আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি
আইলার ৯ বর্ষপূর্তি

আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

আজ ভয়াল ২৫ মে। ২০০৯  সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দেশের দক্ষিণের জনপদ সুন্দরবন ঘেষা সাতক্ষীরার উপকুলীয় অঞ্চল। ভয়ংকর আইলার জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে নারী-পুরুষ শিশুসহ ৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছিল। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছিল বিস্তীর্ণ জনপদ।

আইলার নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। নদী বেষ্টিত এ জনপদে লোনা পানির কারণে সফল ফলে না। তাই অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন। সুপেও পানির অভাব আজও আছে।

ফসলি জমিতে এখনো ফসল ফলে না। ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ার পর পুনরায় জরাজীর্ণ অবস্থায়। ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে, আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের এক লাখ মানুষের। সুপেয় পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে তারা। চারিদিকে লোনা পানি থাকায় তাদের পুকুরের মিষ্টি পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে রোগ বালাই বেড়ে গেছে। জমিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে ফসল হয় না দীর্ঘদিন। এছাড়া নতুন করে নদ-নদীগুলোর বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন ও ফাটল। তাই এলাকার বসবাসরত মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে।

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলাই সেদিন সবচেয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল সাতক্ষীরার প্রতাপনগর, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে। নারী, পুরুষ-শিশুসহ মোট ৭২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাড়ে ৮শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। সরকারের পক্ষ থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে এসব বাঁধ মেরামত হয়েছে অনেক অগেই। জলবায়ু ট্রাষ্ট্রের টাকায় সরকারের পক্ষ থেকে আইলা দুর্গতদের ঘরবাড়ি নির্মাণও করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইলা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ ৪৮ হাজার পরিবারকে বসত ঘর ও ২০ হাজার টাকা করে দেন। কিন্তু আইলার দীর্ঘ নয় বছরে উপকুলীয় বাঁধগুলোতে ব্যাপক ভাঙ্গন ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা ইউনিয়ন ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপ নগর এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে এ ফাঁটল দেখা যাচ্ছে। এখানকার জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মনিটরিংয়ের অভাবে বাঁধগুলোতে আবারও ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আইলা দুর্গতরা রয়েছে আতঙ্কে।

আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকম জানান, উপকুল জুড়ে বরাবরের মতো রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। চারিদিকে লোনা পানি থাকায় এলাকায় ফসল ফলে না। তাই এখানকার মানুষ অধিকাংশই কর্মহীন।  

শ্যামনগর পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, গত নয় বছরে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য নেই কোনো হসপিটাল। কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও অবস্থা জরাজীর্ণ। এখানে প্রসূতি মায়েরা বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পতিত হলে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় এই মুহূর্তে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারে দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

শ্যামনগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন সরকার জানান, ২০০৯ সালে আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ৪৮ হাজার পরিবারকে ঘর ও ২০ হাজার টাকা করে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের নিরাপত্তা বিধানে সব ধরনের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসনের আছে। এলাকায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ জিও এনজিওদের সমন্বয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাহায্য, ত্রাণসহ সব ধরনের সহযোগীতা আইলা পীড়িতদের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
 

সম্পর্কিত খবর