পবিত্র রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব

পবিত্র রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

রাসূল (সা.) পবিত্র মাহে রমজানের অপেক্ষায় থাকতেন দুই মাস পূর্ব থেকেই। এই দু’আ শুরু করতেন, 'হে আল্লাহ! আমাকে মাহে রমজান পর্যন্ত হায়াত দিন!' যদি এই মাহে মুবারককে আমরা চোখ, দিল-দেমাগ এবং জবানের পরিবর্তন করতে সক্ষম না হই তাহলে আমরা রমজান থেকে কী পেলাম? বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, যেখানে অল্প টাকায় বেশি মূল্যের জিনিস পাওয়া যায়। রমজান মাসও অনেকটা এ রকম মনে হয়।

এই মাসে অল্প আমলে বেশি সাওয়াব মেলে।

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'রমজানে নফলের সাওয়াব ফরযের সমান আর একটি ফরযের সাওয়াব ৭০টি ফরযের সমান। '  (সহীহে ইবনে খুজাইমা ১৮৮৭, শু’আবুল ঈমান ৩৩৩৬)

রমজানের মহান ফজীলত পেতে হলে আমাদের কয়েকটি কাজ করতে হবে।  

জবানের হেফাজত:  রমজানে জবানের হেফাজত করা অত্যন্ত জরুরি। মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী পরিত্যাগ করা সব সময় জরুরি।

 

তবে রমজানের বরকত ও ফজীলত পেতে হলে এগুলো পরিত্যাগ করা আরো বেশি জরুরি।  

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'রমজানে যারা মিথ্যা পরিত্যাগ করবে না আল্লাহ তা’আলা তার আহার-পানীয় ত্যাগ করার কোনো পরোয়া করেন না। ' (বোখারী ১৯০৩) 

অন্য এক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'কিছু রোযাদার এমন আছে, যাদের পিপাসা ছাড়া পবিত্র রমজানে কিছুই লাভ হবে না। আর কিছু নামাযী এমন আছে, যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই নসীব হবে না। (দারামী ২৭৬২) 

আল্লামা তীবি (রহ.)-এর ব্যাখ্যায় আছে, রোযাদার যদি সাওয়াবের নিয়্যাত না রাখে অথবা সাওয়াবের নিয়্যাত আছে কিন্তু মিথ্যা, অপবাদ আরোপ, গীবত এবং এ জাতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত না থাকে, তাহলে রমজানে ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া তার আর কিছুই লাভ হবে না। যদিও এই রোযা তাকে কাজা করতে হবে না।

আরেক হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথা বলবে না এবং অনর্থক চিল্লাচিল্লি করবে না। কেউ রোযাদারকে গালি দিলে বা তার সাথে মারামারি করতে চাইলে সে যেন তাকে বলে দেয় আমি রোযাদার। (বোখারী, মুসলিম) 

কোরআন তেলাওয়াত: রমজান হলো কোরআনের মাস। এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়। অতএব বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি জোর দেওয়া উচিত।  

এ মাসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সাথে কোরআনের দাওর করতেন। সালাফে সালেহীনের মধ্য হতে কেউ কেউ তিন দিনে একবার, কেউ কেউ সাত দিনে একবার, কেউ ১০ দিনে একবার কোরআন খতম করতেন। কেউ কেউ প্রতিদিন দুবার খতম করতেন।  

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ী (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা রমজান মাসে প্রতিদিন দুবার কোরআন খতম করতেন।

অনেক  সালাফে সালেহীনের ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তাঁরা মাহে রমজানে নফল ইবাদত ছেড়ে শুধু তেলাওয়াতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন ইমাম মালেক (রহ.)-এর সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মাহে রমজানে হাদীসের দরস বন্ধ করে দিতেন এবং পুরো সময় কোরআন তেলাওয়াতে ব্যয় করতেন।  

ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহ.)-এর সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি যাবতীয় নফল বাদ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াতে লেগে যেতেন।  

হযরত কাতাদা (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি সব সময় সাত দিনে কোরআন খতম করতেন। রমজানে করতেন তিন দিনে।  

আর রমাজানের শেষ ১০ দিনে প্রতিদিন একবার করে কোরআন খতম করতেন। হযরত আসওয়াদ (রহ.)-এর সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি রমজান মাসে প্রতিদিন একবার কোরআন খতম করতেন।  

ইবাদতে শাফি’আহ:  মাহে রমজানে দুটি ইবাদতের ইজতেমা হয়। এক. ইবাদতে সাওম। দুই. ইবাদতে তেলাওয়াতে কোরআন।  

এই দুটি ইবাদতই তাদের সম্পাদনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে এবং তাদের সুপারিশ কবুল হবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।  

রাসূল (সা.) বলেন, রোযা এবং কোরআন উভয়েই যার যার ভাষায় কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে এবং উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম ২০৩৬, মুসনাদে আহমদ ৬৬২৬, শু’আবুল ঈমান [বায়হাকী] ১৮৩৯) 

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,  'তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো। কারণ এই কোরআন কিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীদের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে। ' (মুসলিম শরীফ [৮০৪] ২৫২) 

অতএব কোরআনের মাসে কোরআন অধিক তেলাওয়াতই হতে পারে মাহে রমজান ও কোরআনের হক আদায়ের সর্বোত্তম পন্থা।  

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি তেলাওয়াতে কোরআনের তাওফীক দান করুন। আমীন।

বিন্যাস ও গ্রন্থনা : মুফতী নূর মুহাম্মদ

হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিভিন্ন সময় ছাত্র-শিক্ষক ও সালেকীনদের উদ্দেশে দেওয়া তাকরীর থেকে সংগৃহীত।

সম্পর্কিত খবর