কোম্পানীগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন নদীভাঙ্গণ কবলিত চরএলাহী ইউনিয়ন

কোম্পানীগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন নদীভাঙ্গণ কবলিত চরএলাহী ইউনিয়ন

Other

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উপকূলীয় ৮নং চরএলাহী ইউনিয়নের বিস্তির্ণ এলাকা দীর্ঘদিন থেকে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

এতে করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে নদী ভাঙ্গণের কারণে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ওই ইউনিয়নটি। ছোট ফেনী নদীর ভাঙ্গণের কারণে জনসাধারণ অন্যত্র চলে যাওয়ায়, ওয়ার্ড বিভক্তি না করার কারণে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।  

জানা যায়, ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায় দেখা যায়, দীর্ঘদিন থেকে ছোট ফেনী নদী গিলে খেয়েছে কোম্পানীগঞ্জ চরএলাহী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বৃহদাংশসহ ১, ৩ ও ৪ ওয়ার্ডের অংশ বিশেষ।

ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব চরলেংটা, চরলেংটা, চরএলাহী এবং দক্ষিণ চরএলাহী এ ৪টি গ্রামের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, মৎস্য-গবাদী পশু খামার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিলিন হয়ে গেছে নদী গর্ভে।  

ইতিমধ্যে দুইবার ভাঙ্গণের কবলে পড়ে চরলেংটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কোনরকম কাঠটিনের ভবন করে পাঠদান করছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চরলেংটা আশ্রয়ন কেল্লা, হাতিয়া কলোনী, এরশাদ কলোনী এবং হাসনা মওদুদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মসজিদ।

news24bd.tv

নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়ে নিঃস্ব মানুষেরা ঠাই নিয়েছে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ড কিংবা উপজেলার অন্য কোন ইউনিয়নে।

এতে ইউনিয়নের কোন কোন ওয়ার্ডে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারেও ব্যাপক তারতম্য দেখা দিয়েছে।

৫নং ওয়ার্ডে ৪টি গ্রামে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৭শ জন। ভাঙ্গণের কবলে পড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায়, এখন এখানে মাত্র ২শ জন ভোটার এই ওয়ার্ডে বসবাস করছে। ইউনিয়নটির ৬নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩৬১জন অপরদিকে ৯নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩শ ৪৪জন।  

চরএলাহী ইউনিয়নে জনসংখ্যা অনুপাতে ওয়ার্ড বিভক্তি করণ না করায় উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে।  

সরকারি ভাবে প্রাপ্ত দান-অনুদান বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। এসব অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় জনপ্রতিনিধিরাও সমস্যায় পড়ছেন, প্রশ্নের সম্মূখীন হচ্ছেন সরকারি দান-অনুদান বিতরণে।

news24bd.tv

চরএলাহী ইউনিয়নের জনসাধারণ এতই দুর্ভাগা যে, চরএলাহী “স্টিল ব্রিজ” ভেঙ্গে যাওয়ায় কার্যত উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে তারা।  

ইউনিয়নের বিস্তির্ণ চরাঞ্চলে উৎপাদিত সকল কৃষিপণ্য সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রি, পরিবহণ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীকে।  

নতুন ভাবে নির্মিয়মান ব্রীজের কাজ করতে গিয়ে আবারও নদীর জোয়ারের পানিতে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে নতুন ব্রীজ নির্মাণ কাজ বর্তমানে বন্ধ হয়ে আছে।  

চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, আশঙ্কাজনক হারে নদী ভাঙ্গণ কবলীত ৮নং চরএলাহী ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিভক্তি করণের জন্য ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রেজুলেশন সহকারে আবেদন করা হয়েছিল নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে।  

এরপর ২০১৬ সালে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ যাবত কয়েক বার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে লিখিত ভাবে আবেদন-নিবেদন করার পরও ওয়ার্ড বিভক্তি করণ করা হয়নি। ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ কাজ সম্পন্ন না করায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ছাড়াও আরও অনেকে মতামত প্রকাশ করেছেন।  

আরও পড়ুন


জেলেদের জালে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা

প্রচণ্ড গরমে দেড় লিটার ঠাণ্ডা পানীয় পান করে যুবকের মুত্যু

ডিসেম্বরে পাকিস্তান সফরে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ


তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙ্গণ রোধকল্পে ক্রস ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং সাময়িক ভাবে দ্রুত ব্লক ফেলে নদী ভাঙ্গণ প্রতিরোধের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।  

বারবার ভাঙ্গনের কবলে পড়া স্থানীয় অধিবাসী ও এনজিওকর্মী আবদুল করিম ও আবদুর রহিম জানান, ইউনিয়নের এই অংশটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে নদী ভাঙ্গন কবলিত তিন কিলোমিটার এলাকায় ব্লাক ফেলে কিংবা জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কোন বিকল্প নাই। তারা এই এলাকাটিকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় স্থানীয় সাংসদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  

স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে কোম্পানীগঞ্জ সূবর্ণ চরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকাকে রক্ষা করতে চর ক্লার্ক- চর বালুয়া ক্রস ডেম নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারনে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় চর এলাহীর বিস্তৃর্ণ এলাকা এবং ২৩ ভেন্ট স্লুইসগেট সহ মুছাপুর ক্লোজার ও ভাঙ্গনের করাল গ্রাসে তলিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব ক্রসডেম নির্মান অত্যাবশ্যক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জিয়াউল হক মীর জানান, নদী ভাঙ্গণ রোধ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।

NEWS24.TV / কামরুল