পড়ার ঘাটতি কী সত্যিই কটিয়ে ওঠা যায়?

পড়ার ঘাটতি কী সত্যিই কটিয়ে ওঠা যায়?

Other

কোনো এক বৃষ্টিমুখর দিনে রুকন ক্লাসমেট থেকে বড় ভাই হয়ে গিয়েছিলো। অটো প্রমোশন নিয়ে সে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়ে যায়। আমরা একই ক্লাসের অন্যরা ফাইভ থেকে সিক্সে ভর্তি হই। জীবনের নিয়মে জীবিকার দরকার ও হিসাব-নিকাশ হয়তো সে আমাদের আগে বুঝে যায়, তাই অতো বছরের পর বছর না পড়ে, সে আয় করতে শেখে কোনো এক কোম্পানিতে, আমরা থেকে যাই পড়ার জগতে।

পড়ার জগতের একটা ধারাবহিকতা আছে। প্রথম শ্রেণির পড়ার ওপর ভর করে আমরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে যাই। ফলে, প্রথম শ্রেণির সব পড়া আয়ত্বে না এলে দাঁড়ানো হয় টলমল পায়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান যাকে সারা জীবনের ক্ষতি মনে করেন।

তিনি মনে করেন, একটা ক্লাস না পড়লে, মানে সে ক্লাসের পড়া ঠিক মতো আয়ত্বে না এলে পরের ক্লাসের পড়ারও ভিত্তি থাকে না। রোকনের সে সমস্যা হয়েছিলো কী না, আমি জানি না। এতো বছর পর এখন আর তা জানার কোনো সুযোগ নাই। তবে করোনায় দীর্ঘ ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরের বড় বড় স্কুলগুলোতে অবশ্য সিলেবাস এগিয়েছে ঠিকঠাক মতো। তবে, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই গতিতে পড়া এগিয়ে নিতে পারেনি বলেই আমরা জানি। ফলে, এখন ক্লাস খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেওয়া যাবে তা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে। আসলেই কী পড়ার ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া যায়?
অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, ক্লাসের সময় বাড়িয়ে দেওয়াকে সাধারণত ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের সিলেবাস এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীকে প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়তে হয়। ভালো ফলাফলের রহস্যও লুকিয়ে আছে প্রতিদিন পড়ার ভেতরেই।

আচ্ছা, আপনাদের ক্লাসে রুল এক হতো কার? সাধারণত কোন শিক্ষকের ছেলে বা মেয়ে ক্লাসে প্রথম হতো, এটা আমাদের সময়ের হিসাব। আমরা অনেক চেষ্টা করে কোনো কোনো ক্লাসে শিক্ষকদের ছেলে মেয়েদেরকে পড়ায় হারিয়ে প্রথম হয়ে যেতাম। তখন আমাদের মনে হতো, স্যারের ছেলে-মেয়েকে ইচ্ছে করে প্রথম বানানো হয়। অনেক অভিমান হতো আমাদের। পরে জেনেছি, বিষয়টা আসলে এরকম কিছু না। স্যারদের বাসায় ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তে বসে। স্যারের কাছে পড়তে আসা ব্যাচের সঙ্গেও তাদের ছেলে মেয়েরা বসে যায়। ফলে, পড়ার জগতে তাদের একটা ভালো অবস্থান থাকে। মফস্বল থেকে আসা শিক্ষকদের ছেলে-মেয়েদের ক্যারিয়ার গ্রাফ বিবেচনা করলে এই তথ্যের সত্যতা মিলবে।

এখন পড়ার ধারাবাহিকতা যদি না থাকে তাহলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়, কঠিন। এখন এর দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের। তাদেরকে প্রতিদিন অন্তত সন্তানের সঙ্গে বই নিয়ে বসতে হবে। ব্যস্ততার এই যুগে এটি অনেকের জন্যই কঠিন। আমরা অভিভাবকরা সন্তানদের সব পড়ার দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দিয়ে আরামে নিজের জীবন গড়তে থাকি। এটা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: 


রাসেলের বাসায় র‌্যাবের অভিযান চলছে

স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, স্বামী-শ্বশুর পলাতক

চীনে ১০ কি.মি. গভীরতার শক্তিশালী ভূমিকম্পের হানা

দুবলার চর থেকে খুলনা কাঁকড়া পরিবহনে বাধা নেই: হাইকোর্ট


নটরডেম কলেজের ছাত্ররা পড়াটা বোঝে বেশি। এমন একটা কথা আমদের সময়ে চালু ছিলো। বলা হতো, তারা ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি টিকে যায়। এর কারণ হিসেবে বন্ধুরা বলতো, সেখানে পুরো বই পড়ানো হয়, পৃষ্ঠা বাই পৃষ্ঠা। আমিও একই কথা বলতে চাই, সাজেশন করে না পড়িয়ে, পুরো বই পড়ানো জীবনের জন্য কাজের হবে।

আপনার নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, যারা টিউশনি করে, তারা পড়ায় ভালো হয়। ঘুরিয়ে বললে, অনেক কীর্তিমানই -- ছাত্র জীবনে টিউশনি করতেন বলে দাবি করেন। এটা কীভাবে মেধা বিকাশে সহযোগিতা করে তা ভাবা দরকার। পড়াতে গিয়ে নিচের ক্লাসের পড়া রিভাইজ হয়ে যায় টিউটরের। ফলে, তার নিজের ভিত্তি শক্ত হয়।

যাহোক, মহামারী কোনো স্বাভাবিক সময় নয়। এই সময়ে বেঁচে ও সুস্থ্য থাকাকেই সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। পুরো জীবনের তুলনায় ১৮ মাস খুব একটা বড় সময় নয়। তবে এই সময়ে কারো পড়ার ঘাটতি হয়ে থাকলেও তা দূর করার জন্য সচেতন হওয়ার দরকার আছে। এই কথাটি অভিভাবকদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই আর্টিকেল লিখলাম। সবাই ভালো থাকবেন।

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর