১০ জেলায় 'বন্দুকযুদ্ধে' ১২ 'মাদক ব্যবসায়ী' নিহত

প্রতীকী ছবি

১০ জেলায় 'বন্দুকযুদ্ধে' ১২ 'মাদক ব্যবসায়ী' নিহত

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দেশের ১০ জেলায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লা ও দিনাজপুরে দুইজন এবং চাঁদপুর, ফেনী, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, কুড়িগ্রাম ও বরগুনায় একজন করে নিহত হয়েছেন। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্যও আহত হয়েছেন।

মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৯ মে রাত থেকে এ কয়দিনে অন্তত ৬৫ জনের মৃত্যু হল দেশের বিভিন্ন জেলায়।

শুক্রবার দিবাগত রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

দিনাজপুর
দিনাজপুর সদর ও বীরগঞ্জে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

শনিবার (২৬ মে) দিবাগত রাতে দিনাজপুর সদরের রামসাগরের পশ্চিম পাশে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে আব্দুস সালাম (৩৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অপরদিকে বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের সাবদারুল ইসলাম (৪৭) নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

বন্দুকযুদ্ধ শেষে আব্দুস সালামের কাছে একটি পিস্তল, কিছু গুলি, কয়েকটি ককটেলসহ ২০০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। আব্দুস সালাম দিনাজপুর সদর উপজেলার মহাব্বতপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে।  

এদিকে, সাবদারুলের কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং ৯৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে র‌্যাব। সাবদারুল বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নন্দাইগাও গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা দু’জনই একাধিক মাদক মামলার আসামি ছিল।

কুমিল্লা

কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন - ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে বাবুল (৪০) ও দক্ষিণ তেতাভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে আলমাস (৩৬)।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি  সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির বলেন, “পুলিশ বাগরা এলাকায় মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে গেলে রাত দেড়টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস তাদের সহযোগীদের নিয়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়।

“পুলিশ আত্মরক্ষায় ১৬ রাউন্ড গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে উভয়ের মৃত্যু হয়। ”

বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি  আলমাসের বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

চাঁদপুর 
চাঁদপুর জেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক বিক্রেতা বাবলু (৩৫) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ১০ নম্বর আশরাফপুর ইউনিয়নের বনরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় তার বাড়ি থেকে ১১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। নিহত বাবলুর বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলা ডিবি ও কচুয়া থানা পুলিশ বাবলুর বাড়িতে যৌথ অভিযান চালায়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে বাবলু গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন বাবলু।

ফেনী
ফেনীর রুহতিয়া এলাকা থেকে কবির হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদকসহ ১০টি মামলা রয়েছে। শনিবার ভোর ৪টার দিকে শহরের রুহিতিয়া ইটের ভাটা এলাকায় নিজেদের মধ্যে 'বন্দুকযুদ্ধে' কবির নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। নিহত কবির পরশুরাম উপজেলার ধনিকুন্ডা গ্রমের আবুল খালেক বেতুর ছেলে।

ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খাঁন চৌধুরী বলেন, ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের রুহিতিয়ায় গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, একটি গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক বিক্রেতার শাহজাহান (৩০) নিহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে আটটি মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের তেলওয়ারী গন্ডিমোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গ্রাম হেরোইন, পাঁচটি গুলির খোসা, একটি রামদা ও একটি কিরিচ উদ্ধার করা হয়।

জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, মাদক ভাগাভাগির খবর পেয়ে জেলা ডিবি ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথভাবে সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক বিক্রেতারা ইট, পাটকেল ও গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও শাহজাহান গুলিবিদ্ধ হন।

শুক্রবার রাত ২টার দিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও এক রাউন্ড বুলেটসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কবির জানান, বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি ও আলমাসের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

বরগুনা
বরগুনায় ছগির খান নামে মাদক বিক্রেতার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৪ নম্বর কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ভোর ৫টার দিকে গোলাগুলির শব্দে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এসময় তারা থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে এলাকাবাসীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ব্যাপারে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুজ জামান জানান, মাদক বিক্রেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত ছগির খান বরগুনা সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী এলাকার বাসিন্দা।

ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শনিবার ভোর রাতে সদর উপজেলা ১৯নং বেগুনবাড়ি  ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি গুলি বর্ষনের ফলে মোবারক হোসেন কুট্টি ঘটনাস্থলে নিহত হয়। অভিযানে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল বিস্ফোরিত ৫টি ককটেল, বন্দুকের কার্টিজ ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নিহত মোবারক হোসেন কুট্টির বিরুদ্ধে প্রায় ঠাকুরগাঁও সদর থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে।

জয়পুরহাট
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভিমপুর এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।  ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল, এক নলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে ।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার শামীম হোসেন জানান, মাদকের একটি বড় চালান কেনাবেচা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল রাতে ভিমপুর এলাকায় যায়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হন এবং বাকিরা পালিয়ে যান। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ইব্রাহীম আলী (৩৪) নামে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি  নিহত ইব্রাহীম চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা নামে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। শনিবার ভোরে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এএসআই নাদের ও আইয়ুব নামে দুই পুলিশ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ভোরে ভারতীয় সীমান্তঘেষা দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে মাদকদ্রব্য উদ্ধারে গেলে মাদক চোরাকারবারীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও মাদক পাচার সিন্ডিকেট প্রধান ইব্রাহীমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠায়। সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পাবনা

পাবনায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আব্দুর রহমান (৪২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে রহমান দোগাছী ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের আছের উদ্দিন শেখের ছেলে।

জেলার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে রাত ৩টার দিকে মহেন্দ্রপুর এলাকায় মাদক উদ্ধারে যায় পুলিশ।

“তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল নিক্ষেপ করে ও গুলি ছোঁড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। রহমান পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ”

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি শাটারগান, তিন রাউন্ড গুলি, চারটি গুলির খোসা, ২০০ ইয়াবা ও পাঁচ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে বলে তিনি জানান।

সম্পর্কিত খবর