অনেকেই সমস্যার সমাধান চেয়ে ইনবক্সে চিঠি লিখেন

অনেকেই সমস্যার সমাধান চেয়ে ইনবক্সে চিঠি লিখেন

Other

অনেকেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার সমাধান চেয়ে ইনবক্সে চিঠি লিখেন, যেগুলোর অধিকাংশেরই উত্তর দিতে পারি না। কিছুদিন ধরে মৌলিক লেখা ফেসবুকে প্রকাশ করছি না, আগেরগুলোও সরিয়ে নিয়েছি।  

শুধু মাঝে মধ্যে মেসেঞ্জারে ঢুকে চিঠিগুলো পড়ি। উত্তর দিতেই হবে, এরকম কোনো চাপ অনুভব করি না।

আর ব্যক্তিগত সমস্যা বিষয়ক কোনো প্রশ্নের উত্তর এমনিতেও দিই না, কারণ এটি আমার আগ্রহ ও এক্সপার্টাইজের বাইরে। কেবল কারও ব্যক্তিগত সমস্যায়, সামাজিক ও দার্শনিক উপাদান খুঁজে পেলে উত্তর লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।  

প্রশ্নকর্তার পরিচয় গোপন রেখে সে-উত্তর মাঝেমধ্যে ফেসবুকে প্রকাশও করি। কারণ একই প্রশ্ন, সমাজের আরও অনেক মানুষের মনে থাকতে পারে।

কিন্তু কেউ যখন লিখেন, "প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন না হলে আমার মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই", তখন খুব বিপদে পড়ি। একটি অপরাধবোধ মনের ভেতর উশখুশ করতে থাকে।
 
এ চিঠিটির উত্তরে স্পেসিফিক পরামর্শ দেয়া খুব কঠিন। কিন্তু এর জবাবে কিছু কথা বলতে চাই। অন্যথায় ছেলেটি সত্যি সত্যি মৃত্যুর পথ বেছে নিলে আমি খুব অপরাধবোধে ভুগবো।

আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে শিশুদের যে-প্রক্রিয়ায় লালন-পালন করা হয়, তা বেশ ট্রমাটাইজিং। দশম শ্রেণীর একটি শিশুর কাঁধেও আমরা বিশ্বজয়ের প্রত্যাশা চাপিয়ে দিই, যা আহাম্মকি ছাড়া কিছু নয়। ছেলেটি মাধ্যমিকে রেজাল্ট খারাপ করেছে, অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পায় নি। এ জন্য তার জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।  

এ যন্ত্রণার উৎস সমাজ ও পরিবার। সমাজ এখন মানুষের সফলতা মাপছে জিপিএ ও চাকুরি-বাকুরি দ্বারা। সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গী, সংক্রমিত হয়েছে পরিবারে, অথবা পরিবারের এ দৃষ্টিভঙ্গী, সংক্রমিত হয়েছে সমাজে।  

পরিবারগুলো এতো বেশি বৈষয়িক হয়ে উঠেছে যে, শিশুরা অবৈষয়িক কোনো শখই পূরণ করতে পারছে না। যে-মানুষ সারাজীবন লাড্ডু ফলিয়েছে, সে-ও তার সন্তানের কাছে লাখ টাকার চাকুরি আশা করছে। যে নিজে নানা পরীক্ষায় ফেল করেছে, সে আশা করছে তার সন্তান সব পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাবে। আমার ‘জিপিএ ফাইভ ও জুতোর ফ্যাক্টোরি’ প্রবন্ধে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম।  

ছেলেটি ইন্টার পাশ করার পর তার বাবা-মা আর তার খরচ বহন করতে চাচ্ছে না। আমি জানি না ছেলেটির বাবা-মা কেন এ কথা বলছে। তবে এর দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করি। এক—  তাদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। দুই— তারা চাচ্ছে, ছেলেটি যেন নিজে আয় করে স্বাবলম্বী হয়।  

আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এরকম— কিছু পড়ালেখা করে ফেললে আর সাধারণ কোনো কাজ করা যাবে না। করতে হবে বড় বড় কাজ। কাকে বলে বড় কাজ? কৃষিকাজ কি বড় কাজ নয়? দোকান খুলে পণ্য ও সেবা বিক্রি করা, এটা কি বড় কাজ নয়? ঘুড়ি উড়ানো কি ছোট কাজ? গান গাওয়া কি ছোট কাজ? বড় কাজ কি শুধু লাখ টাকা বেতনের চাকুরি করা? ছেলেটিও সম্ভবত, সমাজের ফাঁদে পা দিয়ে এসব কাজকে ছোট কাজ জ্ঞান করছে। ছেলেটির উচিত, আর্থিক সংকট কাটাতে কোনো ‘ছোট’ কাজে লেগে পড়া। ছোট কাজ করে যখন আর্থিক সচ্ছলতা আসবে, তখন বড় কাজ শুরু করা।  

রও পড়ুন:


জন্মদিনে সৃজিতের কাছে কী চাইলেন মিথিলা?

বায়ু দূষণের তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম, ঢাকা তৃতীয়

৪৫ মিনিট পর হাসপাতালে অলৌকিকভাবে বেঁচে উঠলেন নারী!

গাড়ি সাইড দেয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর করলেন এমপি রিমন!


আর মানসিক যন্ত্রণা একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। অধিকাংশ যন্ত্রণাই মানুষের নিজের উদ্ভাবন। নানা বিষয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে মানুষ যন্ত্রণায় পতিত হয়। স্টয়োক ও বুদ্দিস্ট ফিলোসোফিতে এর কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। পরিবার আমাকে ত্যাগ করেছে, সমাজ আমাকে ভালো চোখে দেখছে না, এ তুচ্ছ কল্পনাগুলো বাদ দিলে যন্ত্রণা কমে যাবে। বাবা-মার আচরণের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়েই ছেলেটি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে বলে মনে করি।

‘মৃত্য ছাড়া উপায় নেই’ এটি একটি নিহিলিস্ট চিন্তা। যারা নিহিলিজম চর্চা করেন, তাদের কাছে এগুলো ডালভাত, কিন্তু নিহিলিস্ট মানুষদের অধিকাংশই ভণ্ড। এরা নিজেরা মরতে চায় না, শুধু অন্যদের মরে যাওয়ায় নির্বিকার থাকতে চায়। কেউ মারা গিয়েছে, এ সংবাদে নিহিলিস্টরা বলবে— তো কী হয়েছে? মরুক! আবার নিজের মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিলে, চিকিৎসাবিদ্যার সকল সুযোগই এরা গ্রহণ করবে।  

জীবন জিনিসটাই একটা অসুখের মতো। পৃথিবীতে কোনো সুখি মানুষ নেই। কখনো ছিল, এমনটিও মনে হয় না। সুতরাং, ছেলেটি নিজেকে অসুখী ভাববে, সেটাই স্বভাবিক। যারা বলে— আমরা সুখি মানুষ, তারা মূলত নিজেদের অসুখগুলো লুকিয়ে রাখার কৌশল আয়ত্ত করেছে।  

এ জন্য মৃত্যুকে, তার আপন গতিতে আসতে দেয়াই ভালো। তাড়াহুড়ো করে মৃত্যুর কাছে পৌঁছানোর কোনো দরকার নেই। একবার মৃত্যু হয়ে গেলে, কোনোভাবেই আর পৃথিবীতে ফেরা যাবে না। আর মৃত্যুচিন্তা বেকার ও অকর্মণ্য মানুষদেরই বেশি গ্রাস করে। কারণ এরাই সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়। কোনো কাজ না পেলে, ছেলেটির উচিত অন্তত বই পড়ার কাজ বেছে নেয়া। সবাইকে ধন্যবাদ।  

(এই লেখাটি ফেইসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের। স্যোশাল মিডিয়া পাতায় প্রকাশিত লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

NEWS24.TV / কামরুল