রেফারেন্সের পাওয়ার!

রেফারেন্সের পাওয়ার!

Other

খুব সুন্দর, দেখতে দামি জামা পরে, চুলে শ্যাম্পু করে, ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে, ভালো করে সেজেগুজে, আমার সবচেয়ে দামি ব্যাগ, ঘড়ি আর জুতা (যার কোনোটাই আমার কেনা নয়-অবশ্যই) নিয়ে বের হচ্ছি, বুয়া আমার দিকে হাঁ করে চেয়ে আছে।

শেষে আর থাকতেই পারল না, বলেই ফেলল— আপা, আপনি কই যান? কারো বিয়ে নাকি? বলে আবার চুপ মেরে গেল। কারণ বান্ধবীর বিয়েতে আমি যে একটা সোয়েটার পরে চলে গেছিলাম সেইটা উনার নিজের চোখে দেখা। যেহেতু ওই ব্যাপারটা তার একদম ভালো লাগে নাই তাই উনি ওইটা ভুলতেও পারেন না।

 

আমি উনার ভুল ভাঙায়ে দিলাম। বললাম, সরকারি অফিসে যাবো তো, এজন্য ভালো জামা কাপড় পরে যাচ্ছি। না হলে তো পাত্তাই দিবে না। সঙ্গে একটা ফ্রি টিপস দিয়ে দিলাম— কখনো ব্যাংক, পোস্ট অফিস, পাসপোর্ট অফিস কিংবা যে কোনো সার্ভিস সেক্টরের অফিসে যাওয়ার আগে আপনার সবচেয়ে দামি জামা কাপড় পরে যাবেন।

উনি বললেন, আমি ব্যাংকে যাব কী জন্যে? আমি তো পড়ালেখাই জানি না! আমি পড়ালেখা জানি, তাতে কোনো লাভ হয় না। আমি চাই যে কোনো কাজ যেটা বাংলাদেশে বৈধ, সেটা বৈধভাবে করতে। সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে, কিংবা মামা চাচার পরিচয় দিয়ে কোনো কাজ করা— এইটা আমাকে একটা মানসিক নিপীড়নের মধ্যে ফেলে।

কিন্তু কোনো কাজ আমাদের দেশে সোজাভাবে করা যায় না। ভার্সিটির সার্টিফিকেটের জন্য ৯ বছর ঘুরলাম। কত হাইকোর্ট দেখলাম। তারপর রেফারেন্সে একদিনের মাথায় সার্টিফিকেট পাইছি। কোনো হল-ডিপার্টমেন্ট-রেজিস্ট্রার বিল্ডিং গমন ছাড়াই। পাসপোর্ট অফিসেও তাই। যে ই-পাসপোর্ট করাই যাবে না, টাইম স্লট খালি নাই ওয়েবসাইটে, সেটাও হয়ে গেল কিছু ছাড়াই— রেফারেন্সে।  

আমার বান্ধবীর কথা শুনেন। সে সচিবের ছেলের বউ। সে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স করছে বাড়ির ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে। ড্রাইভিং এর ড না জানলেও সে লাইসেন্স পেয়ে গেছে, কারণটা আর নাইবা বললাম।  

বান্ধবী পর্যন্ত যাওয়া লাগবে না আমার নিজের বোনের পাসপোর্ট ৩ বার সংশোধন করতে হইছে। ওর নাম সুচিস্মিতা তিথি। বারবার পাসপোর্টে নাম আসে সুস্মিতা তিথি। নাম সংশোধন করা চাট্টিখানি ব্যাপার? তার উপর রেফারেন্স ছাড়া! তৃতীয়বার সংশোধনের লাইনে দাঁড়ানো আমরা দুই বোন। কাউন্টারে আমি ইচ্ছা করে ওর পিছনে দাঁড়ালাম। বললাম, তুমি কথা বল। ও কাউন্টারের লোককে বলল, আমার নাম আবারও ভুল আসছে। নাম হবে সুচিস্মিতা, লেখা হইছে সুস্মিতা। আপনারা এতবার একই ভুল করেন কেন? 

আরও পড়ুন


আশ্রয়ণ প্রকল্প: এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি, এটা কারা করলো?

আগের স্ত্রীকে তালাক না দিয়েই মাহিকে বিয়ে করেছে রাকিব

আমরা কখনো জানতামও না যে এই সম্পদ আমাদেরই ছিলো

নাশকতার মামলায় নওগাঁর পৌর মেয়র সনিসহ বিএনপির ৩ নেতা কারাগারে


লোকটা ওকে এমন ধমক দিল! বলল, এগুলা আবার কী নাম! মানুষের নাম সুস্মিতাই না হয়, সুচিস্মিতা আবার মানুষের নাম হয় নাকি? এগুলা আবার কী নাম? আমার ছোটবোন তো একদম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এবার আমি সামনে গিয়ে বললাম, আপনার নাম আকরাম কেন, মানুষের নাম মফিজই না হয়, আপনার নাম মফিজ কেন না, আকরাম আবার কেমন নাম? (তার নেমপ্লেটে নাম লেখা ছিল আকরাম)।

লাইনের লোকসব হাহা করে হাসতে শুরু করল। আমার ধমকে সে লোক লবণ পড়া কেঁচোর মত গুটায়ে গেল। সে হয়ত ভাবছিল আমি ওকে ধমক দিচ্ছি মানে আমি কোনো কেউকেটা। তাই আর ঘাটায়নি। ক্ষমতা কাঠামো থেকে দূরের লোকদের কী পরিমাণ হেনস্তা এরা করে সেটা ক্ষমতাবানদের জন্য অকল্পনীয়।

শুধু সরকারি কেন, যে কোনো সার্ভিস সেক্টরে কাজ করা লোকজন এখনো স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা, কী কী কাগজ লাগবে সেটা একবারে জানানো আর কাজ শেষে থ্যাংকু বলা— এগুলি একেবারেই শেখে নাই।  

একটা ৫০ বছর বয়সী দেশ, এত ধনী, এত রেস্টুরেন্ট, এত বিল্ডিং, এত গাড়ি অথচ সার্ভিস এখনো এরকম— খুবই দুঃখজনক।

news24bd.tv এসএম