সূরা বাকারা: আয়াত ৭৫-৭৯, আল্লাহর বাণী শোনা ও ইহুদীদের বিরুদ্ধাচারণ

সূরা বাকারা: আয়াত ৭৫-৭৯, আল্লাহর বাণী শোনা ও ইহুদীদের বিরুদ্ধাচারণ

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা আল-বাকারা আলোচনার আজকের পর্বে সূরাটির ৭৫ থেকে ৭৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। বনী ইসরাইলীদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহপাক সূরা বাকারাহ'র ৭৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন -

أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (75

‘‘(হে মুসলমানগণ!) তোমরা কি আশা কর যে, তারা (ইহুদীরা) তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; এরপর বুঝে-শুনে তা বিকৃত করত এবং তারা তা অবগত ছিল। ’’(২:৭৫)

ইসলাম আবির্ভাবের পর আশা করা হয়েছিল যে, ইহুদীরা অন্যদের আগে ইসলাম গ্রহণ করবে। কারণ তারা মুশরিকদের মত ছিল না বরং তাদের কাছে ছিল আসমানী কিতাব।

তারা তাদের ওই গ্রন্থ থেকে ইসলামের নবীর বৈশিষ্ট্য জেনে গিয়েছিল। কিন্তু এরপরও তারা কার্যত মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাথে জোটবদ্ধ হয়। তাই এ আয়াতে আল্লাহ পাক মহানবী (সা.) ও মুসলমানদেরকে সহানুভূতি জানিয়ে বলেছেন যে, ইহুদীরা যদি ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এতে নিজেদের ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া ঠিক নয়।
ইহুদী সম্প্রদায় সহজেই ঐশি ধর্ম গ্রহণ করবে এমন আশা করা অনুচিত। কারণ এরা হলো তাদেরই বংশধর যারা হযরত মূসার সাথে তুর পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহর বাণী শুনেছে এবং তার বিধান উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু তারপরও তারা তা অবলীলায় বিকৃত করেছে এবং ঐশি ধর্মের বিরুদ্ধাচারণে লিপ্ত হয়েছে।

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়-প্রত্যেক সম্প্রদায়ের পণ্ডিত ব্যক্তিরা সত্যকে বিকৃত করে গোটা জাতিকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ ধরনের পণ্ডিত ব্যক্তিরা সত্যকে জেনেও এমনভাবে তা তুলে ধরে যাতে জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়ে।

এরপর ৭৬ ও ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন -

وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آَمَنُوا قَالُوا آَمَنَّا وَإِذَا خَلَا بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالُوا أَتُحَدِّثُونَهُمْ بِمَا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَاجُّوكُمْ بِهِ عِنْدَ رَبِّكُمْ أَفَلَا تَعْقِلُونَ (76) أَوَلَا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ (77

‘‘যখন তারা মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা মুসলমান হয়েছি। আর যখন পরস্পরের সাথে নিভৃতে অবস্থান করে, তখন বলে, আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের নবীর বৈশিষ্ট সম্পর্কে) যে ধারণা দিয়েছেন তা কি তাদেরকে (মুসলমানদেরকে) বলে দিয়েছ? তাহলে যে তারা এ নিয়ে আল্লাহর সামনে (কেয়ামতের দিন) তোমাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। তোমরা কি তা উপলব্ধি কর না?’’ (২:৭৬)

‘‘তারা কি জানে না যে, যা তারা গোপন রাখে কিংবা প্রকাশ করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তা জানেন?’’ (২:৭৭)

ইসলামের প্রাথমিক যুগে অনেক ইহুদী মুসলমানদেরকে দেখলে বলতো, তোমাদের পয়গম্বরের নিদর্শনগুলো আমাদের তাওরাত গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বানীর সাথে মিলে যাওয়ায় আমরাও তোমাদের ধর্মের ওপর ঈমান আনব। কিন্তু যখন তারা অন্যান্য ইহুদীদের সাথে মিলিত হত, তখন তারা শেষ নবীর নিদর্শনগুলো মুসলমানদেরকে বলে দেয়ার জন্যে পরস্পরকে তিরস্কার করতো এবং তারা বলতো মুসলমানরা এ বিষয়কে কেয়ামতের সময় তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। ইহুদী পণ্ডিতরা সত্যকে বিকৃত করায় বর্তমানেও অনেক লোক ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসরণ করছে।

এরপর ৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে -

وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ (78

"ইহুদীদের মধ্যে এমন অনেক অশিক্ষিত লোক আছে যারা আল্লাহর গ্রন্থকে কল্পনা বা মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া অন্য কিছু মনে করে না এবং শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং তারা অনুমান বা কল্পনা ছাড়া অন্য কিছু জানে না। " (২:৭৮)

এই আয়াতে বনী ইসরাইলের অন্য একটি দলের কথা বলা হয়েছে, যারা ছিল তাওরাত গ্রন্থ বিকৃতকারী পণ্ডিতদের বিপরীতে সাধারণ অশিক্ষিত ইহুদী। এরা তাওরাত গ্রন্থ সম্পর্কে কোন খবর রাখতো না এবং নিজেদের খেয়াল-খুশী মত জীবন যাপন করত। তারা মনে করতো, তাওরাত গ্রন্থে ইহুদী জাতিকে উন্নত জাতি বলে ধারণা দেয়া হয়েছে এবং তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আর পরকালে শুধু মাত্র ইহুদীরাই মুক্তি বা পরিত্রাণ পাবে এবং তারা নরক বা জাহান্নামে যাবে না, যদি তাদেরকে শাস্তি দেয়াও হয় তবে তা কয়েক দিনের বেশী স্থায়ী হবে না। এ ধরনের ভুল ধারণা অন্যান্য ঐশী ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই জানতে হবে এইসব শুধুমাত্র অশিক্ষা ও ঐশী গ্রন্থ সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। কারণ কোন ঐশী ধর্মেই এ ধরনের অবাস্তব কথা বলা হয়নি।

আরও পড়ুন


মাহফুজ আনাম ও শাহীন আনামের কুশপুত্তলিকা দাহ হিন্দু মহাজোটের

দুই হাসপাতাল ঘুরে গুলশান থানায় রাসেল

প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া : উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি ‘দুই দিন’


এ সূরার ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে -

فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ (79

"সুতরাং তাদের জন্য আফসোস, যারা স্বহস্তে গ্রন্থ রচনা করে ও সামান্য মূল্য পাবার আশায় বলে যে, তা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। আক্ষেপ, তাদের হাত যা রচনা করেছে এবং আক্ষেপ যা তারা উপার্জন করেছে। " (২:৭৯)

ইতিহাসে সব সময়ই অনেক পণ্ডিত ধর্মকে নিজেদের পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করেছে, এখনো অনেকে তা করছে। দোকানদার বা ব্যবসায়ীরা যেমন পণ্য বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করে, তেমনি অনেক অর্থলোভী ধর্মের মুখোশ পরে ধর্মকে বিক্রি করে সম্পদশালী হচ্ছে। মানুষকে খুশী করার জন্য অথবা শাসকদের কাছ থেকে উঁচু মর্যাদা বা পদ পাবার জন্য কিংবা ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য আল্লাহর বিধানের নামে অনেকে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। পবিত্র কোরআন কঠোর ভাষায়-আক্ষেপ শব্দের পুনরাবৃত্তি করে এর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

এই পর্বের আলোচিত আয়াতগুলোর শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে -

১. সব মানুষ বিশ্বাসী হবে বা ঈমান আনবে এমনটি আশা করা ভাল, কিন্তু এটাও সত্য যে,বহু মানুষ সত্যকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই তাদের অবিশ্বাস যেন আমাদের বিশ্বাসের মধ্যে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না করে সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে।

২. মন গড়া ধর্ম তৈরি ও ধর্ম বিক্রি করা হলো দুর্নীতি পরায়ণ পণ্ডিতদের কাজ। তাই কোন ব্ক্তব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সাবধান হতে হবে। এ ধরনের পণ্ডিতরা ধর্মের মুখোশ পরে থাকলেও জনগণকে সাবধান হতে হবে।

news24bd.tv এসএম