যাই-ই অর্জন করবেন তাই-ই হারাতে হবে, প্রস্তুতি আছে তো?

ইয়াসিন রেজা

যাই-ই অর্জন করবেন তাই-ই হারাতে হবে, প্রস্তুতি আছে তো?

Other

শোভার সাথে আমার কালেভদ্রে কথা হয়। কিন্তু যখন হয় তখন লম্বা সময় আমরা হাহাহিহি করি। আমাদের পরিচয় হয়েছিল ফোনে ফোনেই। আমার নম্বর যোগাড় করে কিছু তথ্য নেওয়ার জন্য ও ফোন করেছিল।

আমি শোভাকে কোন সাহায্য করতে পারি নি। কিন্তু আমাদের মধ্যে দারুন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দেখাও হয়েছে অনেকবার। ওর জীবনের আদ্যেপান্ত ও আমাকে বলেছে।
যুদ্ধবাজ মেয়ে। কিন্তু আজকের কথায় শোভাকে কিছুটা ক্লান্ত, শ্রান্ত, একলা মনে হল।

ঢাকা শহরে একটা সুন্দরী মেয়ের একলা যুদ্ধ করে টিকে থাকাটা আমার মত পুরুষেরা কোনদিনই বুঝবে না। সেই চেষ্টাও করি না। ধর্মে প্রবল বিশ্বাস একটা অন্যরকম শক্তি যোগায়। সেটাকে আঁকড়ে ধরে আছে। আত্মরক্ষার জন্য পুরুষবিদ্বেষের মুখোশটুকু এখন আগের চেয়ে কোমল। অনেক গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে এখন। খুব সীমিত সাধ্যের মধ্যেও ও অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করে। আমি কোনরকম কাজে না আসলেও মাঝে মাঝেই কুন্ঠাহীন গলায় আমার সাথে অন্যের সমস্যা নিয়ে গল্প করে। আমার বুদ্ধি ভাল না। তাই কোন বুদ্ধিই তার কাজে আসে না। তবে চরম বৈপরীত্যের মধ্যে বেড়ে ওঠায়

দারুন আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে। কিছু কুসংস্কার আছে, তবে সেগুলো টনিকের মতই। সংস্কারহীন হওয়ার অনেক বিপদ আছে এ সমাজে। আমি বোঝাতে চেষ্টা করি, ব্যকরণ বইয়ে তিনটি কালের কথা বলা হলেও কাল বা টেন্স আসলে একটাই। বর্তমান। বাকী দুটো কাল্পনিক। নদীর এক পানিতে যেমন দুইবার মুখ ধোয়া যায় না। তেমনি ইউ অনলি লিভ অন প্রেজেন্ট টেন্স। প্রতিদিন দেড় লাখ লোক মারা যায়। প্রতি সেকেন্ডে দু'জন।

এই লেখা পড়তে পড়তেই গোটা ত্রিশেক মানুষ ফুরুৎ হয়ে গেছে। কেউ অসুখে, কেউ বিসুখে, কেউ অতি সুখে। মৃত্যু ক্ষমাহীন। তার কাছে সবাই সমান। আমরা সবাই এটা জানি কিন্তু উপলদ্ধি কেউ করি না। মৃত্যু না থাকলে জীবন অসম্ভব বোরিং হয়ে যেত। না মরার যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রনার চেয়েও ভয়াবহ। গভীর চিন্তা করলে এটা অনুভব করবেন। তার জন্য হেরা পর্বতে যাওয়া লাগবে না। একলা ঘরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবলেই জীবনের অতলস্পর্শী দর্শনের নাগাল পেয়ে যাবেন।

আপনার জানাজায় কে আসবে, কে আসবে না ভাবুন। দেখবেন সংখ্যাটা যেমনটি হওয়া উচিৎ তার চেয়ে বেশ কমই মনে হবে। আপনার হাতের প্লাস্টিকের বলপেনটির আয়ূও আপনার চেয়ে বেশী। আপনি চলে যাবেন, সে থেকে যাবে। এই যে আশে পাশে যাদের দেখছেন একশ বছরের মধ্যেই এরা সবাই মরে যাবে। কেউ থাকবে না। নতুন একটি সেট এসে রাজত্ব করবে। তারাও মিলিয়ে যাবে একশ বছর পরে। আপনি গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মিশে যাবেন মাটির সাথে ততদিনে। চোখ বন্ধ করে ভাবুন আর কয়েকটি বছর মাত্র  আপনার অস্তিত্ব। তার মধ্যে অন্যদের সাথে আমাদের আচরণ কেমন ? আমরা অন্যকে ঠকাই, গালাগাল করি, চ্যাঁচাই। রাস্তায় শত শত মানুষ আপনি দেখেন। একজনকেও দেখে মনে হয় সুখী ? জীবনকে পান করতে শিখেছে ? না চাইতেই আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসছে ? আনন্দ বিকিরণ করছে ? দেখবেন না। কারণ জীবনের মাহাত্ম আমরা বুঝি না। কেউ শেখায় নি। আমরা নিজের আত্মার সাথে কথা বলি না। অনিবার্য মৃত্যুকে স্মরণ করি না।  
.
আমাদের মস্তিষ্ককে এমন ভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যেন সে মৃত্যুকে ভুলে থাকে। যেমন আপনি অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার কথা সারাদিনে একবারও ভাবেন না। তেমনি। তৃষ্ণার্ত না হলে পানির কথা মনে পড়ে না। জীবনের অর্থ বুঝতে হলে মৃত্যুকে বিস্মৃত হলে চলবে না।

আরও পড়ুন: 


বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে সময় বাঁচবে ৩ ঘণ্টা

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসময় যাচ্ছে: ফখরুল

প্রকাশ হলো এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার রুটিন

নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিলেন বাইকার


আপনি হয়তো বলবেন এসব অনেক কথাই তো আমাদের ধর্মে আছে। অবশ্যই আছে। সব ধর্মেই কমবেশী আছে। কিন্তু ধর্ম একটি গাইডলাইন মাত্র। পৃথিবীর সকল ধর্মপরায়ন মানুষ মিলেই তো পৃথিবীকে নরক বানিয়ে বসে আছে। পৃথিবীর সকল খুনী, ধর্ষক, অত্যাচারী মানুষই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। লাভ কি হয়েছে ? ধর্মকে পাশে রেখে নিজেই নিজেকে রিপিয়ার করতে চেষ্টা করুন। সবচেয়ে বড় ধর্ম আপনার ভেতরেই আছে। আপনি জানেন কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ। সেটা পুস্তক পড়ে শেখার দরকার নাই। নিজের প্রতি সৎ থাকুন। অধিকাংশ সমস্যাই নিজে নিজে আইডেন্টিফাই করতে পারবেন।

চারটি বিষয় নিয়ে লিখতে পারি। আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে। তবে আমার কাছে এই চারটিই প্রধান মনে হয়। প্রথমটি হল কারণ এবং ফল। কজ এন্ড ইফেক্ট। প্রজাপতি অভিঘাত বা বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামেও পরিচিত। আপনি যাই করেন না কেন মহাবিশ্বে তার প্রতিফল ঘটবেই। সে আপনার যত সূক্ষ্ম আচরণই হোক। হেনরি ওয়ার্ডসওয়ার্থ লংফেলোর একটা কবিতা আমাদের পাঠ্যবইয়ে ছিল। "দা এরো এন্ড দা সং"। যারা পড়েন নি তাদের জন্য বলি।

কবি বলছেন তিনি ছোটবেলায় আকাশের দিকে একটি তীর ছুঁড়েছিলেন। বহু বছর পরে তিনি দেখতে পান একটি ওক গাছে তীরটি বিঁধে রয়েছে। আবার তিনি লোক মুখে একটি গান শুনতে পেলেন। গানটি তার চেনা চেনা মনে হল। পরে মনে পড়ল বহু বহু দিন আগে তিনি এই গানটি গেয়েছিলেন। মেটাফোরটি অসাধারণ। মানে, আপনি যখন কোন খারাপ কাজ করবেন, তার প্রতিফল বহুদিন পরে হলেও আপনাকে ভোগ করতেই হবে। আর যদি কোন ভাল কাজ করে থাকেন, তারও প্রতিদান আপনি পেয়ে যাবেন যে কোন ভাবে। এটাকেই শোভা বলছিল প্রকৃতির প্রতিশোধ। কোন না কোন ভাবে আপনাকে প্রতিফল ভোগ করে যেতেই হবে। তাই ভুল করলে সরি বলে ফেলুন। এখনই।
.
দুই নম্বর উপলদ্ধিটি হল পৃথিবীর সব কিছুই অস্থায়ী। ইউটিউবে বিশ্বব্রহ্মান্ডের পরিণতি নিয়ে একটি ভিডিও আছে। আঁৎকে উঠতে চাইলে এটি অবশ্যই দেখতে হবে। ভেতরে এক ধরনের হাহাকার বোধ করবেন। এক অপার্থিব মহাশূণ্যতা আপনাকে গ্রাস করে ফেলবে। অসৎ হওয়া আপনার জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাবে। ভিডিওটি আমি মাঝে মাঝেই দেখি। ইট চার্জেস মাই সোউল।
.
তৃতীয়ত: যাই আপনি অর্জন করবেন, তাই আপনাকে হারাতে হবে। প্রিয়জন, প্রিয় বস্তু, প্রিয় শরীর। যে আইফোনটি আপনার কলিজার সমান ভালবাসা। সেটাও এক সময় আপনার কাছে থাকবে না। যে প্রাসাদ আপনি বানিয়েছেন, তাও ছেড়ে যেতে হবে। যে সাদা কালো অর্থ জমিয়েছেন তাও থাকবে না। তাই মনে মনে হারানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। কষ্ট লাঘব হবে বৈ কি।
.
শেষটি হল নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি। মেনটাল রেডিনেস। জীবন একটি উপহার। মৃত্যু হবে বলেই আপনি সর্বস্ব দিয়ে জীবনকে ভালবাসেন, আঁকড়ে ধরেন। চলে যাবেন বলেই সব কিছু মোহময়, আকর্ষনীয়। মৃত্যু একটি স্বাভাবিক এবং সুন্দর ব্যাপার। আপনার প্রস্থান অনাগতদের জায়গা করে দেবে। তার আগে চুটিয়ে বাঁচুন, তুমুলভাবে বাঁচুন। একটি মুহূর্তও নিরানন্দে নষ্ট করবেন না। এতে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা আপনারই।  

এই লেখাটি শোভার জন্য। এটি পড়ে শোভা ইন্সপায়ার্ড হবে। নিজের কষ্ট দুঃখ ভুলে আবার পরোপকারে ঝাঁপিয়ে পড়বে। জীবনকে ভোগ, উপভোগ করতে শিখবে। তবেই না জীবন আমাদের সার্থক হবে।

লেখাটি ইয়াসিন রেজা-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া।  

news24bd.tv নাজিম