু কারণ হয়তো থাকে, তার সঙ্গে সরাসরি স্কুল খোলা বা বন্ধের কোনো যোগসূত্র নেই।  

এখন বলি, স্কুল কীভাবে বাল্য বিয়ে ঠেকাতে পারে। এক. স্কুলে মেয়েদের পড়ার খরচ নেই বললেই চলে। অনেকে ক্ষেত্রে বৃত্তির নামে কিছু টাকা পাওয়া যায়। দুই. পড়ালেখা শেষ করে মেয়েরা চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তাতে পরিবারেরও উপকার হবে, এমনটা মনে করা। তিন. মেয়েরা দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকে, ফলে পরিবারের সদস্যর নিরাপদ বোধ করে। চার. স্কুলে অন্য সহপাঠিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ হয়, ফলে বাল্য বিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়েদের আন্তরিক চেষ্টা থাকে।  

আরও পড়ুন:


স্কুল খোলা মানেই কী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত হওয়া?

বাংলাদেশে যারা গান শেখে, তাদের কোনো স্বপ্ন আছে কী?

তারকারা সবাইকে আনন্দে রাখেন, কিন্তু তাদের অনেকের জীবন কষ্টে ভরপুর

রাতের রাজা বা কোনো জ্বিনকে আটক করা যাবে না


করোনা কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব সহায়তা কী উধাও হয়ে গেছে? এটা একটা কোটি টাকা দামের প্রশ্ন।  

দারিদ্র ও নিরাপত্তাহীনতা, এই দুটি বিষয় সমাজ থেকে দূর করার জন্য আলাদা উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আছে।  

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, অভিভাবকদের কেউ কেউ মনে করেন, মেয়ে জন্ম হয়েছে কিছুকালের অতিথি হয়ে। বিয়ে করে দূরে চলে যাওয়াই নিয়তি। এই মানসিকতাও কারো কারো মতে, অল্প বয়সে বিয়ের অন্যতম কারণ। এই মানসিকতা কীভাবে ক্ষতি করে, কেন এই ভাবনা থেকে দূরে সরে আসা উচিত তা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। তবে একটি কথা না বললেই না, যাদের বাল্য বিয়ে হয়ে গেলো, তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়ার দায়, তাদের আশপাশের বুঝদার বড়রা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

লেখাটি নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির সিনিয়র নিউজ এডিটর, আনোয়ার সাদী-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া।  

(সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক