ধামাকার অ্যাকাউন্টে ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন

ধামাকার অ্যাকাউন্টে ৭৫০ কোটি টাকার লেনদেন

অনলাইন ডেস্ক

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিংয়ের সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার) সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।  

গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানায় গ্রাহকের করা মামলায় বুধবার ভোরের দিকে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুজন হলেন কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হাসান সবুজ ও ইব্রাহিম স্বপন।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য জানান।

কমান্ডার মঈন বলেন, টঙ্গী পশ্চিম থানার উত্তর আউচপাড়া এলাকার বাসিন্দা, পোশাক কারখানায় অ্যাকসেসরিজের ব্যবসায়ী মো. শামীম খান গত ২৩ সেপ্টেম্বর টঙ্গী পশ্চিম থানায় ধামাকার চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিওওসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  

মামলার আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম আলী ওরফে মোজতবা আলী (৬০), সিওও সিরাজুল ইসলাম (রানা), প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা দেবকর দে শুভ (৩২), হেড অব অ্যাকাউন্টস সাফোয়ান আহমেদ (৪১), উপব্যবস্থাপক আমিরুল হোসাইন (৪৬), সিস্টেম ক্যাটাগরি হেড ইমতিয়াজ হাসান (৩৫), ভাইস প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম স্বপন (৩৫), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নীরদ বরণ রায় (৪৫), প্রতিষ্ঠানের কর্মী নাজিম উদ্দিন আসিফ (২৮) ও আসিফ চিশতী (২৬)।

ধামাকা প্রতারণার হোতা এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি জসিম উদ্দিন চিশতি কোথায় জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি পলাতক। আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জেনেছি তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।

তাঁকেসহ অন্য আসামিদের খুঁজছি। ’

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে ধামাকা ডিজিটাল যাত্রা শুরু করে। দুই বছর পর ২০২০ সাল থেকে ধামাকা শপিং ডটকম নামে কার্যক্রম শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃতরা ওই বছর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। গত বছরের অক্টোবর থেকে গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রতারিত হতে শুরু করে।

ধামাকা অ্যাকাউন্টে টাকা নেই : এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকদের ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র লাখখানেক টাকা। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মার্চেন্টদের পাওনা রয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকা। গ্রাহকদের পাওনা ১৫০ কোটি টাকা এবং গ্রাহকদের রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা।

বাকি টাকা কোথায় গেল, জানতে চাইলে গতকাল র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ধামাকার কোনো প্রকার অনুমোদন ও ট্রেড লাইসেন্স নেই। এমনকি ছিল না প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবসায়িক কোনো অ্যাকাউন্ট। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যাবসায়িক লেনদেন করেছে তারা। সাধারণ গ্রাহকরা যে টাকা দিয়েছে তা গেছে ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের অ্যাকাউন্টে।  

এ ছাড়া ধামাকার আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। সেসব ব্যবসায় সেই টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, টাকা আসলে কোথায় গেল, তা মানি লন্ডারিং পর্যায়ে পড়েছে কি না, তা খুব শিগগির বেরিয়ে আসবে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির হোতা জসিম উদ্দিন চিশতির নিজস্ব সম্পদ রয়েছে আড়াই শ কোটি টাকার ওপরে। সেখানেও ধামাকার গ্রাহকদের টাকা যেতে পারে।

এত দিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে ব্যবসা করে আসছে, জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ধামাকা খুব অল্প সময়েই মোটা অঙ্কের অর্থ সরিয়ে ফেলে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ১৪টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। সিআইডির তদন্তে অস্বচ্ছতার বিষয়টি উঠে আসছে।

টাকা আত্মসাৎই ছিল উদ্দেশ্য : সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের দাবি, ধামাকা শপিং ডটকমের মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘হোল্ড মানি প্রসেস প্ল্যান’ অর্থাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকে রেখে তা সরিয়ে ফেলা। এ জন্য তারা বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়িসহ নানাভাবে সাধারণ ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করত। এভাবে দ্রুতই প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতা বাড়তে শুরু করে।

আর্থিক সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের অফিস ও ডিপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে জানিয়ে র‌্যাব বলছে, গত জুন থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধামাকা শপিং ডটকমের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কারণে জুলাই থেকে সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, মহাখালীতে তাদের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬০০টি ব্যাবসায়িক চেইন রয়েছে। এর মধ্যে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড ও বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড নামে তাদের একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধামাকা শপিং ডটকমের গ্রাহক তিন লাখ ছাড়িয়েছিল।

news24bd.tv/ কামরুল