ঘটা করে কন্যা দিবস পালন নিরর্থক প্রহসন

ঘটা করে কন্যা দিবস পালন নিরর্থক প্রহসন

Other

‘কন্যা দিবস। ’ নামটি আসলে ‘জাতীয় কন্যা দিবস। ’ এ উপলক্ষে ছবি ও আবেগ-সঞ্জাত স্ট্যাটাসে সয়লাব ফেসবুকের নিউজ ফিড। কবে এটা? ২৫ সেপ্টেম্বর।

আবার কেউ সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবারে দিবসটি উদযাপন করে। কিছু দেশে এই কন্যা দিবস পালিত হয় পয়লা অক্টোবর। ২৮ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় ‘বিশ্ব কন্যা দিবস’ হিসেবে। কাজেই ১ অক্টোবর পর্যন্ত এর রেশ ও আমেজ থাকে, উদযাপন করা চলে।

এই দিবস পালন কোত্থেকে এলো? সেটা বলবার আগে বলে রাখি জাতিসংঘ ঘোষিত আলাদা ‘আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস’ আছে। এটা বিশ্বজুড়ে পালিত হয় প্রতিবছর ১১ অক্টোবর।

জাতীয় কন্যা দিবস-এর প্রচলন হয় ইন্ডিয়ায়। অবশ্য সেটা সরকারিভাবে নয়। আর্চিজ লিমিটেড নামে ইন্ডিয়ার একটা নামকরা কোম্পানি আছে। গ্রিটিং কার্ড, স্টিকার ও উপহার সামগ্রী বিক্রি করে তারা। ওরাই প্রথম ইন্ডিয়ায় এই কন্যা দিবস উদযাপনের প্রচলন করে। আরবে প্রাক-ইসলাম যুগে ছিল জাহেলিয়া বা মূর্খতার অন্ধকার যুগ। অনেক পরিবারে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো তখন সেখানে। ইন্ডিয়ায় পরিস্থিতি ততোটা শোচনীয় না হলেও মেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।

বিংশ শতাব্দিতে পর্যন্ত কুখ্যাত ও নিষ্ঠুর সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা চালু ছিল। বিধবা বিয়ে, মেয়েদের লেখাপড়া ও সম্মানজনক পেশা ছিল নিষিদ্ধ। ‘ষাটের দশকেও অনেক অঞ্চলে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মা-কে হেনস্তা ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এসবের বিরুদ্ধে মানুষের চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কোম্পানি এই প্রচারাভিযান শুরু করে। এ আন্দোলন প্রসারের ইতিবাচক সুফল তারা বাণিজ্যিক দিক দিয়েও পায়। কন্যা দিবসে প্রচুর শুভেচ্ছা কার্ড, স্টিকার ও অন্যান্য গিফট বিক্রি বাড়তে থাকে। ভারতে আর্চিজ লিঃ প্রবর্তিত এই কন্যা দিবস ধীরে অন্যান্য দেশেও ছড়ায়।

আরও পড়ুন: 


বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে সময় বাঁচবে ৩ ঘণ্টা

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসময় যাচ্ছে: ফখরুল

প্রকাশ হলো এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার রুটিন

নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিলেন বাইকার


কন্যা দিবস উপলক্ষে আমি আমার ও আমাদের সকলের কন্যাদের প্রতি অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালোবাসা জানাই।

তবে এ আনুষ্ঠানিকতা তখনই অর্থবহ হবে যদি আমরা প্রতিটি পরিবারে কন্যাদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে পারি। কন্যাদের লেখাপড়া করিয়ে যোগ্য ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারি। বাস্তবে ও ভাবনায় পুত্র ও কন্যার মধ্যকার বৈষম্য দূর করতে পারি। আলাদা চোখে দেখা বন্ধ করতে পারি। এখন আমাদের দেশে মেয়েদের কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। রোজ যে-সব মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে, হত্যা, বলাৎকার, অপহরণ, দৈহিক নিগ্রহ, হেনস্তা, অসম্মানের যত খবর পাওয়া যায় এবং বিচারের বাণী যে-ভাবে নীরবে-নিভৃতে কাঁদে, তাতে ঘটা করে কন্যা দিবস পালন এক নিরর্থক প্রহসন। মেয়েদেরকে পিছিয়ে রেখে, তাদের ন্যায্য অধিকার ও উপযুক্ত সম্মান না দিয়ে কোনো দেশ-জাতি কখনো উন্নত ও অগ্রসর হতে পারেনি। কন্যা দিবস উপলক্ষে তাই অঙ্গীকার করুন, আপনার আদরের কন্যা সন্তানটির জন্য যেন একটি নিরাপদ সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ গড়তে পারেন। তবেই আপনি সফল পিতা। তবেই হবে কন্যার প্রতি কর্তব্য পালন।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর