সচিবের ভুয়া পরিচয়ে কোটি কোটি টাকার গাড়ি বাড়ি

সচিবের ভুয়া পরিচয়ে কোটি কোটি টাকার গাড়ি বাড়ি

অনলাইন ডেস্ক

আবদুল কাদের মাঝির শিক্ষাগত যোগ্যতা ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইডি কার্ড বানিয়ে, ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে, গাড়িতে স্টিকার ও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগিয়ে নিজেকে জাহির করেন তিনি অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদের চৌধুরী ওরফে চৌধুরী সাহেব। রাজধানীর গুলশানের জব্বার টাওয়ারে ছয় হাজার স্কয়ার ফিটের একটি কার্যালয় রয়েছে তার। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে তার রয়েছে আরেকটি কার্যালয়।

তিনি মিরপুর ৬ নম্বরে থাকেন। গুলশান ও মিরপুরে তার একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে।

গাজীপুরের বোর্ড বাজারে নয়তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি ও পুবাইলে আট বিঘা জমিতে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে তার। ঢাকায় আবদুল কাদের অতিরিক্ত সচিব সেজে কোটি টাকার বেশি মূল্যের গাড়িতে চড়েন।

গাড়ির সামনে-পেছনে কাঁচে লাগানো বাংলাদেশ সচিবালয় স্টিকার এবং ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড। অঢেল সম্পত্তির মালিক ভূঁইফোড় আবদুল কাদেরের বৈধ কোনো আয় নেই। তিনি বিভিন্ন মানুষকে কোটি টাকার ব্যাংক লোন পাইয়ে দেওয়া ও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিলেন।

মূলত দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এসব প্রতারণা, ধাপ্পাবাজি, চাপাবাজি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এ প্রতারক। সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর এবং গুলশান থেকে প্রতারক কাদেরসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন- প্রতারক কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, কাদেরের সততা প্রপার্টিজের ম্যানেজার শহিদুল আলম এবং অফিস সহায়ক আনিসুর রহমান।  

অভিযানে কাদেরের মিরপুরের বাসা থেকে মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত প্রাডো গাড়ি ও অতিরিক্ত সচিবের ভুয়া আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড এবং তার কোমরে থাকা একটি অবৈধ বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও এক রাউন্ড গুলিসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, আবদুল কাদের গুলশান ১ নম্বরের জব্বার টাওয়ারের প্রায় ৬ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের একটি অফিসে বসতেন। স্টিকারযুক্ত গাড়িতে করে তিনি প্রায় সচিবালয়ে ঢুকতেন। অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার। এসব অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকাও রয়েছে।  

ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রতারক আবদুল কাদের গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতেন। এখন গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করা অসুবিধা হওয়ায় তিনি নিজেই অস্ত্র এবং ওয়াকিটকি নিয়ে চলাফেরা করতেন। প্রতারক কাদেরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রোপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস ও ডানা মোটরস ইত্যাদি। প্রতারক কাদের বড় রকমের প্রতারণা করেন হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ মাধ্যমে। ২০০৪-২০০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি এবং খামার তৈরির নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার আরও বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা তদূর্ধ্ব টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করতেন। এক্ষেত্রে তার মার্কেটিংয়ের লোকজন বিভিন্ন ঠিকাদার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করতেন। সম্ভাব্য মক্কেলদের কাছ থেকে প্রথমেই প্রতারক আবদুল কাদের ৫০ হাজার টাকা কনসালটেন্সি ফি নিতেন। প্রোফাইল বানানোর জন্য নিতেন ২ থেকে ১০ লাখ টাকা। ২০ কোটি বা তদূর্ধ্ব অঙ্কের লোন পাইয়ে দিতে ডাউনপেমেন্ট হিসেবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা নিতেন মক্কেলদের কাছ থেকে।

পরবর্তীতে কাউকে লোন করিয়ে দিতে না পারলেও হাতিয়ে নেওয়া লাখ লাখ টাকার অংশবিশেষ ঋণ হিসেবে দিতেন। সরকার পরিচালিত বিভিন্ন প্রজেক্টের শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারি পেয়েছেন বলে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করতেন কাদের এবং সেগুলোর বিপরীতে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার বিক্রি করতেন। তাছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা জামানত রেখে দিতেন যেগুলো দিয়ে আবার তিনি প্রতারণা করতেন। কাদেরের আরও কৌশল হলো- তিনি বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ ছাড়া সততা প্রপার্টিজের নামে তিনি জমি এবং স্থাপনা কেনার জন্য নামমাত্র কিছু টাকা বায়না দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করে যেগুলো দিয়ে পরবর্তীতে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে টাকা আদায় করে থাকেন। এ কাজগুলো করার জন্য কাদের নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি গর্ব করে বলেন, বিভিন্ন বাহিনী এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তার সহকর্মী, বন্ধু এবং অনুজরা কর্মরত থাকায় কেউ তার কিছু করতে পারবে না।  

আরও পড়ুন:


মমতার ভাগ্য নির্ধারণ আজ

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বোমা হামলা মামলার রায় আজ

টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পেতে আদালতে ট্রাম্প

করোনা প্রতিরোধে টিকার বিকল্প কোভিড পিলের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য


 

হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতারক আবদুল কাদের নিজেকে ধনকুবের প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের নিয়োগপ্রাপ্ত লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে দাবি করেন। এ পরিচয় দিয়ে টাকা-পয়সা কোনো ব্যাপার না বলে চাকরিপ্রার্থী ও ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। আবদুল কাদের ও তার স্ত্রী এবং তার সহযোগীদের নামে পল্লবী থানায় অস্ত্র মামলা, তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা হয়েছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতি, বিভিন্ন প্রতারণা, ব্যাংকে নিয়োগ বিষয়ে কমপক্ষে অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে।

news24bd.tv/আলী