‘সৌদিতে নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বারাও দেশে ফিরেছেন’

সৌদি থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি নারী শ্রমিক।

‘সৌদিতে নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বারাও দেশে ফিরেছেন’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

সৌদি আরবে যৌনসহ বিভিন্ন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়ে আরও ৪০ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। রোববার রাত আটটায় এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন বলেন, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা ফেরত এসেছেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে প্রবাসী ও বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১২০ জনকে ফিরিয়ে আনার আবেদন করা হয়।

তাদের মধ্যে ৮০ জনকে বিভিন্ন সময় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে যাবতীয় সাহায্য করছি। পরে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করব।

নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফেরা হাজেরা বেগম বলেন, আমরা সৌদি থেকে একসঙ্গে ৪০ জন ফিরেছি।

সেখানকার অবস্থা ভালো না। খুব জঘন্য। আরও লাখ লাখ মেয়ে আটকা আছে। তাদের আপনারা নিয়ে আসেন।

এর আগে গত ১৯ মে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন ৬৬ জন নারী শ্রমিক। ২০ মে ফেরেন আরও ২১ জন। ফিরে আসা নারী কর্মীরা সৌদি আরবে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা করেন। তারা সৌদি আরবে নারী কর্মীদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষেও মতামত দেন।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২০০ নারী কর্মী দেশে ফিরছেন।

তাদের অভিযোগ, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

আবার কোনো কোনো নারীর অভিযোগ, তাদের কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজের পারিশ্রমিক না নিয়েই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত তিন বছরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এই নারীদের একটি বড় অংশ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার।

নির্যাতনের বিষদ জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি যারা ফিরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে যৌন নির্যাতনের কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। এছাড়া শারীরিক নির্যাতরে শিকার হয়েছেন অনেকেই। আরেকজন মেয়েকে আমরা পেয়েছি যে সৌদি আরবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। এখন তার বাবা তাকে আর পরিবারে ফেরত নিতে রাজি নন। আমরা বাধ্য হয়ে তাকে শেল্টার হোমে পাঠিয়েছি।

সৌদি আরব জানে, বাংলাদেশের পক্ষে এর প্রতিকার দাবি করা সম্ভব নয়। ফলে নির্যাতনও বন্ধ হয় না।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৃহ খাতে কর্মী নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। তখন থেকে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায় দুই লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক পাড়ি জমান সৌদি আরবে। তবে সেখানে যাওয়ার পর আসার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পাওয়ার পাশাপাশি গৃহকর্তাদের নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় তাদের। ফলে বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন শত শত প্রবাসী নারী শ্রমিক। যৌন নির্যাতনসহ নানা কারণে ইতোমধ্যে ৪০ হাজারের মতো নারী শ্রমিক সেখান থেকে ফেরত গেছেন বাংলাদেশে।

সম্পর্কিত খবর